নিজস্ব প্রতিবেদক: উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ও দলীয় প্রার্থীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া নেতাদের কারণদর্শানো (শোকজ) নোটিশ আগষ্ট মাস তথা শোকের মাসে যাচ্ছে না। অভিযুক্তদের ব্যাপারে আরও খোঁজ-খবর নেওয়া ও চলমান বন্যা পরিস্থিতির কারণে নোটিশ পাঠাতে কিছুদিন দেরি হতে পারে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা। তবে শোকের মাসের পরপরই বিদ্রোহীদের শোকজ পাঠানো হবে-এমনটাই খানজাহান আলী 24/7 নিউজকে নিশ্চিত করেছে আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড।
জানা যায়, চলতি বছর অনুষ্ঠিত উপজেলা নির্বাচনে অনেক জায়গায় চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের মনোনীত দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে অংশ নেয়। দলের প্রতীক নৌকার প্রার্থীর বিরুদ্ধে যারা বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছিলেন বিভিন্ন জায়াগায় তাদের আওয়ামী লীগের স্থানীয় সংসদ সদস্য ও দলীয় নেতারাও সমর্থন দেন। দুই শতাধিক নেতার বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ পাওয়া যায়। এর মধ্যে প্রায় ৬০ জন দলীয় এমপি। যাদের মধ্যে বর্তমান ও সাবেক মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীও রয়েছেন। এরা বিদ্রোহী প্রার্থীদের সমর্থন দিয়েছেন।
আওয়ামী লীগের সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য বলেন, বর্তমানে সারা দেশে বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় দলীয়ভাবে কাজ চলছে। যাদের বিরুদ্ধে কারণদর্শানো নোটিশ দেওয়া হবে তাদের অনেকেই দলের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে আছেন। এখন নোটিশ দেওয়া হলে বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলার কার্যক্রম ব্যাহত হতে পারে। এছাড়া সামনে শোকের মাস আগস্ট। মাসব্যাপী বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুবার্ষিকীর কর্মসূচি পালিত হবে। শোকের মাস আগস্টে দলের কারও বিরুদ্ধে কারণদর্শানো নোটিশ দেওয়ার সম্ভাবনা নেই।
এর আগে ২০ জুলাই এক সংবাদ সম্মেলনে দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘উপজেলা নির্বাচনে দলের যারা বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছিলেন ও যারা বিদ্রোহের মদদ দিয়েছিলেন তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ২০০টির মতো অভিযোগ এসেছে। অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখা হবে ২৭ জুলাই পর্যন্ত। এরপর ২৮ জুলাই থেকে কারণদর্শানো নোটিশ যাবে।’ কিন্তু গত ২৮ জুলাই থেকে বিদ্রোহীদের কারণদর্শানো নোটিশ পাঠানোর কথা থাকলেও এদিন কোনো নোটিশ পাঠানো হয়নি। তার আগে গত ১২ জুলাই দলের কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় উপজেলা নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী ও নৌকার প্রার্থীর যারা বিরোধিতা করেছিলেন তাদের কারণদর্শানোর নোটিশ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
আজ দুপুরে ওবায়দুল কাদের বলেন, যারা বিদ্রোহ করেছে ও মদদ দিয়েছে তাদের ‘শো কজ’ এবং দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হবে। যাচাই-বাছাই করে এসব ব্যবস্থা নেয়া হবে। বিষয়গুলো প্রক্রিয়াধীন আছে।
এবিষয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, আমাদের প্রক্রিয়া চলছে। প্রক্রিয়া শেষ হলেই চিঠি দেয়া হবে। শোকের মাসে শোকজ যাইতে পারে।
একই প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের আরেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান বলেন, শোকের মাস আমাদের জন্য একটা বড় ব্যাপার। এটা আমাদের আবেগের সাথে জড়িত। বন্য কবলিত বিভিন্ন এলাকায় আমাদের নেতৃবৃন্দরা ব্যস্ত আছে। সারা দেশে মশার একটা উপদ্রুব। এই ব্যাপারেও পার্টির নেতাকর্মীরা তারা তাদের জায়গা থেকে জন সচেতনা মূলক কাজের জন্য ব্যস্ত। এই নিয়েও আমাদের কর্মসূচি আছে। সব কিছু মিলিয়ে শোকজের ব্যাপারটি প্রক্রিয়াধীন আছে। বিভিন্ন অভিযোগেরও যাছাই-বাছাইয়ের প্রক্রিয়া আছে। হয়তো একটু বিলম্বীত হবে। আমরা মনে করি, শোকের মাসের পরেই শোকজ দেয়া সম্ভব হবে।
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজ্জামেল হক বলেন, সিদ্ধান্ত হয়েছে শোকজ যাবে। তবে এটা শোকের মাসেও যেতে পারে। সম্ভব্য ঈদের পরে শোকজের চিঠি যাবে।
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, আরও বিশ্লেষণ করা। ভালো ভাবে যাছাই-বাছাই করা। এই কারণে দেরী হচ্ছে। আগষ্ট হচ্ছে শোকের মাস। শোকের মাসে শোক দিবস পালিত হবে এটা ঠিক আছে কিন্তু শোকের মাসের সাথে বিদ্রোহীদের শোকজের কোনো দ্বন্দ্ব নেই। সিদ্ধান্ত হয়েছে শোকজ হবে। আর একটু যাছাই-বাছাই করা হচ্ছে।