আজ - শনিবার, ২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২১শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি, (হেমন্তকাল), সময় - রাত ৯:৫৪

যশোরে বাড়ছে খুন।।তৈরি হচ্ছে কিশোর গ্যাং! আতঙ্ক জনমনে।

আবুল বারাকাত (যশোর থেকে) :: গত এক মাসে যশোরের বিভিন্ন অঞ্চলে নতুন করে খুনের উপদ্রব বেড়েছে। ব্যাবসায়িক কোন্দল, জমিজমার বিরোধ,পূর্ব শত্রুতা অথবা পারিবারিক ঝঁগড়াকে কেন্দ্র করে এসব খুনের ঘটনা ঘটছে। জনমনে তৈরি হচ্ছে আতঙ্ক। গত মাসের শেষ থেকে আজ পর্যন্ত যশোর শহর থেকে ১০/১২ কিলোমিটারের মধ্যেই ঘটেছে প্রায় অর্ধ ডজন খুনের ঘটনা। গতমাসেই যশোরের সদর উপজেলাধীন হাকিমপুর বাজারে এক চায়ের দোকানের সামনে থেকে আনসার ব্যাটালিয়নের বিশেষ সদস্য হোসেন আলী তরফদারকে (৫৫) প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করেছে দুবৃত্তরা। তিনি আনসার ব্যাটালিয়নের বিশেষ সদস্য পদে ঢাকায় কর্মরত ছিলেন। তিন দিনের ছুটিতে তিনি বাড়িতে বেড়াতে আসেন। তাঁর স্ত্রী দুই ছেলেমেয়ে। হত্যার পর থেকে জনসাধারণ সহ হাকিমপুর বাজারে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। খুনের পর ২০ দিন অতিক্রম করলেও বাজার অনেকটা জনশূন্য। এমাসের ০৯ তারিখে নরেন্দ্রপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের দুই নেতার মাটি ব্যবসায় আধিপত্য বিস্তারের জের ধরে খুন হয় জনি (২২) নামের এক যুবক। নিহত জনি মনিরামপুর উপজেলার ঢাকুরিয়া ইউনিয়নের তাড়ুয়া পাড়া গ্রামের সিরাজুল ইসলামের ছেলে। জানা যায়, ছাত্রলীগ নেতা জিএম সবুজ হাসান শাহিন আলম মাটি কেনাবেচার ব্যবসা করতেন। তারা বিভিন্ন গ্রাম থেকে মাটি কিনে ইটভাটাসহ বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করেন।সম্প্রতি নরেন্দ্রপুরের হাসিবের জমির মাটি কিনতে চান দুইজনই। এনিয়ে বিরোধের সৃষ্টি হলে ঐদিন সন্ধ্যার পর নরেন্দ্রপুর মাস্টারপাড়ায় দুই পক্ষ সমঝোতা বৈঠকে বসে।সেখানে শাহিন আলম মোটরসাইকেল, ইজিবাইক ট্রেকারে করে ২০/২৫ জন নিয়ে আসে। বৈঠকে সবুজের পক্ষে ছিল জনি। বৈঠক চলাকালে শাহিনের পক্ষের কয়েকজন জনিকে ডেকে পাশে নিয়ে বুকে ছুরিকাঘাত করে। ঘটনাস্থলে তার মৃত্যু হয়। নরেন্দ্রপুরের জনি হত্যার ১১ দিন পর যশোরে সন্ত্রাসীদের ছুরিকাঘাতে রমজান আলী নামে এক যুবক খুন হয়েছেন। গত বৃহস্পতিবার (২০ ডিসেম্বর) রাত ৯টার দিকে শহরের বেজপাড়া কবরস্থান এলাকায় ঘটনা ঘটে।রমজান আলী বেজপাড়া তালতলা এলাকার বাদশা মিয়ার ছেলে। একদল সন্ত্রাসী রমজানের বুক, পেট এবং হাতে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে সেখানেই তার মৃত্যু হয়। স্থানীয়দের দাবি, স্থামাদক ব্যবসায় বিরোধের জের ধরেই হত্যাকাণ্ড হতে পারে। ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে শহরের মোল্যাপাড়া বাঁশতলা মোড়ের রহিমের চায়ের দোকানের সামনে আব্দুর রহমান (৪৮) নামের এক ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে পিটিয়ে হত্যা করেছে সন্ত্রাসীরা। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে হত্যা কাজে ব্যবহৃত একটি ধারালো শাবল উদ্ধার করেছে। নিহত আব্দুর রহমান বারান্দী মোল্যাপাড়ার মৃত হবিবার রহমানের ছেলে পুরাতন টায়ার ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম হত্যা মামলার নম্বর সাক্ষী হত্যাকান্ডের প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন। পুলিশ ধারনা করছে নজরুলহত্যাকান্ডের সাথে জড়িত চক্রই পূর্ব শত্রুতার জেরে এই হত্যাকান্ডটি ঘটিয়েছে। এসব খুন নিয়ে সাধারণ মানুষ বলছে, যশোরে নতুন করে কিশোর গ্যাং তৈরি হচ্ছে। সাধারণ ছেলেরা কোন একটি বিশেষ মহলের ছত্রছায়ায় দিনদিন হিংস্র হয়ে উঠছে পাশাপাশি পারিবারিক, ব্যবসায়িক ব্যক্তিগত আক্রশে খুন হচ্ছে মনুষ। যা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য হুমকি স্বরুপ। কোতয়ালী মডেল থানার ওসি মনিরুজ্জামান বলেন, এভাবে একের পর এক প্রকাশ্যে হত্যাকান্ডের ঘটনায় শহরে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে। পুলিশ এসব হত্যাকান্ডের তেমন কোন কুলকিনারা করতে না পারায় সাধারণ মানুষের মনে সৃষ্টি হয়েছে নানা প্রশ্ন।

আরো সংবাদ
যশোর জেলা
ফেসবুক পেজ
সর্বাধিক পঠিত