আজ - শনিবার, ২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২১শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি, (হেমন্তকাল), সময় - সকাল ১১:৪৭

​বড় দলগুলোর শীর্ষ নেতাদের এলাকায় তৎপরতা শুরু।

 কুড়িগ্রাম/ফুলবাড়ী/রাজারহাট  (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি :

কুড়িগ্রাম  সদর উপজেলার ৮, রাজারহাট উপজেলার ৭, ফুলবাড়ী উপজেলার ৬টিসহ ২১টি ইউনিয়ন এবং কুড়িগ্রাম পৌরসভা নিয়ে গঠিত এ আসনে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির ভোটের হিসাব-নিকাশ যা-ই হোক না কেন, আলোচিত তিন দলের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা বসে নেই। তারা নির্বাচনকে ঘিরে তৎপরতা শুরু করেছেন। নিজেদের পক্ষে দলের নেতাকর্মীদের পাশাপাশি কেন্দ্রীয় নীতি নির্ধারকদেরও সমর্থন আদায়ে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন। কুড়িগ্রাম-২ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা তাজুল ইসলাম চৌধুরী। তিনি সংসদে বিরোধী দলের চিফ হুইপ। দলের নেতাকর্মীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, আগামী নির্বাচনে তাজুল ইসলাম দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার ক্ষেত্রে শক্ত দাবিদার হলেও নানা কারণে অন্য কাউকে প্রার্থী করা যায় কি না, এমন ভাবনাও রয়েছে।

অন্যদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়ার জন্য পুরনো-নতুন     মিলিয়ে বেশ কয়েকজন চেষ্টা করছেন বলে জানা গেছে। তবে দলের নেতাকর্মীরা বলছেন, দলের প্রার্থী মনোনয়ন পাওয়ার বিষয়ে তারা সংশয়ে আছেন। কেন না জোটগত নির্বাচন হলে এবারও হয়তো জাতীয় পার্টিকে আসনটি ছেড়ে দিতে হতে পারে। বিএনপির প্রার্থী হিসেবে দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভীর নাম সবার আগে উচ্চারিত হচ্ছে। তিনি এখানে নির্বাচন না করলে স্থানীয় তিন নেতার মধ্যে কেউ মনোনয়ন পাবেন বলে আলোচনা রয়েছে।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে সাবেক সংসদ সদস্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো: জাফর আলীর নাম আলোচনার শীর্ষে রয়েছে। এছাড়া সাবেক জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) আ ম সা আ আমিন, ঢাকার পঙ্গ হাসপাতালের সাবেক পরিচালক ডা. হামিদুল হক খন্দকার, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আমিনুল ইসলাম মন্ডল, সহসভাপতি চাষী করিম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট আব্রাহাম লিংকন, চলচ্চিত্র পরিচালক আবু সুফিয়ানের নাম শোনা যাচ্ছে। তাদের অনেকেই নির্বাচনী এলাকায় নিয়মিত গণসংযোগ করছেন এবং বিলবোর্ড ও পোস্টার লাগিয়ে পরিচিতি অর্জনের চেষ্টাও করছেন।

বিগত নির্বাচনে দলের জনপ্রিয় নেতা মো: জাফর আলী মনোনয়ন পেলেও জাতীয় পার্টির সাথে ‘সমঝোতার’ কারণে আসনটি ওই দলের প্রার্থী তাজুল ইসলাম চৌধুরীকে ছেড়ে দিতে হয়। এবারও জাতীয় পার্টিকে আসনটি ছাড়তে হয় কি না, তা নিয়ে দলে জোর গুঞ্জন রয়েছে। নেতাকর্মীরা এবার নিজেদের প্রার্থী দেয়ার দাবি করছেন।
আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, কুড়িগ্রামের চারটি সংসদীয় আসনে দলটির সংসদ সদস্য নেই। তাই দলের নেতাকর্মীদের মনোবল সুসংহত রাখতে জাফর আলীকে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন দেয়া হয়। বিপুল ভোটে নির্বাচিত হওয়ার পর বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপক গণসংবর্ধনাও পান তিনি। পাশাপাশি আগামী সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতিও সেরে নিয়েছেন তিনি। অবশ্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার কারণে সংসদ নির্বাচনে তাকে মনোনয়ন দেয়া হবে কি না, সেটা নীতি নির্ধারকদের ব্যাপার। তবে সাম্প্রতিক সময়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরকে ঘিরে জাফর আলীর কর্মতৎপরতা সবার নজর কাড়ে। দলের বেশির ভাগ নেতাই প্রধানমন্ত্রী ও জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের জানিয়েছেন, সদর আসনটি আবার জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দিলে দলের জন্য বড় ক্ষতির কারণ হবে। জাফর আলীকে মনোনয়ন দেয়ার ব্যাপারে তাদের জোর সুপারিশও রয়েছে।

 জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জাফর আলী বলেন, বিগত কয়েক বছরে জেলায় ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকান্ড পরিচালিত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি অনুয়ায়ী এ অঞ্চল বিশ্ববিদ্যালয়সহ বেশ কয়েকটি প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন। ফলে ভোটাররা আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের ভোট দেয়ার জন্য প্রস্তুত। এপরও দলীয় নেত্রী যাকে মনোনয়ন দেবেন দলের সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে তার জন্য কাজ করবে।
এদিকে সংসদের বাইরে থাকা বিএনপি প্রার্থী হিসেবে দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভীর নাম সবার আগে উচ্চারিত হচ্ছে। ২০০৬ সালে বাতিল ঘোষিত নির্বাচনে তিনি এ আসনে বিএনপির প্রার্থী ছিলেন। কুড়িগ্রাম শহরের চামড়াগোলা এলাকায় তার বাড়ি রয়েছে। বর্তমানে এ আসনে প্রার্থী হওয়ার ব্যাপারে তার অবস্থান নমনীয় বলে জানিয়েছেন জেলার শীর্ষ নেতাদের কয়েকজন।

