আজ - রবিবার, ২২শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৭ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২০শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি, (শীতকাল), সময় - সকাল ৯:০৩

আমি মিডিয়া ট্রায়ালের শিকার হয়েছি : বগুড়ার সেই বিচারক

গণমাধ্যম আমার বিরুদ্ধে এক তরফাভাবে লিখেছে। আমার কিংবা আমার পরিবারের কারো বক্তব্যের জন্য অপেক্ষা করেনি তারা। আমার সন্তান বুলিং-র‌্যাগিংয়ের শিকার হয়েছে।

‘অভিভাবককে পা ধরতে বাধ্য করা’র অভিযোগে বগুড়ার আদালত থেকে প্রত্যাহার হওয়া বিচারক বেগম রুবাইয়া ইয়াসমিন দাবি করেছেন তিনি মিডিয়া ট্রায়ালের শিকার হয়েছেন।

রুবাইয়া ইয়াসমিন বলেন, ‘আমি মিডিয়া ট্রায়ালের শিকার হয়েছি। গণমাধ্যম আমার বিরুদ্ধে এক তরফাভাবে লিখেছে। আমার কিংবা আমার পরিবারের কারো বক্তব্যের জন্য অপেক্ষা করেনি তারা। জাতির কাছে, দেশের মানুষের কাছে এর বিচারের ভার ছেড়ে দিলাম।’

বর্তমানে আইন মন্ত্রণালয়ে সংযুক্ত হওয়া বেগম রুবাইয়া ইয়াসমিন আরও বলেন, ‘আমার নিজের সন্তান বুলিং-র‌্যাগিংয়ের শিকার হয়েছে। আর যেন কোনো শিক্ষার্থী র‌্যাগিং-বুলিংয়ের শিকার না হয় সেজন্য প্রধান বিচারপতির কাছে আমি আবেদন জানিয়েছি।’

এদিকে ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা দিয়ে গণমাধ্যমে একটি বিবৃতিতে পাঠিয়েছেন বিচারক রুবাইয়া ইয়াসমিন। ওই বিবৃতি সারা দেশের বিভিন্ন পর্যায়ের বিচারকরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে শেয়ার করছেন।

বিবৃতিতে রুবাইয়া ইয়াসমিন বলেন, ‘আমি কাউকে পা ধরার নির্দেশ দিইনি বা পা ধরতে বাধ্য ও করিনি। ইহা একটি অন্যায়, অবিবেচক ও গর্হিত অভিযোগ। আমার মেয়ে দীর্ঘ ৪ মাস যাবত মাহি ও আফ্রিদা নামে দুই মেয়ের গ্রুপের মেম্বারদের র‌্যাগিং ও বুলিং-এর শিকার হচ্ছে। সে দীর্ঘদিন ধরে এ ছাত্রীদের র‌্যাগিং-বুলিং সহ্য করে আসছিল এবং তাদের সঙ্গে মিলে মিশে থাকার চেষ্টা করে আসছিল। কিন্তু তারা সবসময় আমার মেয়েকে ‘জজের মেয়ে’, ‘সে বেশি সুযোগ সুবিধা পায়’, ‘জজ আসলে সরকারের চাকর’, এসব বলে উত্যক্ত করে আসছে। সত্য এই যে, আমি পাবলিক সার্ভেন্ট এবং জনগণের সেবায় নিয়োজিত। কিন্তু একটি শিশুকে, যার বয়স ১৩ বছর এক মাস, তাকে তার মা জনগণের চাকর বা জজ জনগণের কামলা বলা, জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে র‌্যাগিং-বুলিং করা একটি অন্যায় আচরণ। ওই ছাত্রীরা তাদের বুলিং-এর বিষয়গুলো যেন গণমাধ্যমে চলে না আসে সেজন্য বিচারক ও তার মেয়েকে জড়িয়ে গণমাধ্যম ও সোশ্যাল মিডিয়ায় অপপ্রচার চালাচ্ছে এবং বিচার বিভাগকে নিয়ে অপমানসূচক কথাবার্তা প্রচার করে জনমনে বিচারকদের বিরুদ্ধে অসন্তোষ তৈরি করছে।’

‘আমি এতদিন আমার ও আমার শিশুকন্যার প্রাইভেসির কথা চিন্তা করে মিডিয়া থেকে দূরে ছিলাম এবং কোনো বিবৃতি প্রদান করিনি। কিন্তু একটি মিথ্যা অপবাদ মাথায় নিয়ে চলা আমার জন্য কষ্টকর বিধায় আমি সত্য বিষয়টি তুলে ধরলাম।’

উল্লেখ্য, গত ২৩ মার্চ বগুড়ায় অভিভাবককে পা ধরতে বাধ্য করার অভিযোগে বিচারক রুবাইয়া ইয়াসমিনকে প্রত্যাহার করে আইন মন্ত্রণালয়ে সংযুক্ত করা হয়।

কয়েকটি গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বগুড়া সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর মাকে বিচারক বেগম রুবাইয়া ইয়াসমিন তার পায়ে ধরে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করেছেন, এমন অভিযোগে গত মঙ্গলবার (২১ মার্চ) স্কুলের সামনের রাস্তায় জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বগুড়ার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক রুবাইয়া ইয়াসমিনের মেয়ে ওই স্কুলের অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। স্কুলের নিয়ম অনুযায়ী সব শিক্ষার্থীর পালাক্রমে শ্রেণি কক্ষ ঝাড়ু দেওয়ার কথা থাকলেও বিচারকের মেয়ে কখনোই শ্রেণিকক্ষ ঝাড়ু দেয় না। বিষয়টি নিয়ে সহপাঠীদের সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয় তার।

গত সোমবার (২০ মার্চ) রাতে স্কুলের একটি ফেসবুক গ্রুপে সহপাঠীদের কটাক্ষ করে একটি পোস্ট লেখে বিচারকের মেয়ে। এতে কয়েকজন সহপাঠী ক্ষুব্ধ হয়ে প্রতিবাদ জানায়।

পরদিন মঙ্গলবার সকালে স্কুলের অভিভাবক সমাবেশে এসে বিচারক রুবাইয়া ইয়াসমিন ৩ শিক্ষার্থী এবং তাদের অভিভাবককে প্রধান শিক্ষকের মাধ্যমে ডেকে আনেন। ফেসবুকে তাকে ও তার মেয়েকে নিয়ে ‘অপমানজনক কথা’ বলা হয়েছে দাবি করে সাইবার অপরাধের অভিযোগে মামলা করার হুমকি দেন তিনি।

এক পর্যায়ে এক শিক্ষার্থীর মাকে পা ধরে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করেন ওই বিচারক। সে সময় স্কুলের প্রধান শিক্ষক মোছা. রাবেয়া খাতুন বিচারকের পক্ষ নিয়ে শিক্ষার্থীদের শাসান।

বিষয়টি জানাজানি হলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানাতে থাকেন সাধারণ মানুষ। তারা বিচারকের এমন কাণ্ডের সমালোচনা করেন।

-মেহেদী হাসান ডালিম

আরো সংবাদ