যশোর সদর উপজেলার ভাতুড়িয়া গ্রামের হরিনার বিলে মৎস্য ব্যবসায়ী ইমামুল ইসলাম ওরফে ইমরোজ হত্যার ঘটনায় আটক দুজনকে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। হত্যাকান্ডের দিন ২৪ জুলাই রাতে এদেরকে চাঁচড়া এলাকা থেকে আটক করা হয়। এদের আটকের কথা বিশেষ কারনে গোপন রেখেছিল পুলিশ ।
আটককৃতরা হলেন- ভাতুড়িয়া দাড়িপাড়ার আনুর বাড়ির ভাড়াটিয়া আযমের ছেলে মোস্তফা ওরফে মোস্ত (৩০) ও ঝাউদিয়া গ্রামের হাফিজুর রহমানের ছেলে সজল (২২)।
এদিকে মাছের ঘেরে যে দুই ছেলে মেয়েকে নিয়ে হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটে মনিরামপুর উপজেলার দুর্গাপুর গ্রামের আফতাব আলীর ছেলে আলা উদ্দিন (২৯) ও শহরতলীর চাঁচড়া চেকপোস্টের জসিম উদ্দিনের মেয়ে সিনথিয়া আক্তার টুকটুকি (১৯), ইমামুল ইসলাম ওরফে ইমরোজকে গুলি করে হত্যার ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি মূলক জবান বন্দি দিয়েছে। শুক্রবার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট সম্পা বসুর দ্বিতীয় আদালতে এ দুজন স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি দেয়।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কোতয়ালি থানার ওসি তদন্ত সমীর কুমার সরকার বলেন, আলাউদ্দিন ও সিনথিয়া আক্তার টুকটুকি স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি দিতে সম্মত হওয়ায় শুক্রবার তাদেরকে আদালতে হাজির করা হয়।
মামলার এজাহারে বাদি ভাতুড়িয়া নারায়নপুরের মৃত ওসমান আলী মোড়লের ছেলে নুরইসলাম মহুরি (৫৪) বলেছেন, ২৪ জুলাই বেলা সাড়ে ১২ টায় আলাউদ্দিন, সিনথিয়া আক্তার টুকটুকিকে নিয়ে প্রাইভেটকার যোগে আমার ঘেরের মধ্যে গেলে ছোট ছেলে ইসরাজুল ইসলাম জিজ্ঞাস করে তারা কেন ঘেরের মধ্যে এসেছে। তারা বলে আমরা বিবাহিত এখানে ঘুরতে এসছে।
কথাকাটাকাটির এক পর্যায়ে ইসরাজুলের সাথে আলাউদ্দিনের হাতাহাতি হয়। এসময় ইসরাজুল, আমার ছেলে ইমরোজকে ঘেরে ডাকে। দুপুর আনুমানিক পৌনে একটার দিকে বাহাদুরপুরের রহমানের ছেলে আলী, চাঁচড়া ডাল মিলের আজিজুর রহমানের ছেলে রিংকু, চাঁচড়া মধ্যপাড়ার ভোগোর ছেলে স্বাধীন, চাঁচড়া গোলদারপাড়ার কানা খোকনের ছেলে শাহিন, ভাতুড়িয়া দাইপাড়ার শাজাহনের ছেলে রহিম, চাঁচড়া গোলদার পাড়ার বাবুর ছেলে রনিসহ অজ্ঞাত ৫/৬ জন আমার ঘেরে যেয়ে আলাউদ্দিন ও সিনথিয়া আক্তার টুকটুকিকে ভাতুড়িয়া দাড়িপাড়ার মৃত দেলোয়ার হোসেনের ছেলে সেলিম রেজা পান্নুর অফিসে নিয়ে যেতে চাইলে আমার দুই ছেলে তাদেরকে বাধা দেয়। এতে তারা মারপিট করলে আমার দুই ছেলে তাদেরকে পাল্টা মার দিলে আলি ও মোস্ত হুমকি দিয়ে বলে তোদেরকে দেখে নেবো বলে চলে যায়।
সেলিম রেজা পান্নুর নির্দেশে বেলা দেড়টার দিকে মোস্ত, আলী, রিংকু, স্বাধীন, রহিম, শাহিন, রনি, নাজমুল, ও তানভীর পরস্পর যোগসাজসে তিন মোটরসাইকেল যোগে আমার মাছের ঘেরে পাশে অবস্থানরত হাফিজুরের ছেলে সজল ও ইয়াসিন বিশ্বাসের ছেলে আবু হেনা মোস্তফা কামাল সাগরসহ আমার মাছের ঘেরের পশ্চিম পাশের গেটের সামনে এসে সেলিম রেজা পান্নুর নির্দেশে মোস্ত ও আলী আমার বড় ছেলে ইমরোজকে জাপ্টাইয়া ধরে। রনি ধারালো চাকু দিয়ে মাজার পিছনে রক্তাত্ত জখম করে। আকিবুর রহমান আগ্নেয় অস্ত্র দিয়ে খুন করার উদ্দেশ্যে ইমরোজের বাম বুকে গুলি করে।
রহিম, শাহিন, নাজমুল, তানভির ও আবু হেনা মোস্তফা কামাল, সাগর, ইমরোজের শরীরের বিভিন্ন স্থানে এলাপাতাড়ি মারপিট করে জখম করে। ছোট ছেলে ইসরাজুল এগিয়ে গেলে আলী ও স্বাধীন তাকে লক্ষ করে গুলি করলে গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। ইমরোজকে রক্তাত্ত অবস্থায় ইসরাজুল ও ভাইপো রাকিব ২৫০ শয্যার যশোর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে বেলা ২ টার সময় ভর্তি করে। চিকিৎসাধীন অবস্থায় পৌনে তিনটায় ইমরোজ মারা যায়।
এঘটনায় ১৩ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরো ৮/১০ জনকে আসামি করে মামলা করা হয়।
মামলা নং ৫৬। তারিখঃ ২৫.০৭.১৯। ধারা ঃ ৩০২/৩০৭/৫০৬/১০৯/৩৪ পেনাল কোড।