আজ - রবিবার, ২৪শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৯ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২২শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি, (হেমন্তকাল), সময় - রাত ৮:৩৭

ঈদে ব্যক্তিগত গাড়ীতে যাওয়া যাবে বাড়ী : র্যাব প্রধান।

স্টাফ রিপোর্টার।।  অব্যাহতভাবে বাড়তে থাকা করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এবং ঘূর্ণিঝড় আম্পানের ছোবল—মহামারি ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যেই অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে মুসলমানদের সবচেয়ে বড় উৎসব ঈদুল ফিতর। চাঁদ দেখা সাপেক্ষে রোববার বা সোমবার ঈদ হতে পারে বলে জানিয়েছে ইসলামিক ফাউন্ডেশন।

সামাজিক দূরত্ব রেখে এবার ঈদ উদযাপন করা হবে বলে বেনারকে জানিয়েছেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের (ইফা) মহাপরিচালক আনিস মাহমুদ।

তিনি বলেন, “করোনাভাইরাস মহামারির কারণে এবার ঈদগাহ বা খোলা জায়গার পরিবর্তে বাড়ির কাছে মসজিদে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঈদের নামাজ পড়তে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এক এলাকার মানুষ অন্য এলাকায় ঈদের জামাতে অংশ নিতে পারবে না।”

“পাশাপাশি, মসজিদে ঈদ জামাত আয়োজনের ক্ষেত্রে সুরক্ষার ব্যবস্থা এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে বেশ কিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এসব নির্দেশনা না মানলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে,” বলেন তিনি।

এবার জাতীয় ঈদগাহে এবং বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ ঈদগাহ ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ময়দানে ঈদ জামাত হচ্ছে না। তবে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে বরাবরের মতোই পাঁচটি জামায়াত অনুষ্ঠিত হবে বলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে ইসলামিক ফাউন্ডেশন।

এদিকে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে গণপরিবহন বন্ধ রেখে এবার সবাইকে নিজ নিজ অবস্থানে থেকে ঈদ পালেনর অনুরোধ জানায় সরকার। তবে আকস্মিকভাবে সরকারের পক্ষ থেকে শুক্রবার ব্যক্তিগত বাহনে গ্রামের বাড়ি যাওয়ার ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়ার ঘোষণা আসে।

এই সিদ্ধান্ত জানতে পেরে ঢাকা ছাড়ছে হাজার হাজার মানুষ।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পুরোপুরি লক ডাউন না থাকলেও চলাচলে কড়াকড়িতে করোনার সংক্রমণ কিছুটা নিয়ন্ত্রণে ছিল। কিন্তু এই পরিস্থিতিতে মানুষ গ্রাম ও শহরে আসা যাওয়ার ফলে সংক্রমণ ভয়াবহ আকারে বাড়তে পারে।

চিকিৎসা নৃবিজ্ঞানী আতিক আহসান বেনারকে বলেন, “আজ দেশে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৩০ হাজার পার হলো। শেষের এক সপ্তাহেই আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে অন্তত ১০ হাজার। আর এখন ঈদযাত্রাসহ সবকিছুতে যেভাবে ছাড় চলছে, তাতে দেশে আক্রান্তের সংখ্যা খুব দ্রুত বাড়বে।”

তিনি বলেন, সাধারণত লক ডাউন এবং মানুষকে আইসোলেশনে রাখার অন্যতম কারণ, যাতে একসাথে অনেক মানুষ আক্রান্ত না হয় এবং হাসপাতালগুলো প্রয়োজনীয় সেবা দিতে পারে।”

“বাংলাদেশে হাসপাতালে শয্যা আছে এক লক্ষ। অথচ ১৬ কোটি জনসংখ্যার বড় একটি অংশ যদি আক্রান্ত হয়ে পড়ে তাহলে তারা চিকিৎসাই পাবে না। এ জন্য আমাদের আরো বেশি সচেতন থাকার দরকার ছিল,” মনে করেন আতিক আহসান।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে বাংলাদেশে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ২৪ জন, যা একদিনে দেশে করোনায় মৃত্যুর সর্বোচ্চ রেকর্ড। এই সময়ে নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন এক হাজার ৬৯৪ জন।

এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে করোনায় মোট মৃত্যুর সংখ্যা ৪৩২ জন, মোট আক্রান্ত ৩০ হাজার ২০৫ জন।

যুক্তরাষ্ট্রের জন হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাবে, শুক্রবার পর্যন্ত সারা বিশ্বে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৫১ লাখ ২৮ হাজারের বেশি মানুষ, মারা গেছেন তিন লাখ ৩৫ হাজারের বেশি।

শুক্রবার শনাক্ত ৮ জনসহ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোহিঙ্গার মোট সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২১ জনে। সব মিলে কক্সবাজারে মোট আক্রান্তের সংখ্যা এখন ৩০১ বলে বেনারকে জানিয়েছেন কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. অনুপম বড়ুয়া।