এছাড়া এই আসনে প্রার্থী হিসেবে দলের জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক সাইফুর রহমান রানা, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সোহেল হোসনাইন কায়কোবাদ, কুড়িগ্রাম পৌরসভার সাবেক মেয়র আবু বকর সিদ্দিকের নাম শোনা যাচ্ছে। জনপ্রিয়তা ও মাঠে কর্মতৎপরতার দিক থেকে এগিয়ে রয়েছেন সোহেল হোসনাইন কায়কোবাদ। তাকে মনোনয়ন দেয়া হলে আসনটি বিএনপির ঘরে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি রয়েছে বলে বিএনপির কয়েকজন নেতা দাবি করেন।
সোহেল হোসনাইন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে জনসংযোগ করে পার্টির জনভিত্তি দাঁড় করিয়েছি। তৃণমূলের নেতাকর্মীরা চান আমি নির্বাচন করি। তাই মনোনয়ন চাইব। কেন্দ্র যা ভালো মনে করবে, তা-ই মেনে নেব।

অপরদিকে কুড়িগ্রাম-২ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য তাজুল ইসলাম চৌধুরী ১৯৭৯ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত টানা পাঁচবার নির্বাচিত হন। জিয়া ও এরশাদ আমলে তিনি মন্ত্রীও ছিলেন। বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় তিনি ফেরদৌস আহমেদ কোরেশীর প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক পার্টিতে (পিডিপি) যোগ দেন। পরে আবার জাতীয় পার্টিতে ফেরার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে বিএনপির টিকিট নিয়ে ২০০৮ সালে নির্বাচন করেন। কিন্তু জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের কাছে হেরে যান তাজুল ইসলাম। পরে উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মো: জাফর আলীর কাছেও হারেন তিনি। জাতীয় পার্টিতে ফিরে ২০১৪ সালে দলের টিকিটে নির্বাচন করে জয়লাভ করেন তাজুল ইসলাম।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, তাজুল ইসলাম চৌধুরী এমনিতেই নির্বাচনী এলাকায় কম আসেন। তার ওপর বেশ কয়েক মাস ধরে তিনি অসুস্থ। বন্যার সময় চিকিৎসার জন্য তিনি বিদেশে ছিলেন। অসুস্থতার কারণে তিনি আগামী নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন কি না, এ নিয়ে দলের ভেতর আলোচনা থাকলেও এখন পর্যন্ত তিনিই প্রার্থিতার শক্ত দাবিদার।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কুড়িগ্রাম-২ নির্বাচনী এলাকায় জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক ভিত্তি খুবই দুর্বল। জেলা ও উপজেলায় পাল্টাপাল্টি কমিটির কারণে সাংগঠনিক কোনো তৎপরতা নেই। ভিড় নেই পার্টির কার্যালয়েও। সংসদ সদস্য পছন্দের কয়েকজনকে দিয়ে তাঁর কর্মকান্ড চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ নেতাকর্মীদের।
অবশ্য আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন তাজুল ইসলাম চৌধুরী। তিনি জানান, জাতীয় সংসদের অধিবেশন থাকায় এলাকায় আসতে না পারলেও সব নেতাকর্মীর সাথে যোগাযোগ রাখছি।

জাতীয় পার্টির বিকল্প প্রার্থী হিসেবে বাংলাদেশ বিমানের সাবেক পরিচালক মেজর (অব.) আব্দুস সালামের নাম আলোচিত হচ্ছে। তিনি বিভিন্ন এলাকায় বিলবোর্ড লাগিয়ে জনগণকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। মাঝেমধ্যে নির্বাচনী এলাকায় গণসংযোগ করেন মেজর সালাম। এলাকার বিপুল সংখ্যক মানুষকে কর্ম সংস্থানের ব্যবস্থা করে দিয়ে পরিচিতি পেয়েছেন তিনি।

মেজর সালাম জানিয়েছেন, নির্বাচন কমিশনের বিধিমালার কারণে সরকারি চাকরি থেকে অবসরের তিন বছর পূর্ণ না হওয়ায় বিগত নির্বাচনে মনোনয়ন পাননি। তবে তিনি মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে যথেষ্ট আশাবাদী।

জাতীয় পার্টির বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, তাজুল ইসলাম চৌধুরী মনোনয়ন না পেলে মেজর সালাম অথবা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ নিজেই প্রার্থী হতে পারেন এ আসনে। এছাড়া দলের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে কুড়িপ্রাম সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান পনির উদ্দিন আহমদের নামও শোনা যাচ্ছে। জেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে হেরে যাওয়া পনির উদ্দিন জাতীয় পার্টির মনোনয়ন চাইতে পারেন বলে ধারণা করছে তার অনুসারীরা।

বাম দলগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) কেন্দ্রীয় নেতা জাহিদুল হক মিলু প্রার্থী হতে পারেন। এ আসনে ইসলামী আন্দোলনের উল্লেখযোগ্য ভোট রয়েছে। তবে এই দল থেকে কে প্রার্থী হবেন, তা এখনও ঠিক হয়নি।

আরো সংবাদ
যশোর জেলা
ফেসবুক পেজ
সর্বাধিক পঠিত