আজ - শুক্রবার, ২৭শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৫শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি, (শীতকাল), সময় - সকাল ৮:১৫

আরও পরিকল্পনা আছে বিমান বাহিনীর জন্য, ক্ষমতায় এলে সেগুলো করব: প্রধানমন্ত্রী।

নাইমুল হক: বৃহস্পতিবার যশোরে বিমান বাহিনী একাডেমিতে নবনির্মিত বঙ্গবন্ধু কমপ্লেক্সের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “সামনে নির্বাচন, যদি আবার ক্ষমতায় আসতে পারি, আরও পরিকল্পনা আছে বিমান বাহিনীর জন্য, সেগুলো করব।”

স্বাধীনতার পর থেকে বিমান বাহিনীর উন্নয়নে বিভিন্ন সময়ে আওয়ামী লীগ সরকারের নেওয়া উদ্যোগের কথা এ অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, “আমরা কারো সঙ্গে যুদ্ধ চাই না। তবে আঘাত এলে দেশকে শত্রুমুক্ত করতে এবং সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সব ধরনের প্রস্তুতি আমাদের থাকতে হবে।”

উপস্থিত বিমান বাহিনীর সদস্যদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আত্মবিশ্বাস ও আত্মমর্যাদাবোধ একটি জাতিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে। সততা ও দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশকে এগিয়ে নেবেন।”

বঙ্গবন্ধু কমপ্লেক্সের সামনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একটি ব্রোঞ্জের ভাস্কর্য উন্মোচন করেন তার মেয়ে শেখ হাসিনা।

১২টি ভবন ও অবকাঠামোর সমন্বয়ে নির্মিত বঙ্গবন্ধু কমপ্লেক্সে একসঙ্গে ৬০০ ক্যাডেটের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে।

এই একাডেমিতে রয়েছে প্রশিক্ষণ উইং, ফ্লাইং প্রশিক্ষণ উইং, ক্যাডেটস প্রশিক্ষণ উইং, সাপোর্ট উইং, ব্যাংকোয়েট হল, সুইমিং পুল, জিমনেসিয়াম, মিলনায়তনসহ অন্যান্য সুবিধা।

আন্তর্জাতিক মানের প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করতে এখানে সুপারসনিক উইন্ডটানেল, অ্যারোডিনামিক্স ল্যাব, গ্যাস টারবাইন এবং পিস্টন ইঞ্জিন সমৃদ্ধ অ্যারোইঞ্জিন ল্যাব, সার্কিট ল্যাব, পাঠাগার, কম্পিউটার ও ল্যাংগুয়েজ ল্যাব রয়েছে।

এই একাডেমিতে আধুনিক মিলনায়তন ছাড়াও বিজ্ঞান ও কারিগরি প্রশিক্ষণের জন্য রয়েছে বিভিন্ন ধরনের বিজ্ঞানাগার।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বঙ্গবন্ধু কমপ্লেক্স উদ্বোধনের মাধ্যমে জাতির পিতার স্বপ্নের আন্তর্জাতিক মানের প্রশিক্ষণ একাডেমি প্রতিষ্ঠা সম্ভব হল। এই প্রতিষ্ঠান ডিজিটাল বাংলাদেশের যথার্থতা প্রমাণ করে তথ্য-প্রযুক্তির সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করবে।”

বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, “জাতির পিতা স্বপ্ন দেখেছিলেন, আমাদের সামরিক বাহিনীর জন্য আধুনিক ও আন্তর্জাতিক মানের প্রশিক্ষণ একাডেমি হবে, যেখানে সারা পৃথিবী থেকে প্রশিক্ষণার্থী আসবে। বাংলাদেশ বিমান বাহিনী একাডেমি আজ এমন এক উচ্চতায় পৌঁছেছে, যা উন্নত দেশের যে কোনো বিমানবাহিনী একাডেমির সমকক্ষ।”

যশোরে এ অনুষ্ঠান থেকেই ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় বিমান বাহিনীর ঘাঁটি জহুরুল হকের ১০৫ অ্যাডভান্সড জেট ট্রেনিং ইউনিটের কার্যক্রম উদ্বোধন এবং বিমান সেনা প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউটের ভিত্তিফলক উন্মোচন করেন।

তিনি বলেন, বিমানসেনা প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউট দক্ষ ও চৌকস জনশক্তির যোগান দিতে সক্ষম হবে বলে তিনি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন।

“এ অত্যাধুনিক প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান সর্বাধুনিক প্রযুক্তিগত ও তত্ত্বীয় জ্ঞাননির্ভর বিমানসেনা গড়ে তুলবে।”

মাল্টিরোল যুদ্ধবিমানের জন্য দক্ষ ও পেশাদার বৈমানিক প্রশিক্ষণের লক্ষ্যে ২০১৭ সালের ২ জুলাই ১০৫ অ্যাডভান্সড জেট ট্রেনিং ইউনিট প্রতিষ্ঠার কাজ ‍শুরু হয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এই প্রতিষ্ঠানগুলো বিমান বাহিনীর অপারেশনাল সক্ষমতা বৃদ্ধি, প্রশিক্ষণ সুবিধাদির উন্নয়ন এবং বিমান বাহিনীর সদস্য ও তাদের পরিবারবর্গের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে আরও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে।”

বিমান বাহিনীর উন্নয়নে সরকারের নেওয়া পদক্ষেপগুলো তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকার বিমান বাহিনীর সদস্যদের সার্বিক দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য প্রশিক্ষণ সুবিধা উন্নয়ন ও আধুনিকায়নের উপর গুরুত্ব দিয়ে আসছে। ক্যাডেটদের মৌলিক প্রশিক্ষণ ও মানোন্নয়নের লক্ষ্যে প্রশিক্ষণের মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিমানসেনাদের প্রশিক্ষণ কোর্সও যুগোপযোগী করা হয়েছে।

যুগোপযোগী প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করতে বিমান বাহিনীতে অত্যাধুনিক জেট ও পরিবহন প্রশিক্ষণ বিমান, হেলিকপ্টার ট্রেইনার এবং এমআই সিরিজের হেলিকপ্টার সিম্যুলেটর সংযোজন করার কথাও মনে করিয়ে দেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, বিমান বাহিনীর সম্প্রসারণ ও আধুনিকায়নের অংশ হিসেবে বরিশাল ও সিলেটে বিমান ঘাঁটি স্থাপনসহ বিভিন্ন ধরনের সামরিক সরঞ্জাম সংযোজন এবং অবকাঠামোগত উন্নয়ন চলমান আছে।

বঙ্গবন্ধু কমপ্লেক্স উদ্বোধন উপলক্ষে বিমান বাহিনী একাডেমিতে কুচকাওয়াজ হয় এবং প্রধানমন্ত্রী সেখানে সালাম গ্রহণ করেন। তিনি বিমান বাহিনীর ফ্লাইপাস্ট এবং বৈমানিকদের বিভিন্ন উড্ডয়ন কৌশলও দেখেন। পরে বঙ্গবন্ধু কমপ্লেক্সের বিভিন্ন অংশ তাকে ঘুরিয়ে দেখানো হয়।

প্রধানমন্ত্রী সকালে যশোরে বিমান ঘাঁটিতে পৌঁছালে বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল মাসিহুজ্জামান সেরনিয়াবাত, ঘাঁটি বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমানের অধিনায়ক এবং বিমান বাহিনী একাডেমির কমান্ড্যান্ট তাকে স্বাগত জানান।

মন্ত্রিসভার সদস্য, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, তিন বাহিনী প্রধান, সংসদ সদস্য এবং বিমান বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

আরো সংবাদ