দীর্ঘ ৫ বছর পর গত ৭ সেপ্টেম্বর মিশর হতে বাংলাদেশে আসেন প্রবাসী লিটন সরকার। রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বের হয়ে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছিলেন তিনি। এ সময় কয়েকজন লোক ধারালো চাকুর ভয় দেখিয়ে তার সঙ্গে থাকা হ্যান্ডব্যাগ ও লাগেজ ছিনিয়ে নিয়ে যান। হ্যান্ডব্যাগ ও লাগেজে থাকা পাসপোর্ট, মিশরের ভিসা, বিমানের টিকিট, স্বর্ণের চেইন, দুটি মোবাইল সেট, একটি স্মার্টকার্ড, প্রয়োজনীয় কাপড়সহ নগদ ৪০ হাজার টাকা নিয়ে যান ডাকাত দলের সদস্যরা। পরবর্তীতে ডাকাত দলের সদস্যরা লিটন সরকারকে ঘটনাস্থল থেকে একটি বাসে তুলে ঘটনার বিষয়ে কাউকে না জানানোর জন্য ভয়-ভীতি ও হুমকি প্রদর্শন করেন।
রোববার (১৭ অক্টোবর) ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার এ কথা বলেন।
তিনি জানান, শনিবার (১৬ অক্টোবর) রাতে রাজধানীর হাতিরঝিল থানাধীন মীরবাগ এলাকা থেকে ডিএমপির গোয়েন্দা উত্তরা বিভাগের একটি টিম ডাকাত চক্রের তিনজনকে গ্রেফতার করে। এ সময় তাদের কাছ থেকে ডাকাতি করা পাঁচটি পাসপোর্ট, দুইটি এনআইডি কার্ড, দুইটি এটিএম কার্ড, একটি আইপ্যাড, একটি ওয়ার্ক পারমিট কার্ড, একটি বিএমইটি কার্ড, একটি অফিস আইডি কার্ড, একটি চাকু ও নগদ ৫৫ হজার টাকা উদ্ধার করা হয়।
গ্রেফতাররা হলেন- মাসুদুল হক (আপেল), আমির হোসেন হাওলাদার ও শামীম। গোয়েন্দা উত্তর বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার কাজী শফিকুল আলমের সার্বিক নির্দেশনায় এবং অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার আছমা আরা জাহানের তত্ত্বাবধানে অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মো. কায়সার রিজভী কোরায়েশীর নেতৃত্বে এ অভিযান পরিচালিত হয়।
সংবাদ সম্মেলনে ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, গ্রেফতার ডাকাত চক্রের সদস্যরা বিভিন্ন কায়দায় টার্গেট করেন প্রবাসীদের। এদের মূল টার্গেট প্রবাসীরা। এরা কখনো ডাকাত, ছিনতাইকারী কিংবা অজ্ঞান পার্টির সদস্য হিসেবে কাজ করেন। এদের কয়েকজনের নাম আমরা পেয়েছি। এ চক্রের মূলহোতাকে আমরা গতকাল গ্রেফতার করেছি।
হাফিজ আক্তার বলেন, এ চক্রটি এই ধরনের অনেক ঘটনা ঘটিয়েছে। পুলিশের চোখ এড়ানোর জন্য তারা ঢাকার ভিতরে কাজ শুরু করে ঢাকার বাহিরে গিয়ে বাকি অপরাধ কাজ শেষ করে। তাদের মূলহোতা মাসুদুল আলম জানান তারা প্রায় ৪০ লাখ টাকার মতো মালামাল বিভিন্নজন থেকে লুট করেছেন। এরপর সেটা নিজেদের মধ্যে ভাগ বাটোয়ারা করে নিয়েছেন। মাসুদুল আলমের নামে ৭টি মামলা রয়েছে বলেও জানান ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার।
তিনি আরও বলেন, গত ৫ অক্টোবর লন্ডন প্রবাসী মো. শরীফ ঢাকায় পৌঁছে নাটোরে যাওয়ার পথে তাকে অজ্ঞান করে তার বিদেশি পাসপোর্টসহ যাবতীয় সব কিছু নিয়ে যায় এ চক্র।
‘প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, গ্রেফতাররা ডাকাতির জন্য বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করেন। তারা বিদেশ থেকে আগত যেসকল যাত্রী একা বাড়ি যাওয়ার উদ্দেশ্যে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করেন তাদেরকে টার্গেট করে। টার্গেটকৃত যাত্রীর সাথে সু-কৌশলে সম্পর্ক স্থাপন করে পরিবেশ পরিস্থিতি বিবেচনা করে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে যাত্রীর মূল্যবান জিনিসপত্র ছিনিয়ে নেন।’
হাফিজ আক্তার আরও বলেন, অথবা বিদেশ হতে আগত যাত্রীদের টার্গেট করে কেউ একজন ভালো সম্পর্ক স্থাপন করেন। এরপর চক্রের অপর সদস্যরা টার্গেটকৃত ব্যক্তিকে চেতনানাশক দ্ৰব্য মিশ্রিত খাবার খাইয়ে তাকে অচেতন করে মূল্যবান দ্রব্যাদি ছিনিয়ে নেন। এ চক্রের সদস্যরা চা, কফি, জুস, ডাবের পানি ইত্যাদির সাথে চেতনানাশক দ্রব্যাদি মিশিয়ে খাওয়ানোর মাধ্যমে জিনিসপত্র লুট করেন। যাত্রীরা তাদের সাথে থাকা জিনিসপত্র দিতে বাধা দিলে অস্ত্র দেখিয়ে ভয়-ভীতি দেখান।
এ চক্রটি ইতোমধ্যে প্রায় ৫০টি এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছে জানিয়ে ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, এর মধ্যে ৭টি ঘটনার মামলা হয়েছে। আমরা এখন দেখবো অন্য কেউ এর সাথে জড়িত আছে কিনা।
ট্রান্সপোর্ট ব্যবসার সাথে যারা থাকেন তারা এসব কাজে জড়িত কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এদের মধ্যেও কিছু সদস্য থাকেন। তবে অনেক সময় গাড়ি চালককে জিম্মি করেই এই ধরনের কাজ করে থাকে তারা।
৫০টি ঘটনার মধ্যে মাত্র ৭টি ঘটনায় মামলা হয়েছে, এত কম মামলা হওয়ার কারণ কী জানতে চাইলে হাফিজ আক্তার বলেন, প্রবাসীরা কম সময়ের জন্য দেশে আসেন। খুব কম সময়ের মধ্যে এরা আবার চলে যান। এ ধরনের ঘটনা ঘটলে তারা দ্রুত পাসপোর্ট করে আবার প্রবাসে চলে যান। তাদের সামনের দিনগুলোতে মামলা চালাতেও কষ্ট হয়ে যায়। আর এ সুযোগটাই নেয় ডাকাতরা।
করোনার এ সময়ে প্রচুর সংখ্যক প্রবাসী দেশে ফিরে আসা শুরু করেছেন। এদের মাধ্যমে অপরাধ যাতে সংগঠিত না হতে পারে সেজন্য আমরা অভিযান শুরু করেছি বলেও জানান হাফিজ আক্তার।