আন্তর্জাতিক ডেস্ক : মার্কিন হামলায় ইরানের বিপ্লবী গার্ডসের কমান্ডার কাসেম সোলাইমানি নিহত হওয়ার পর থেকে ইরান ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মাঝে উত্তেজনা বিরাজ করছে। ইরান এরই মধ্যে এ ঘটনার জন্য ‘চরম প্রতিশোধ’ নেয়ার কথা বলেছে।
শুক্রবার সকালে নিজের টুইটারে দেয়া এক শোকবার্তায় এই হামলার বদলা নেয়ার অঙ্গীকার করে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা খামেনি বলেন, ‘যেসব অপরাধী তাদের নোংরা হাত দিয়ে গতরাতে লেঃ জেনারেল সোলেইমানির রক্ত ঝরিয়েছে তাদের জন্য ভয়ঙ্কর প্রতিশোধ অপেক্ষা করছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘বিশ্বের কুচক্রি ও শয়তানি শক্তিগুলোর বিরুদ্ধে বহু বছর ধরে একনিষ্ঠ ও বীরোচিত জিহাদ চালিয়ে গেছেন জেনারেল সোলেইমানি। তিনি দীর্ঘদিন ধরে শাহাদাতের অমীয় সুধা পান করার যে আকাঙ্ক্ষা পোষণ করতেন শেষ পর্যন্ত সেই উচ্চ মর্যাদায় তিনি অধিষ্টিত হয়েছেন। তবে তার রক্ত ঝরেছে মানবতার সবচেয়ে বড় দুশমন ও সবচেয়ে জালিম শাসক যুক্তরাষ্ট্রের হাতে।’
এমতাবস্থায় ইরান যদি হত্যার প্রতিশোধ না নেয় তাহলে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞাগুলো প্রত্যাহারের পাশাপাশি দেশটিকে সহায়তাও প্রস্তাব দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ইরানের সাবেক এক কূটনীতিকের বরাতে তুরস্কভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ডেইলি সাবাহ এ খবর জানিয়েছে।
আমির আল-মুসাভি নামে ওই কূটনীতিক শনিবার ভিডিও সাক্ষাৎকারে বলেছেন, একজন আরব মধ্যস্থতাকারীর মাধ্যমে আমাকে অনুরোধ করা হয়েছে যে, যুক্তরাষ্ট্র যে অপরাধ করেছে তার জন্য ইরান যেন কোনো প্রতিশোধ না নেয়। এর বিনিময়ে তারা ইরানের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেবে।
ইরানের ওপর থেকে যুক্তরাষ্ট্র সবধরণের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার ও অর্থনৈতিক নিশ্চয়তার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ওই বার্তা পাঠানো হয়েছে বলে জানান তিনি।
আমির আল-মুসাভি বলেন, এ মুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্র শুধুমাত্র ইরানের ক্ষোভ নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে। আমি মনে করি নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের প্রস্তাব ইরানের ক্ষোভ প্রশমিত করবে না, কারণ যুক্তরাষ্ট্র এ পর্যন্ত যত প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তার সবই মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে।
এদিকে উত্তেজনার মাঝেই শুক্রবার লন্ডনে অশোধিত তেলের আন্তর্জাতিক দাম ব্যারেল প্রতি ২ দশমিক ১০ ডলার বেড়ে ৬৮ দশমিক ৩৬ ডলারে উঠে যায়। তবে এক পর্যায়ে দাম বৃদ্ধি পেয়েছিল প্রায় ৩ ডলার। নিউইয়র্ক মার্কেন্টাইল এক্সচেঞ্জে প্রতি ব্যারেল অশোধিত তেলের দাম ১ দশমিক ৭৯ ডলার বেড়ে ৬২ দশমিক ৯৭ ডলার হয়েছে।
তেল উৎপাদনকারী মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার পাশাপাশি নিউজিল্যান্ডে তেলের দাম বেড়েছে এবং তাইওয়ানে কিছুটা পরিবর্তন এসেছে।
বিবিসির বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, যুদ্ধের মতো খারাপ কিছু ঘটলে তেলের বাজার বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা ব্যাপক। ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞার কারণে দেশটির তেল উৎপাদন এমনিতে ব্যাহত হচ্ছে। অন্যদিকে ইউএস এনার্জি ইনফরমেশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের তথ্যমতে, ২০১৮ সালে বিশ্বে ব্যবহৃত ২১ শতাংশ তেল হরমুজ প্রণালি দিয়ে পরিবাহিত হয়েছে, যার উত্তর উপকূলে ইরানের অবস্থান। ইরান এই প্রণালি দিয়ে তেল পরিবহনে বাধা দিলে পরিস্থিতি মারাত্মক হতে পারে। পাশাপাশি তেল উৎপাদকদের ডিপোতে ইরান হামলাও করতে পারে।
তবে সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের নিজস্ব পাইপলাইন আছে। এটি দিয়ে তারা কিছু পরিমাণ তেল বাইপাস করতে পারে তা ঠিক, কিন্তু হরমুজ প্রণালি দিয়ে যত তেল পরিবাহিত হয়, সেই পরিমাণ তেল এই পাইপলাইন দিয়ে পরিবহন করার সক্ষমতা তাদের নেই।
ধারণা করা হয়, গত বছর সৌদি আরবের আরামকোর ডিপোতে ইরানই হামলা চালিয়েছিল। যদিও ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীরা এই হামলার দায়িত্ব স্বীকার করেছিল। এদের পেছনে যে আবার ইরানের সমর্থন আছে, তাও সবাই জানে।
প্রসঙ্গত, গত শুক্রবার (৩ জানুয়ারি) ভোরে বাগদাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে মার্কিন বিমান বাহিনী একপাক্ষিক হামলা চালিয়ে ইরানের বিপ্লবী গার্ডের অভিজাত শাখা কুদস্ বাহিনীর প্রধান মেজর জেনারেল কাসেম সোলাইমানিকে হত্যার পর মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। কাসেম সোলাইমানি ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির সবচেয়ে আস্থাভাজন ছিলেন। দেশের সীমানার বাইরে লেবানন, ফিলিস্তিনসহ গোটা মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের যে সামরিক পরিসর বেড়েছে, তার পেছনের কারিগর ছিলেন সোলাইমানি।
যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েলসহ পশ্চিমারা ইরানকে দমিয়ে রাখতে চাইলেও ‘শত্রুর চোখে চোখ রেখে লড়াই’ করার নীতিতে ইরানকে ‘প্রতিরোধ যুদ্ধ’ শিখিয়েছেন তিনিই। এজন্য সোলাইমানি ইরানের ‘জাতীয় বীর’ হয়ে উঠেছিলেন।
অন্যদিকে মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠেছিলেন যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েলসহ তেহরান বিরোধী পক্ষের।