যেসব শর্তে মসজিদে ঈদের জামাত

করোনাভাইরাস মহামারির কারণে ঈদগাহ বা খোলা জায়গায় ঈদের নামাজ না পড়ার নির্দেশনার পাশাপাশি মসজিদে ঈদের নামাজের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি মানার কয়েকটি শর্ত দিয়েছে সরকার।

ঈদগাহ বা খোলা জায়গার পরিবর্তে বাড়ির কাছে মসজিদে ঈদের নামাজ পড়তে হবে জানিয়ে বৃহস্পতিবার ধর্ম মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, জামাতের সময় মসজিদে কার্পেট বিছানো যাবে না এবং নামাজের আগে সম্পূর্ণ মসজিদ জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে।

এছাড়া মসজিদের প্রবেশপথে হ্যান্ড স্যানিটাইজার অথবা হাত ধোয়ার ব্যবস্থাসহ সবান-পানি রাখতে হবে এবং নামাজে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে এক কাতার ফাঁক রেখে অন্য কাতার তৈরি করতে হবে।

ব্যক্তি পর্যায়ে সবাইকে বাড়ি থেকে ওজু করে, মাস্ক পরে নিজের জায়নামাজ নিয়ে মসজিদে যেতে হবে জানিয়ে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মসজিদে সংরক্ষিত জায়নামাজ বা টুপি ব্যবহার করা যাবে না।

শিশু, বয়োবৃদ্ধ, অসুস্থ এবং অসুস্থদের সেবায় নিয়োজিতদের জামাতে অংশ না নেবার কথা বলে ধর্মমন্ত্রণালয় জানায়, সংক্রমণ রোধে কোলাকুলি এবং হাত মেলানো পরিহার করাসহ সব ধরনের স্বাস্থ্য ও প্রশাসনিক নির্দেশনা অবশ্যই অনুসরণ করতে হবে।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে গণপরিবহন বন্ধ রেখে সম্প্রতি সবাইকে যার যার অবস্থানে থেকে ঈদ করার অনুরোধ জানায় সরকার। তবে শুক্রবার থেকে ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে গ্রামে যেতে দেওয়া হচ্ছে।

র‌্যাবের মহাপরিচালক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেছেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে গ্রামের বাড়িতে ঈদ উদযাপন করতে যাওয়া যাবে। তবে কোনো ধরনের গণপরিবহন ব্যবহার করা যাবে না।

শুক্রবার র‌্যাব সদরদপ্তর থেকে ভিডিও কনফারেন্সে অংশ নিয়ে তিনি এ কথা বলেন।

“সরকারের এই সিদ্ধান্ত আমরা বাস্তবায়ন করব,” মন্তব্য করে র‌্যাব মহাপরিচালক বলেন, “যদি ব্যক্তিগত গাড়িতে কেউ পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ভ্রমণ করেন, তাহলে তিনি পরিবারের সঙ্গেই থাকছেন।”

তবে এই খবরে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন নিম্নবিত্তের মানুষ, বিশেষ করে যাদের দূরের যাত্রা করার মতো ব্যক্তিগত যানবাহন নেই। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজর এড়িয়ে ছোট ছোট ট্রলি বা ট্রাকে করেও সাধারণ মানুষ ঢাকা ছাড়ছেন।

ঢাকায় আসা সবজির ট্রাকে নাটোর ফিরছিলেন সাদেকুর রহমান। তিনি বেনারকে বলেন, “যারা ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে বাড়ি যাচ্ছেন, তারাও করোনা নিয়ে যেতে পারেন। সুতরাং শুধু গণপরিবহণ বন্ধ রাখা ঠিক হয়নি। এতে গরিবের কষ্ট বেড়েছে।”

গণপরিবহন বন্ধ থাকায় ট্রাকে করে বাড়ি যাওয়ার পথে বুধবার রাতে গাইবান্ধায় ঝড়ের মধ্যে ট্রাক উল্টে ১৩ জনের মৃত্যু হয়।

উল্লেখ্য, ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনাভাইরাস আক্রান্ত শনাক্ত হওয়ার পরে প্রথম দফায় ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত সব অফিস-আদালত বন্ধ ঘোষণা করে সরকার। পাশাপাশি সারা দেশে সব ধরনের যানবাহন চলাচলেও নিষেধাজ্ঞা জারি হয়।

পরে কয়েক ধাপে সেই ছুটি ৩০ মে পর্যন্ত বাড়ানো হয়। এর মধ্যে পোশাক কারখানা, বিপণি বিতান, দোকানপাট ও মসজিদের ক্ষেত্রে কিছু বিধি-নিষেধ তুলে দেওয়া হলেও নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকে আন্তজেলা বাস ও গণপরিবহনের ক্ষেত্রে।

আরো সংবাদ