আজ - মঙ্গলবার, ২৪শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৯ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২২শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি, (শীতকাল), সময় - রাত ১২:১৮

এবার জীবিকার তাগিদে যশোর কেশবপুর থেকে সাইকেল চালিয়ে ঢাকায় গেলেন রবিন

সারা দেশে চলছে কঠোর বিধিনিষেধ। এর মধ্যে ‘জীবিকার তাগিদে’ যশোরের কেশবপুর থেকে সাইকেলে চড়ে ঢাকা এসেছেন মোহাম্মদ রবিন।

প্রায় ২১২ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে তিনি ঢাকা আসেন। তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে পথ চিনতে তিনি গুগল ম্যাপের শরণাপন্ন হননি। মানুষের কাছ থেকে পথের বর্ণনা শুনে পৌঁছেছেন ঢাকায়। যাত্রাপথে একাধিকবার পথ ভুলও করেছেন।

বৃহস্পতিবার (২২ জুলাই) বিকেলে শ্বশুরবাড়ি থেকে সাইকেল নিয়ে ঢাকায় রওনা দেন রবিন। প্রায় তিনদিনের যাত্রা শেষে শনিবার (২৪ জুলাই) সকাল ১০টায় আমিনবাজার পৌঁছান।

তিনি বলেন, ‘শাশুড়ি অসুস্থ। অনিচ্ছা সত্ত্বেও ঈদের দুদিন আগে স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে যশোর যাই। আজ কাজের প্রয়োজনে ঢাকায় ফিরতে হলো। কাজ না করলে বাসা ভাড়া, সন্তানদের খাবারের টাকা জোগাড় হবে না।’

রবিনের বক্তব্যে উঠে আসে দীর্ঘ এই পথ পাড়ি দেয়ার কষ্টদায়ক অভিজ্ঞতার কথা।

তিনি বলেন, ‘২২ তারিখ বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে রওনা দেই। অনেক বড় বড় গাড়ি চলে সেই রোডে। আমি রাস্তার সাইড দিয়ে ধীরে ধীরে সাইকেল চালিয়ে আসি। তার পরও ভয় লাগছে। গাড়িগুলো যখন দ্রুত যায় শরীরে কাঁপন ধরে। কেশবপুর থেকে ২৫ কিলোমিটার সাইকেল চালিয়ে একটা জায়গায় থামি। সেখানে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেই। মাগুরা হয়ে পরদিন সন্ধ্যায় রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ঘাটে পৌঁছাই।’

জরুরি পরিষেবা ছাড়া কোনো যান ফেরিতে উঠতে না দেয়ায় তিনি সবজিবাহী ট্রলারে পাটুরিয়া পৌঁছান বলে জানান।

রবিন বলেন, ‘বিধিনিষেধ থাকায় ফেরিতে আমাকে নেয়নি। একটি তরকারিবাহী ট্রলারে অনেক অনুরোধ করে উঠি। তারা আমার কাছ থেকে কোনো টাকা নেয়নি। আমাকে কিছু নাশতাও খেতে দেয়। আজ ভোর সাড়ে ৩টায় আমাকে পাটুরিয়া লঞ্চ ঘাটে নামিয়ে দেয়। ক্লান্ত থাকায় ঘাট সংলগ্ন চায়ের দোকানের টুলে ঘুম দেই। সকালে আবার রওনা দেই। আগের মতোই মানুষকে জিজ্ঞেস করে ঢাকায় চলে আসি।’

রবিন থাকেন রাজধানীর মিরপুরের ১ নম্বরে। কাজ করেন সেখানকার শাহআলী মার্কেট সংলগ্ন একটা দোকানে। এ যাতায়াতে খাওয়া-দাওয়া বাবদ তার খরচ হয়েছে ৬০০ টাকা। নিজের কাছে স্মার্টফোন থাকলেও মানুষের কাছ থেকে পথের বর্ণনা শুনে প্রথমবারের মতো এত দূরের পথ পাড়ি দিলেন তিনি।

রবিন বলেন, ‘আমি চিনতাম না। মানুষকে জিজ্ঞেস করে করে আসছি। মানুষকে জিজ্ঞেস করেছি ভাইয়া ঢাকার রাস্তা কোনটা। তখন সবাই দেখাইয়া দিছে। এমনও দেখা গেছে কোথাও মানুষ নাই, আমি কাকে জিজ্ঞেস করব। তখন ভুলে অন্য রাস্তায় গেছি। পরে আবার কাউকে জিজ্ঞেস করে সঠিক রাস্তায় এসেছি।’

রবিন বলেন, ‘পেট তো আর মানে না। পেট বাঁচাইতে ঢাকা আসা ছাড়া উপায়ও নাই।’

আরো সংবাদ