আজ - রবিবার, ২৪শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৯ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২২শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি, (হেমন্তকাল), সময় - সকাল ১০:০৮

ইআইইউ প্রতিবেদন: বড় জয় পাবে আওয়ামী লীগ

ডেস্ক রিপোর্ট :  আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ পার্লামেন্টের অধিকাংশ আসনে জয় লাভ করবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে লন্ডন ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ইকনোমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (ইআইইউ)। ৪ ডিসেম্বর প্রকাশিত তাদের বাংলাদেশ বিষয়ক প্রতিবেদন অনুসারে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বড় অবদান রাখার জন্য বাংলাদেশের মানুষ আবারও আওয়ামী লীগকে নির্বাচিত করবে। সেখানে দেওয়া পূর্বাভাসে আরও বলা হয়, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক এই অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে এবং ২০১৮-১৯ থেকে ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি বেড়ে গড়ে ৭.৭ করে থাকবে। ব্যক্তিগত উদ্যোগ এবং সার্বিক বিনিয়োগে স্থিতাবস্থা থাকবে বলেও তারা জানায়।এই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় থাকবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। স্থানীয় বেশ কিছু মতামত জরিপে শেখ হাসিনা এখন পর্যন্ত দেশের সবচাইতে জনপ্রিয় নেতা।সেখানে আরও উল্লেখ করা হয়, আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে অসাধারণ অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সামাজিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি নির্বাচনী প্রচারণায় বিরোধী দলের পিছিয়ে থাকার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে এই প্রতিবেদনে। আর সে কারণেই বিএনপি বা আরও বড় পরিসরে দেখলে ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচনে বড় ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ হচ্ছে।এ প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং ব্যক্তিগত খাতে উদ্যোক্তা সৃষ্টি ও অর্থনীতিতে তাদের ভূমিকা রাখার ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের আরও একবার নির্বাচনে জয়ী হওয়া আবশ্যক। এ নির্বাচনে জয়ের মাধ্যমে কৌশলগতভাবে বঙ্গোপসাগরের গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে থাকা বাংলাদেশ তার নিকটতম প্রতিবেশী ভারত, চীন ও জাপানের সহায়তায় অর্থনৈতিকভাবে আরও সমৃদ্ধ হয়ে উঠবে। কিন্তু বাংলাদেশের সঙ্গে মিয়ানমারের সম্পর্ক উন্নয়নের সম্ভাবনা তেমন নেই। রোহিঙ্গা ইস্যুর কারণে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের এই টানপোড়েন আরও চলবে বলে উল্লেখ করা হয়। ইকনোমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (ইআইইউ) প্রসঙ্গে:লন্ডন ভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইকনোমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (ইআইইউ) বিশ্বব্যাপী জরিপ কার্যক্রম পরিচালনা করে। বিগত ৬০ বছর ধরে প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন দেশের ব্যবসার উন্নয়ন, অর্থনীতি এবং রাজনীতির ট্রেন্ড, সরকারের নীতি নির্ধারণ এবং কর্পোরেট প্রাকটিসের বিষয়ে কাজ করে যাচ্ছে। চারভাবে ইআইইউ তাদের তথ্য প্রকাশ করে থাকে: এর ডিজিটাল পোর্টফলিও যেখানে নিয়মিত নতুন পর্যালোচনা তুলে ধরা হয়; গ্রাহকদের জন্য প্রিন্ট করা নিউজ লেটারের মাধ্যমে যেখানে বার্ষিক কাজের বিবরণী থাকে; গবেষণা প্রতিবেদনের মাধ্যমে এবং সেমিনার ও প্রেজেন্টেশন আয়োজনের মাধ্যমে। এ‌ই প্রতিষ্ঠানটি ইকোনমিস্ট গ্রুপের সদস্য।ইকনোমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের প্রতিবেদনের মতই ওয়াশিংটনভিত্তিক রিপাবলিকান ইন্সটিটিউটের প্রতিবেদনে এগিয়ে রাখা হয় বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে। এ বছরের ১০ এপ্রিল থেকে ২১ মে’র মধ্যে পরিচালিত এই জরিপে বলা হয়, দেশের ৬৬ ভাগ মানুষ সমর্থন জানিয়েছে শেখ হাসিনার প্রতি এবং ৬৪ ভাগ জনগণ এখনও সমর্থন করছে আওয়ামী লীগকে। এতে বলা হয়, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের অর্থনীতি আশানুরূপভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। ৬২ শতাংশ নাগরিক মনে করেন অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রায় দেশ সঠিক পথে আছে। অর্থনৈতিক উন্নয়নে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন ৬৯ ভাগ নাগরিক। আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর ইনসাইট অ্যান্ড সার্ভের এক গবেষণা প্রতিবেদনে ৩০ আগস্ট এ তথ্য জানানো হয়েছে।গবেষণা প্রতিবেদনের নোটে বলা হয়েছে, জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে বর্তমান সরকার। আর সে কারণেই ৬৮ ভাগ নাগরিক জননিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে সন্তুষ্ট। এর মধ্যে ৫৭ ভাগ মনে করছেন, সামনে জননিরাপত্তা ব্যবস্থার আরও উন্নতি হবে। সরকারি বিভিন্ন সেবা প্রদানের ক্ষেত্রেও জন সন্তুষ্টির পরিমাণ বেড়েছে। জনস্বাস্থ্য খাতে সরকারি সেবায় সন্তুষ্ট ৬৭ ভাগ মানুষ এবং বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করার বিষয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন ৬৪ ভাগ নাগরিক। এ ছাড়া সড়ক ও ব্রিজের উন্নয়নের প্রভাব নিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন ৬১ ভাগ নাগরিক।এর আগে ২০১৭ সালের মাঝামাঝি সময়ে করা ইন্ডিপেন্ডেন্ট এবং রিসার্চ ডেভলোপমেন্ট সেন্টার (আরডিসি)-র গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয় বর্তমান সরকারের অধীনে দেশ সঠিক পথে এগিয়ে যাচ্ছে এবং জীবনমানের উন্নয়ন হচ্ছে বলে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন দেশের অধিকাংশ নাগরিক। এই জরিপে অংশ নেওয়া ৬৪ ভাগ উত্তরদাতা তাদের জীবনমানের উন্নয়ন ঘটেছে বলে মত দিয়েছেন। পূর্ববর্তী জরিপ গবেষণায় ব্যবহৃত ২৫ হাজার বাংলাদেশি নাগরিকের ‘টেলিফোন ব্যাংক’ থেকে এই ১০০৫ জনের সঙ্গে টেলিফোন-ইন্টারভিউয়ের মাধ্যমে জরিপ পরিচলানা করা হয়।এশিয়ান ডেভলপমেন্ট ব্যাংকের রিপোর্ট অনুসারে ২০১৬ সালে বাংলাদেশ ৭ দশমিক ১ ভাগ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে, যা বিগত ৩০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। বিগত ৬ বছর ধরে বাংলাদেশ শতকরা ৬ ভাগের বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জন করে আসছে।এই গবেষণায় অংশ নেওয়া বাংলাদেশের নাগরিকদের কাছে জানতে চাওয়া হয়- দেশ সঠিক পথে এগিয়ে যাচ্ছে কিনা? এর উত্তরে ৬৮ দশমিক ৬ ভাগ উত্তরদাতা জানিয়েছে, দেশ সঠিক পথে এগিয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে, ১৩ দশমিক ৭ ভাগ মত দিয়েছেন, দেশ সঠিক পথে এগিয়ে যাচ্ছে না।এর আগে ২০১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইন্সটিটিউটের (আইআরআই) চালানো জনমত জরিপে প্রায় কাছাকাছি ফল পাওয়া যায়। ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে আইআরআই জরিপের ফল প্রকাশ করা হয়। সেখানে ৬৪ ভাগ উত্তরদাতা জানিয়েছিল, দেশ সঠিক পথে এগিয়ে যাচ্ছে। ২০১৫ সালে ব্রিটিশ কাউন্সিল, অ্যাকশন এইড বাংলাদেশ ও ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ (ইউল্যাব) সম্মেলিতভাবে একটি গবেষণা পরিচালনা করে। সেখান থেকে জানা যায়, যুব সমাজের ৭৫ ভাগ মনে করে, আগামী ১৫ বছরের মধ্যে দেশ আরও সমৃদ্ধশালী হবে। তাদের ৬০ ভাগ মনে করে দেশ সঠিক পথে এগিয়ে যাচ্ছে।