আজ - শনিবার, ২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২১শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি, (হেমন্তকাল), সময় - রাত ৮:৩৪

এিভুবন ট্রাজেডির দুই বছর আজ।

মুনতাসির মামুন।। নেপালের কাঠমান্ডু ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনসের যাত্রীবাহী একটি বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার দুই বছর আজ ১২ মার্চ। ২০১৮ সালের ১২ মার্চের ওই ঘটনায় ৫১ যাত্রী ও ক্রু প্রাণ হারান।


সেদিন দুপুরে ৭১ আরোহী নিয়ে কাঠমান্ডুর উদ্দেশে ঢাকা ছাড়ে ইউএস-বাংলার ফ্লাইটটি। নেপালের যাত্রাপথ এক ঘণ্টা হলেও বিমানবন্দর ব্যস্ত থাকায় ত্রিভুবনের চারপাশে প্লেন নিয়ে ঘুরছিলেন পাইলট। অতিরিক্ত ১৫ মিনিট উড্ডয়নের পর পাহাড়ঘেরা ত্রিভুবন বিমানবন্দরে রানওয়ে থেকে ছিটকে পড়ে দুই টুকরো হয়ে বিধ্বস্ত হয় ড্যাশ ৮ কিউ ৪০০ মডেলের উড়োজাহাজটি।


এ ঘটনায় প্রথমে ঘটনাস্থলে ২০-২৫ জনের মতো নিহত হওয়ার তথ্য জানায় নেপাল। তবে কিছুক্ষণ পর আহতদের হাসপাতালে নিলে দীর্ঘ হয় লাশের সারি। পাইলট-ক্রুসহ একে একে ৫১ জন মারা যান। নিহতদের মধ্যে ২৭ জনই বাংলাদেশি।


বাংলাদেশের ইতিহাসে এমন ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনা আর ঘটেনি। এমনকি ১৯৯২ সালের পর নেপালের ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরেও এর চেয়ে ভয়াবহ কোনো বিমান দুর্ঘটনা ঘটেনি।
সেদিন ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনসের নেপালগামী ওই ফ্লাইটের ক্যাপ্টেন ছিলেন আবিদ সুলতান, তাঁর সঙ্গে কো-পাইলট ছিলেন পৃথুলা রশিদ। ৫১ যাত্রী ও ক্রুর সঙ্গে নিহতের তালিকায় ছিলেন তাঁরাও। তবে ওই মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় প্রাণে বেঁচে যান ২০ জন। যদিও গুরুতর আঘাতের কারণে তাঁদের অনেককেই দীর্ঘ সময় চিকিৎসা নিতে হয়।


ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনসের বিধ্বস্ত বিমান নেপালের ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরটি বিশ্বজুড়েই ঝুঁকিপূর্ণ বিমানবন্দর হিসেবে পরিচিত। দেশটির বিমান চলাচল নিরাপত্তার মান নিয়েও রয়েছে নানা প্রশ্ন। দেশটির কোনো এয়ারলাইনস ইউরোপীয় ইউনিয়নের আকাশসীমায় যেতে পারে না এসব কারণে।

এ দুর্ঘটনার পর ঢাকা-কাঠমান্ডু-ঢাকা রুটে ফ্লাইট বন্ধ করে দেয় ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনস। এরপর নতুন আরো কয়েকটি রুট চালু করলেও নেপালে ফ্লাইট চালু করেনি এয়ারলাইনসটি।


২০১৮ সালেই দুর্ঘটনায় বিধ্বস্ত বিমানের জন্য ক্ষতিপূরণ হিসেবে বিমা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে সাত মিলিয়ন ইউএস ডলার পায় ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনস। এয়ারলাইনসটিকে ক্ষতিপূরণের টাকা দেয় সেনাকল্যাণ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড। একই সঙ্গে আহত ও নিহত যাত্রীদের ক্ষতিপূরণ দেয় এই সংস্থাটি। প্রত্যেক নিহত যাত্রীকে ন্যূনতম ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয় ৫১ হাজার ২৫০ ডলারের সমপরিমাণ অর্থ। যদিও ওই ফ্লাইটে থাকা যাত্রীর শারীরিক ও মানসিক ক্ষতির ভিত্তিতে আহত যাত্রীদের ক্ষতিপূরণের পরিমাণে তারতম্য হয়। স্মরণকালের ভয়াবহ এই বিমান দুর্ঘটনায় ৭১ আরোহীর মধ্যে চারজন ক্রুসহ মোট ২৭ বাংলাদেশি, ২৩ নেপালি ও একজন চীনা যাত্রী নিহত হন। এ ছাড়া ওই ঘটনায় নয়জন বাংলাদেশি, ১০ নেপালি, একজন মালদ্বীপের নাগরিক আহত হন।
এ দুর্ঘটনায় নিহত পাইলট আবিদ সুলতানের স্ত্রী আফসানা খানম স্বামীর মৃত্যুর দুই সপ্তাহ পর অসুস্থ হয়ে মারা যান।
ওই দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে নেপাল তদন্ত কমিটি গঠন করে। এক বছরের মাথায় তদন্ত প্রতিবেদনও প্রকাশ করে তারা। তদন্ত প্রতিবেদনে পাইলটকে বেশি দায়ী করা হয়। বলা হয়, পাইলট মানসিক চাপের মধ্যেই ছিলেন। নিয়ম না মেনে ককপিটে বসে সিগারেট খাচ্ছিলেন। যথাযথ পদ্ধতি অনুসরণ না করে বিমানটিকে অবতরণের চেষ্টা করান। তবে শুধু পাইলট নন, নেপালের এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলেরও ভুল ছিল বলে বরাবরই দাবি করে এয়ারলাইনসটি।


এদিকে তদন্ত প্রতিবেদনে কাঠমান্ডু ত্রিভুবন বিমানবন্দরের কন্ট্রোল টাওয়ার ও ক্রুদের যোগাযোগের সমস্যাও উঠে এসেছে। রানওয়ে ০২ নাকি ২০ নম্বরে বিমানটি অবতরণ করবে, এ নিয়ে কন্ট্রোল টাওয়ার ও পাইলটের ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়।

আরো সংবাদ
যশোর জেলা
ফেসবুক পেজ
সর্বাধিক পঠিত