বিদ্রোহী প্রার্থীরা মাঠে থাকলে নৌকার প্রার্থীদের সমস্যা হবে। আমরা চেষ্টা করছি বিদ্রোহীদের বসিয়ে দেওয়ার। তারপরও যদি কেউ থেকে যান, তার ব্যাপারে কেন্দ্রকে অবহিত করবো। কেন্দ্রের নির্দেশনা অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে : জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলন।
পদে থেকে দলের বিরুদ্ধে ভোট করলে অটো বহিষ্কার : জেলা আওয়ামী লীগ সম্পাদক শাহীন চাকলাদার।
স্টাফ রিপোর্টার: উপজেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ পদধারী। সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন বঞ্চিত হন। বড় আশায় বুক বাঁধেন উপজেলা পরিষদে। কিন্তু সেই আশার গুড়েও বালি। দলীয় হাইকমান্ড মনোনয়ন দেয়নি। নৌকার জন্য নিবেদিত হিসেবে পরিচিত সেইসব নেতারা এখন বিদ্রোহী প্রার্থী। তারা নৌকা ডোবাতে মরিয়া। যশোরের সাতটি উপজেলায় বিদ্রোহী নিয়ে বিপাকে নৌকার প্রার্থীরা। এদের কারণে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি হয়েছে। যার প্রভাব ভোটের মাঠে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
নির্বাচন অফিস ও দলীয় সূত্রে জানা যায়, যশোর সদর উপজেলায় তৃতীয়বারের মতো দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান চেয়ারম্যান জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদার। তাকে ছাড় দিতে নারাজ সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহিত কুমার নাথ। তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মাঠে আছেন। যশোর-৩ আসনের সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদের অনুসারী হিসেবে পরিচিত মোহিত কুমার নাথ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করায় আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে নয়া মেরুকরণ চলছে। দ্বিধাবিভক্ত তৃণমূলে সংকট আরো ঘণীভূত হয়েছে।
২০১৪ সালে বাঘারপাড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর ভরাডুবি হয়েছিল দলীয় কোন্দলের জেরে। এবারো সেই কোন্দল রয়েছে। নৌকার প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সম্পাদক হাসান আলীকে ঠেকাতে মরিয়া দুই বিদ্রোহী প্রার্থী।
মনোনয়ন বঞ্চিত হওয়ায় জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও জামদিয়া ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান নাজমুল ইসলাম কাজল ও রায়পুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মঞ্জুর রশিদ স্বপন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভোটের মাঠে রয়েছেন।
বিদ্রোহী প্রার্থী মাঠে থাকায় নৌকার প্রার্থীকে বিজয় নিশ্চিত করতে বেগ পেতে হবে বলে মনে করছেন তৃণমূলের নেতা কর্মীরা।
চৌগাছা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন ড. মোস্তানিচুর রহমান। তাকে চ্যালেঞ্জ করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন বর্তমান চেয়ারম্যান এসএম হাবিবুর রহমান। বিদ্রোহী প্রার্থী মাঠে থাকায় স্থানীয় আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে কোন্দল প্রকাশ্যে রূপ নিয়েছে।
নৌকার প্রার্থীকে পরাজিত করতে তারা মরিয়া। এতে নৌকার প্রার্থী ভোটের মাঠে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন।
মণিরামপুর উপজেলা পরিষদে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন জেলা যুব মহিলালীগের সহ-সভাপতি ও বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান (মহিলা) নাজমা খানম।
তাকে চ্যালেঞ্জ করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেন লাভলু ও উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা হাবিবুর রহমান খান। স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ঘিরে তৃণমূল আওয়ামী লীগ দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েছে। বিদ্রোহী প্রার্থী ও তার সমর্থকরা নৌকার প্রার্থীকে পরাজিত করতে মরিয়া।
ঝিকরগাছা উপজেলা পরিষদে চেয়ারম্যান পদে নৌকার মনোনয়ন পেয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সম্পাদক অ্যাড. মোহাম্মদ আলী রায়হান। তাকে ছাড় দিতে নারাজ উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সম্পাদক মনিরুল ইসলাম। দুই প্রার্থীকে ঘিরে উপজেলা আওয়ামী লীগের গ্রুপিং সক্রিয় হয়েছে। নৌকার প্রার্থীকে পরাজিত করতে মরিয়া মনিরুল ইসলামের অনুসারীরা। যদিও ২০১৪ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত মনিরুল ইসলাম পরাজিত হয়েছিলেন দলীয় কোন্দলের কারণে। বিদ্রোহী প্রার্থী মাঠে থাকায় বিএনপির প্রার্থী বিজয়ী হন। এবার সেই মনিরুল ইসলাম নিজেই বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন।
অভয়নগর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন শাহ ফরিদ জাহাঙ্গীর। তাকে ছাড় দিতে নারাজ শ্রমিক নেতা রবিন অধিকারী ব্যাচা। দুই প্রার্থীকে ঘিরে তৃণমূলে ব্যাপক বিভক্তি দেখা দিয়েছে। দলের সাধারণ নেতাকর্মীরা বিপাকে পড়েছেন। নৌকার প্রার্থীকে পরাজিত করতে মরিয়া রবিন অধিকারী ব্যাচা। যদিও তিনি ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ছিলেন। সেই নির্বাচনে তিনি পরাজিত হন।
কেশবপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে তৃতীয়বারের মতো দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এইচএম আমীর হোসেন। তাকে চ্যালেঞ্জ করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন জেলা আওয়ামী নেতা কাজী রফিকুল ইসলাম। বিদ্রোহী প্রার্থী মাঠে থাকায় নৌকার প্রার্থীকে শক্ত করেই হাল ধরতে হবে। দ্বিধাবিভক্ত তৃণমূলে বিদ্রোহী প্রার্থীও প্রভাব ফেলতে পারে, মনে করছে তৃণমূল।
পড়ুন আমজাদ হোসেন লাভলু সম্পর্কে