ইন্ডিপেন্ডেন্ট-আরডিসি পরিচালিত গবেষণা অনুসারে, বাংলাদেশের সবচাইতে বিশ্বস্ত ও জনপ্রিয় নেতা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ৭২ দশমিক ৩ ভাগ উত্তরদাতা শেখ হাসিনা সম্পর্কে ভাল মত প্রদান করেছেন, পক্ষান্তরে বিএনপি’র দলীয় প্রধান বেগম খালেদা জিয়ার পক্ষে ভাল মত প্রদান করেছেন মাত্র ২৬ দশমিক ৬ ভাগ উত্তরদাতা। এদিকে, ২০১৫ সালে প্রকাশিত আইআরআই এর পৃথক এক জরিপ অনুসারে ৬৭ ভাগ মানুষ আস্থা রাখেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে।এদিকে যুব সমাজের মধ্যে বিএনপির তুলনায় আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা এখনও অনেক বেশি। বিশেষত ১৮ থেকে ২৯ বছর বয়সীদের ৫৫ দশমিক ৪ ভাগ উত্তরদাতা আওয়ামী লীগের পক্ষে ‘ভাল’ মত প্রকাশ করেছেন। অন্যদিকে বিএনপির পক্ষে ‘ভাল’ মত প্রদান করেছেন মাত্র ২০ দশমিক ৮ ভাগ। এই বয়সীদের মাত্র ২ দশমিক ৫ ভাগ আওয়ামী লীগ সম্পর্কে ‘খারাপ’ মত প্রকাশ করেছেন, পক্ষান্তরে বিএনপির ক্ষেত্রে ‘খারাপ’ মত প্রকাশ করেছেন ১৩.৮ ভাগ উত্তরদাতা। এই জরিপ অনুসারে, কাকে ভোট দেবেন জানতে চাইলে ৩৫ দশমিক ৮ ভাগ মানুষ আওয়ামী লীগের পক্ষে ভোট দেবে বলে জানায়, অন্যদিকে বিএনপির পক্ষে সমর্থন জানায় মাত্র ৩ দশমিক ৪ ভাগ যুবক।শুধু তাই নয়, বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব মোকাবিলায় বিশেষ করে গ্রিন হাউস গ্যাস নিঃসরণের ক্ষেত্রে কার্যকরী ভূমিকা পালনে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ এগিয়ে রয়েছে। এক্ষেত্রে সূচকে ভারতসহ অন্যান্য দেশের অবদান যেখানে ৩০-এর কোটায়, সেখানে বাংলাদেশের অবদান ৫০-এর ওপরে। ‘জলবায়ু পরিবর্তন প্রশমনে স্বপ্রণোদিত অঙ্গীকার ও প্রতিপালন’ শীর্ষক ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়।জলবায়ুর পাশাপাশি দেশের অভ্যন্তরে দুর্নীতি মুকাবিলায় দুই ধাপ এগিয়েছে বাংলাদেশ। জার্মানির বার্লিন ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যশনালের জরিপে ২০১৭ সালে দুর্নীতি হ্রাসে দুই ধাপ এগিয়েছে বাংলাদেশ। এ বছর বাংলাদেশের অবস্থান ১৪৩ তম। বাংলাদেশ ১০০ এর মধ্যে এ বছর স্কোর করেছে ২৮। ২০১৬ সালে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৪৫ তম, স্কোর ছিল ২৬। ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ সালে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়।অন্যদিকে, লিঙ্গ সমতা সূচকে এশিয়ায় বর্তমানে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। বিশ্ব লিঙ্গ সমতা সূচকে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে এশিয়ার শীর্ষ ১০ দেশে বাংলাদেশ ছাড়া ঠাঁই পেয়েছে মিয়ানমার। ৪ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের এক আর্টিকেলে এই তথ্য জানানো হয়। এর আগে ২০১৭ সালের ২ সেপ্টেম্বর বিশ্ব লিঙ্গ বৈষম্য সূচকে ২৫ ধাপ উন্নতি করে ৭২তম অবস্থান থেকে ৪৭তম অবস্থানে চলে এসে বিশ্বকে অবাক করে দেয় বাংলাদেশ। লিঙ্গ সমতা সূচকে বাংলাদেশের স্কোর শূন্য দশমিক ৭১৯ (০.৭১৯)। যা দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সর্বোচ্চ। ১০৬ স্কোর নিয়ে দক্ষিণ এশিয়ায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে মালদ্বীপ।ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বে দ্রুততম সময়ে লিঙ্গ বৈষম্য হ্রাসে অভাবনীয় সাফল্য দেখিয়েছে বাংলাদেশ। এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে লিঙ্গ সমতায় দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা বাংলাদেশ তার লিঙ্গ বৈষম্যে ৭২ ভাগ নিরসন করতে সক্ষম হয়েছে। অর্থনৈতিক সুবিধা লাভ, কর্মক্ষেত্রে অংশগ্রহণ এবং আয়ের সম সুযোগ লাভ থেকে শুরু করে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে নারীর অংশগ্রহণ এবং নেতৃত্ব প্রদানে দারুণভাবে এগিয়ে আছে বাংলাদেশ।

আরো সংবাদ