স্টাফ রিপোর্টার।। যশোর সদর উপজেলা যুবলীগের প্রয়াত সাধারণ সম্পাদক আলমগীর হোসেন হত্যায় প্রধান চার খুনি গেলো ৬ বছরেও গ্রেপ্তার হয়নি। আদালত তাদের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করলেও পুলিশ আজও ‘খুনি’ রফিকুল ইসলাম বিসমিল্লাহ, মহব্বত আলী, ফসিয়ার গাজী ও মহিদুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। অথচ নিহতের স্বজনদের ভাষ্য, ওই খুনিরা প্রকাশ্যেই আছে। কেউ বাড়ি আসে। কেউ এলাকায় ঘোরে। কেউ বা পাশের উপজেলায় দোকান দিয়ে রীতিমতো ব্যবসা করছে। কিন্তু তারা গ্রেপ্তার না হওয়ায় বিচার কাজ শুরু করা যাচ্ছে না। এই পরিস্থিতির মধ্যে আজ ১৮ জুন বৃহস্পতিবার আলমগীর হোসেনের ষষ্ঠ হত্যাবার্ষিকী পালিত হবে। এ উপলক্ষে নিহতের রুহের মাগফিরাত কামনায় এলাকার মসজিদে দোয়া মাহফিল ও বাড়িতে কোরআন খতমের আয়োজন করেছে পরিবার।
আরও পড়ুন : মৃত্যু আলমগীরের জনপ্রিয়তা গগণচুম্বি করেছে : শাহারুল ইসলাম।
পুলিশ, এলাকাবাসী ও স্বজনদের সূত্র মতে, যশোর সদর উপজেলা যুবলীগের প্রয়াত সাধারণ সম্পাদক আলমগীর হোসেন এলাকার অসহায়, নিরীহ এবং সাধারণ লোকজনের ন্যায়বিচার আদায়ে সচেষ্ট ছিলেন। পাশাপাশি মাদক সন্ত্রাসের বিরুদ্ধেও ছিলেন সরব। ফলে এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী, মাদক কারবারিসহ অপরাধিরা একত্রিত হয়ে দুনিয়া থেকেই আলমগীর হোসেনকে সরিয়ে দিতে নানা পরিকল্পনা ও ষড়যন্ত্র করতে থাকে। তারই ধারাবাহিকতায় ২০১৪ সালের ২৫ মে রাত ৮টার দিকে সদর উপজেলার রাজারহাট বাজারে অবস্থানকালে রামনগর গ্রামের বাসিন্দা রামনগর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান রেজাউল হাসান, শাহিন ওরফে পাগলা শাহিন, মহব্বত আলী, রফিকুল ইসলাম ওরফে বিসমিল্লাহ, অ্যাডভোকেট টিএম ওমর ফারুক, রামনগর পুকুরকুল এলাকার সুমন হোসেন ওরফে পাটালি সুমন, মানিক, রাকিব, রামনগর ধোপাপাড়ার আকাশ, একই এলাকার খাঁ-পাড়ার নাজমুল ইসলাম, মুরাদ, আহাদ, আফজাল, ওমর আলী, কাজীপুর গ্রামের ফসিয়ার রহমান গাজী, শফিক ওরফে শফিকুল, তরিকুল ইসলাম ও তফিকুল ইসলাম, সিদ্দিক, মুরাদ হোসেন ও ফরহাদ হোসেন, মহিদুল ইসলাম, আব্দুল জলিল ও তার দুই ছেলে আলম এবং আলিম, আব্দুল জব্বার খান, মফিজ, জিয়াউর রহমান, সুজন হাসান, শেখ রাসেল ইসলাম, ইয়াছিন আরাফাত ও শরফত হোসেন, আব্দুল গফুর, আকরামুল ইসলাম, শওকত হোসেন, শরিফুল ইসলাম মিন্টু, মিলন হোসেন, মুড়োলি খা’পাড়ার বিল্লাল হোসেন এবং মোশারেফ হোসেনসহ ৪০/৫০ জন সন্ত্রাসী একত্রিত হয়ে অস্ত্র, গুলি ও বোমা নিয়ে অতর্কিতভাবে আলমগীরের ওপর হামলা চালায়। তাকে গুলি করে ও বোমা হামলা চালিয়ে মারাত্মক আহত করে।
প্রথমে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতাল এবং পরে অবস্থার অবনতি হলে ঢাকার অ্যাপোলো হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই বছরের ১৮ জুন তিনি মারা যান।
এই ঘটনায় মৃত্যুর আগে তার বড় ভাই আলতাফ হোসেন বাদী হয়ে ২৯ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরো ১০/১২ জনের বিরুদ্ধে কোতোয়ালি মডেল থানায় মামলা করেন। প্রথমে থানা এবং পরে ডিবি পুলিশের এসআই আবুল খায়ের মোল্যা মামলাটি তদন্ত শেষে ৪০ জনকে অভিযুক্ত করে চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। কিন্তু হত্যাকাণ্ডে জড়িত এমন কিছু আসামির নাম চার্জশিটে না আসায় বাদী আদালতে নারাজি আবেদন করেছিলেন।
