অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলায় গতকাল বৃহস্পতিবার আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) আরও দুই সদস্য এসআই মো. শাহজাহান ও কনস্টেবল মো. রাজীব। টানা তিন ঘণ্টা এই দুই আসামি ৩১ জুলাই রাতে টেকনাফের শামলাপুর তল্লাশিচৌকিতে ঘটে যাওয়া নৃশংস হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা দেন।
আগের দিন বুধবার একই আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন এপিবিএনের আরেক সদস্য কনস্টেবল মো. আব্দুল্লাহ।
৩১ জুলাই রাতে টেকনাফের মারিশবুনিয়া পাহাড়ে ভিডিও চিত্র ধারণ করে মেরিন ড্রাইভ দিয়ে কক্সবাজারের হিমছড়ির নীলিমা রিসোর্টে ফেরার পথে শামলাপুর তল্লাশিচৌকিতে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সাবেক সেনা কর্মকর্তা সিনহা। এ সময় পুলিশ সিনহার সঙ্গে থাকা সাহেদুল ইসলাম সিফাতকে আটক করে। পরে নীলিমা রিসোর্ট থেকে শিপ্রা দেবনাথকে আটক করা হয়। দুজনই পরে জামিনে মুক্ত হন।
ঘটনার সময় এপিবিএনের এই তিন সদস্য শামলাপুর তল্লাশিচৌকির দায়িত্বে ছিলেন। তাঁদের সিনহা হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
গতকাল বেলা একটার দিকে র্যাবের গাড়িতে করে আদালতে আনা হয় এপিবিএনের দুই সদস্য এসআই মো. শাহজাহান ও কনস্টেবল মো. রাজীবকে। বেলা পৌনে তিনটার দিকে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির জন্য দুই আসামিকে নেওয়া হয় সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তামান্না ফারাহর আদালতে। সন্ধ্যা পৌনে ছয়টার দিকে জবানবন্দি শেষ হলে আদালত প্রাঙ্গণ থেকে প্রিজন ভ্যানে করে আসামিদের জেলা কারাগারে পাঠানো হয়।
সূত্র জানায়, এপিবিএনের দুই সদস্য ৩১ জুলাই রাতে তল্লাশিচৌকিতে নিজেদের চোখে দেখা ঘটনার বর্ণনা দেন। ওই রাতে টেকনাফের দিক থেকে প্রাইভেটকারে করে তল্লাশিচৌকিতে মেজর (অব.) সিনহার পৌঁছানো, বাহারছড়ার পুলিশ ফাঁড়ি থেকে মোটরসাইকেলযোগে পুলিশ পরিদর্শক লিয়াকত আলীর তল্লাশিচৌকিতে আসা, প্রাইভেটকারের সামনে ড্রাম ফেলে পুলিশের ব্যারিকেড সৃষ্টি, গাড়ি থেকে সিনহার নেমে আসার মুহূর্ত, পুলিশ পরিদর্শক লিয়াকত আলীর গুলিতে সিনহা মাটিতে পড়ে যাওয়া, টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপের ঘটনাস্থলে আগমন এবং ট্রাকে তুলে সিনহাকে কক্সবাজারের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ঘটনা তুলে ধরেন তাঁরা। তবে প্রাইভেটকার থেকে নামার সময় সিনহার হাতে আগ্নেয়াস্ত্র ছিল কি না; সে বিষয়ে এপিবিএনের সদস্যরা কী বলেছেন, তা জানা যায়নি।
এপিবিএনের দুই সদস্যের জবানবন্দি নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেননি মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও র্যাবের সহকারী পুলিশ সুপার খাইরুল ইসলাম।
সিনহা মো. রাশেদ খানের সঙ্গে তথ্যচিত্র নির্মাণের কাজে যুক্ত শিক্ষার্থী শিপ্রা দেবনাথের বিরুদ্ধে করা মামলায় গরমিলের ঘটনায় আদালতে নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়েছেন রামু থানার ওসি আবুল খায়ের। গতকাল বেলা একটার দিকে ওসি খায়ের কক্সবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির হয়ে ঘটনার জন্য হাত জোড় করে ক্ষমা চান।
গতকাল বেলা একটার দিকে ওসি খায়ের আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়ান। এ সময় বিচারক মো. দেলোয়ার হোসাইন তাঁকে প্রশ্ন করেন, শিপ্রা দেবনাথের মাদক মামলায় জব্দ মালামালের বিপরীতে পৃথক জিডি লিপিবদ্ধ কেন? গরমিলের কারণ কী?
কোনো সদুত্তর দিতে না পেরে ওসি খায়ের দুই হাত তুলে বিচারকের উদ্দেশে বলেন, ‘গরমিল করা ভুল হয়েছে স্যার, এ জন্য নিঃশর্ত ক্ষমা চাই।