মহামারি আকার ধারণ করা করোনার সংক্রমণ রোধে ২৩ জুলাই সকাল থেকে দেশে চলছে ১৪ দিনের কঠোর বিধিনিষেধ। চলবে আগামী ৫ আগস্ট রাত ১২টা পর্যন্ত। এই বিধিনিষেধে সব সরকারি, বেসরকারি অফিস, শিল্প কারখানা, পোশাক শিল্পসহ সব ধরনের কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। বন্ধ রয়েছে গণপরিবহন। মানুষের চলাচলে রয়েছে নিষেধাজ্ঞা।
এবারের এই বিধিনিষেধ আগের সব বিধিনিষেধের চেয়ে কঠোর হচ্ছে। সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে বিনা প্রয়োজনে বাসা থেকে বের হওয়ায় প্রতিদিনই গ্রেপ্তার ও জরিমানার মুখোমুখি হচ্ছেন অসংখ্য মানুষ। ইতোমধ্যে জনজীবনে নেমে এসেছে স্থবিরতা। এমতাবস্থায় আগামী ৫ আগস্টের পর বিধিনিষেধ বাড়বে নাকি তুলে নেওয়া হবে তা নিয়ে মানুষের মনে নানা প্রশ্ন।
কঠিন এই পরিস্থিতিতে প্রতিদিনই সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হচ্ছেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন। ৫ আগস্টের পর লকডাউন তুলে নেওয়া হবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ধাপে ধাপে সব কিছু খোলা হবে। একসঙ্গে খোলা হবে না। তবে আগামী সপ্তাহে আবারো পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, করোনা নিয়ন্ত্রণে লকডাউনের বিকল্প কিছু নাই। লকডাউন মানাতে হবে। লকডাউন বাস্তবায়নে যারা দায়িত্বে আছেন তাদের আরও কঠোর হতে হবে।
ফরহাদ হোসেন বলেন, আমাদের সবারই নিজ নিজ জায়গা থেকে চেষ্টা করা উচিত। আমরা তো এভাবে বাঁচতে পারব না। আমাদের মাস্ক পরতে হবে, কাজও করতে হবে। আমাদের টিকার সংকট কেটে গেছে। এখন সবাইকে টিকার আওতায় আনা হবে। তাহলে কি অর্ধেক জনবল নিয়ে প্রথম দিকে অফিস খোলা হবে? এমন প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘হ্যাঁ এরকমই’।
গার্মেন্টস খোলার বিষয়ে তিনি বলেন, চলতি মাসের মধ্যে গার্মেন্টস খোলার সম্ভাবনা খুবই কম। সবাইকে আমরা নিয়ন্ত্রণে আনতে চাচ্ছি। দুই সপ্তাহ পরে গার্মেন্টস খুলে দেব। রপ্তানিমুখী সবগুলো শিল্প কারখানা খুলে দেব।
প্রসঙ্গত, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে গত ১ থেকে ৭ জুলাই কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করে সরকার। পরে তা বাড়িয়ে ১৪ জুলাই করা হয়। ঈদুল আজহার কারণে ১৫ থেকে ২২ জুলাই পর্যন্ত বিধিনিষেধ শিথিল করা হয়। পরে ২৩ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত ‘কঠোরতম বিধিনিষেধ’ জারি করে সরকার।
পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী, শুরু হওয়া দুই সপ্তাহের লকডাউনের বিধিনিষেধ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন গত ১৩ জুলাই জারি করে সরকারের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, করোনা ভাইরাসজনিত সংক্রমণ পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে ২৩ জুলাই সকাল ৬টা থেকে ৫ আগস্ট দিনগত রাত ১২টা পর্যন্ত কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হলো।
কঠোর বিধিনিষেধের শর্তগুলো হলো- সব সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি অফিস বন্ধ থাকবে। সড়ক, রেল ও নৌপথে গণপরিবহন (অভ্যন্তরীণ বিমানসহ) এবং সকল প্রকার যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে। শপিংমল, মার্কেটসহ সব দোকানপাট বন্ধ থাকবে। সব পর্যটন কেন্দ্র, রিসোর্ট, কমিউনিটি সেন্টার ও বিনোদন কেন্দ্র বন্ধ থাকবে। সব প্রকার শিল্প-কলকারখানা বন্ধ থাকবে জনসমাবেশ হয় এ ধরনের সামাজিক (বিবাহোত্তর অনুষ্ঠান, ওয়ালিমা), জন্মদিন, পিকনিক, পার্টি ইত্যাদি) রাজনৈতিক ও ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান বন্ধ থাকবে।
এদিকে দেশে করোনায় মৃত্যু যেন লাফিয়ে বাড়ছে। আর লাগামহীনভাবে ছুটছে করোনা শনাক্তের সংখ্যাও। কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণে আসছে না সংক্রমণ। একদিনে মৃতের সংখ্যা সর্বোচ্চ ২৪৭ জনে ঠেকেছে। যা একদিনে রেকর্ড মৃত্যু। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত দেশে মোট মৃত্যু ১৯ হাজার ৫২১ জনে দাঁড়িয়েছে।
এছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে করোনা শনাক্ত হয়েছে ১৫ হাজার ১৯২ জন। এ নিয়ে দেশে মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৮২৭ জনে।
সোমবার (২৬ জুলাই) বিকেলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন ১১ হাজার ৫২ জন। এ নিয়ে মোট সুস্থ হয়েছেন ১০ লাখ ৯ হাজার ৯৭৫ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় ৫০ হাজার ৯৫২ জনের নমুনা পরীক্ষায় শনাক্তের হার ২৯ দশমিক ৮২ শতাংশ।
এর আগে, রোববার (২৫ জুলাই) করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ২২৮ জনের মৃত্যু হয়। এছাড়া করোনা শনাক্ত হয় ১১ হাজার ২৯১ জনের।