শুনানি শেষে নারাজি আবেদন খারিজ করে অভিযুক্ত আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আদেশ দেন আদালত। কিন্তু প্রধান চার আসামি রফিকুল ইসলাম বিসমিল্লাহ, মহব্বত আলী, ফসিয়ার গাজী ও মহিদুল ইসলামসহ চারজনকে আজও পর্যন্ত পুলিশ আটক করতে পারেনি। মামলার গুরুত্বপূর্ণ আসামিরা আটক না হওয়ায় আইনি প্রক্রিয়া বেশি দূর এগোয়নি। হত্যার শিকার আলমগীর হোসেনের পরিবারের অভিযোগ, খুনিরা এলাকায় রয়েছে। কিন্তু রাজনৈতিক প্রভাবে তাদের গ্রেপ্তার করছে না পুলিশ। ফলে ৬টি বছর মামলা এভাবেই চলছে। তাই বিচার পাওয়া নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেছে আলমগীরের পরিবার। সূত্র মতে, এ মামলায় আটক আসামিদের মধ্যে কয়েকজন এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে। আসামিদের জবানবন্দির ভিত্তিতে তদন্ত কর্মকর্তা ৪০ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। আর চার্জশিট দাখিলের পরও তারা প্রকাশ্যেই এলাকায় ঘোরাফেরা করছে। আদালত তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। তবে এর মধ্যে যশোর সদর উপজেলার সীমানার কাছেই মণিরামপুর উপজেলার কালারহাটে বসবাস করতেন পাগলা শাহিন। মাগুরা জেলা থেকে তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। অভিযুক্ত ফসিয়ার রহমান মুড়লীর পাশেই কাজীপুর গ্রামে নিজ বাড়িতে বসবাস করছেন। মহব্বত কখনো বাড়ি, আবার কখনো আশপাশের আত্মীয় বাড়িতে থাকেন। অপর অভিযুক্ত রফিকুল ইসলাম বিসমিল্লাহ কেশবপুরে বসবাস করছেন। তিনিসহ সেখানে আলমগীর হত্যার সাথে জড়িত পলাতক মহিদুল ইসলাম একটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান খুলেছেন বলে স্থানীয়রা জানিয়েছে।
এছাড়া ওই খুনিদের যশোর সদর আসনের সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদের শহরের একাধিক রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশ নিতে দেখা যায়। ফলে থেমে আছে মামলার বিচার কার্যক্রম। একের পর এক দিনধার্য হলেও মামলার চার্জ গঠন করা সম্ভব হচ্ছে না। সে কারণে বিচার কাজ দিনের পর দিন বিলম্বিত হচ্ছে।
মামলার বাদী নিহতের ভাই আলতাফ হোসেন বলেছেন, হত্যাকাণ্ডের সাথে সরাসরি যুক্ত আসামিদের গ্রেপ্তার না করায় আটকে আছে যশোরের আলোচিত যুবলীগ নেতা আলমগীর হত্যা মামলার চার্জ গঠন। ২০১৪ সালে জনপ্রিয় এই নেতা হত্যাকাণ্ডের পরের বছরই তদন্ত শেষে আদালতে চার্জশিট দাখিল করে পুলিশ। কিন্তু মামলার গুরুত্বপূর্ণ আসামিরা গ্রেপ্তার না হওয়ায় আর আইনি প্রক্রিয়া এগোয়নি। হত্যার শিকার আলমগীর হোসেনের পরিবারের অভিযোগ, খুনিরা এলাকায় রয়েছে। কিন্তু রাজনৈতিক প্রভাবে তাদের গ্রেপ্তার করছে না পুলিশ।
নিহত আলমগীর হোসেনের স্ত্রী ও রামনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নাজনীন নাহার আলমগীর বলেছেন, আইনের চোখে প্রধান চার আসামি পলাতক থাকলেও তারা প্রকাশ্যে রয়েছে। তাদের আটক করছে না পুলিশ। খুনিদের আটকের পর বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। তিনি আরো জানিয়েছেন, আজ বৃহস্পতিবার এলাকার মসজিদে দোয়া মাহফিল এবং বাড়িতে কোরআন খতমের আয়োজন করা হয়েছে।