আজ - সোমবার, ২৩শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৮ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২১শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি, (শীতকাল), সময় - রাত ১:৫৭

এমপি আনার নিখোজ যে ৭টি প্রশ্নের উত্তর খুজছে ইন্ডিয়া পুলিশ।

চিকিৎসা করাতে এসে ভারতে রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হয়েছে জাতীয় সংসদের নির্বাচিত সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার। তাকে খুঁজতে কাজ করছে ভারতের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ তদন্তকারী সংস্থা। তবে দেশটিতে চলমান জাতীয় নির্বাচনের কারণে তদন্তকাজ কিছুটা বিঘ্নিত হচ্ছে। যদিও কলকাতার বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশনের সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন, দ্রুত নিখোঁজ রহস্য উন্মোচন হবে। আর তদন্ত সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দারা নিখোঁজ রহস্যে সাতটি প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন।

কী সেই ৭টি প্রশ্ন?

প্রশ্ন ১: একজন সংসদ সদস্য কেন সঙ্গীহীন ভারতে এলেন?

প্রশ্ন ২: তার সঙ্গে কেন মাত্র একটি হ্যান্ডব্যাগ ছিল?

প্রশ্ন ৩: সীমান্ত অতিক্রম করার সময় কে ধারণ করল ১ মিনিটের ভিডিও?

প্রশ্ন ৪: কার গাড়িতে বরাহনগর থেকে উঠে গেলেন এমপি আনার?

প্রশ্ন ৫: ফোনে কথা না বলে যে ক্ষুদে বার্তা দিলেন সেটা কি আদৌ তার লেখা?

প্রশ্ন ৬: আট দিন সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর মাত্র দুদিন মোবাইলের লোকেশন ট্র্যাক করা সম্ভব হয়। পরে হঠাৎ কেন ট্র্যাক করা যাচ্ছে না?

প্রশ্ন ৭: চলমান নির্বাচনের সময়ে হঠাৎ কেন ভারতের এসেছিলেন আনার?
 

আনোয়ারুল আজিম আনার ঝিনাইদাহ-৪ আসনের তিনবারের নির্বাচিত আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য। তার নিখোঁজের নয়দিন পেরিয়ে গেছে। এখনও এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন ভারতীয় গোয়েন্দা কর্মকর্তারা।

গত ১২ মে দুপুর ২টা ৪০ মিনিটে দর্শনা-গেদে সীমান্ত দিয়ে ভারতে প্রবেশ করেন এমপি আনার। নদীয়া সীমান্ত অতিক্রম করার পর সন্ধ্যায় কলকাতার অদূরে ব্যারাকপুর কমিশনারেট এলাকার বরাহনগর থানার ১৭/৩ মন্ডলপাড়া লেনের স্বর্ণ ব্যবসায়ী গোপাল বিশ্বাসের বাড়িতে পৌঁছান। পরদিন দুপুর ১টা ৪০ নাগাদ ওই বাড়ি থেকে কিছুটা হেঁটে বিধানপার্ক কলকাতা পাবলিক স্কুলের সামনে গিয়ে একটি গাড়িতে উঠেন। ওই সময় তিনি হাস্যোজ্জ্বল ছিলেন। সেই দৃশ্য দেখেছেন গোপাল বিশ্বাসের পরিচিত শুভজিৎ মান্না।

 

তবে সন্ধ্যায় গোপাল বিশ্বাসের মোবাইলের হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে মেসেজ আসে, ‌তিনি (এমপি আনার) রাতে ফিরছেন না, দিল্লি যাচ্ছেন। এ সময় যাতে তাকে আর ফোন না করা হয়। তিনি দিল্লি পৌঁছে নিজেই ফোন করবেন- এমনটাও মেসেজে লেখা ছিল।

 

এরপর আনারকে আর ফোনে পাওয়া যায়নি। তিন দিন পর ১৫ মে সকাল সোয়া ১১টায় তিনি শেষ মেসেজ করে জানান, দিল্লি পৌঁছে গেছেন। তার সঙ্গে ভিআইপিরা আছেন।

 

বরাহনগর থানায় ১৮ মে লিখিত মিসিং ডায়েরিতে এসব তথ্য উল্লেখ করেন ভারতে তার বন্ধু গোপাল বিশ্বাস।

কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো (আইবি), কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা শাখা এবং ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেট বা রাজ্য পুলিশ এই ঘটনার তদন্ত করছে। একই সঙ্গে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দিষ্ট একটি উইংকে গোটা ঘটনার সমন্বয় করার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এছাড়াও দিল্লিতে বাংলাদেশ দূতাবাস এবং কলকাতার বাংলাদেশ উপদূতাবাসের কয়েকজন কর্মকর্তাকেও এমপি আনারের খোঁজ-খবর নেয়ার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।

 

যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর কলকাতায় অন্য কাজে বেড়াতে আসা আনারের পরিবারের কয়েকজন কাছের লোকও নিউমার্কেট এলাকায় অবস্থান করছেন। তারাও যে কোনও প্রয়োজনে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন। তবে ভিসা না পাওয়ার কারণে মঙ্গলবারও (২১ মে) কলকাতায় পৌঁছতে পারেননি এমপি কন্যা ডেরিন।

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর এই প্রথম এভাবে কোনও সংসদ সদস্যের নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা ঘটল। এটাকে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলরা দেখছেন, ‘মিসটেরিয়াস’ হিসেবে।

 

মঙ্গলবার এই নিখোঁজ রহস্য নিয়ে কথা হয় দায়িত্বশীল কয়েকজনের সঙ্গে। তারা বলছেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর দফতর (পিএমও) থেকে বিষয়টি দেখা হচ্ছে। নিখোঁজ ডায়েরি হওয়ার আগেই যেহেতু এমপির পরিবার প্রধানমন্ত্রীর দফতরকে জানিয়েছিল তাই বাংলাদেশের পিএমও থেকে দ্রুত বিষয়টি দেখার জন্য কলকাতার বাংলাদেশ উপদূতাবাসকে নির্দেশ দেয়া হয়।

 

দূতাবাসের কর্মকর্তাদের একটি দল এরই মধ্যে বরাহনগর ১৭/৩ মন্ডলপাড়া লেনের গোপাল বিশ্বাসের বাড়িতে গিয়ে সিসিটিভির ফুটেজ সংগ্রহ করে। সেই ফুটেজ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে।

 

এছাড়াও কলকাতা পুলিশের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত দল গঠন করা হয়েছে। তাদের কয়েকজন শীর্ষ গোয়েন্দা বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশনে গিয়ে নিখোঁজ আনার সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করেন।

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা- আইবি কয়েকটি ভাগে ভাগ হয়ে তদন্ত চালাচ্ছে। দায়িত্বশীল একটি সূত্র বলছে, বাংলাদেশ ও ভারতের দুটি সিম কার্ড এই মুহূর্তে ইনঅ্যাক্টিভ। হ্যান্ডসেটের মধ্যে নেই। তাই সংসদ সদস্যের মোবাইল ট্র্যাক করা যাচ্ছে না।

 

তবে দুটো মোবাইলের লোকেশন ট্র্যাক করে প্রথম দুদিন বিভ্রান্ত হন গোয়েন্দারা। বাংলাদেশের নম্বরটি বেনাপোল এলাকা দেখায় এবং ভারতীয় নম্বরটি বিহারের মুজাফরপুর দেখায়। এরপর থেকে ওই দুই নম্বরের লোকেশন আর ট্র্যাক হচ্ছে না।

 

এছাড়াও সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দারা যে প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজছেন এর মধ্যে প্রথম প্রশ্ন হলো- বাংলাদেশের একজন এমপি ভারতের চিকিৎসা করাতে একা এলেন কেন?

 

এমনিতেই জনপ্রতিনিধিদের সাথে সব সময় কেউ না কেউ থাকেন কিংবা তার ব্যক্তিগত সচিবও থাকেন। এ ক্ষেত্রে তিনি একা সীমান্ত অতিক্রম করলেন, সেটাও মাত্র হালকা একটা ব্যাগ নিয়ে। এর মাঝে কেউ তার একটা ভিডিও করলেন, সেখানেও দেখা যাচ্ছে এমপিকে হাস্যোজ্জ্বল।

 

তাকে যে কেউ জোর করে তুলে নিয়ে যায়নি সেটাও অভিযোগপত্রে পরিষ্কার লেখা রয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, একটি গাড়িতে করে এমপি নিজেই হেঁটে উঠেছেন এবং সেই দৃশ্য একজন দেখেছেনও।

 

এরপর কোথায় গেলেন? কিংবা তার মোবাইল থেকে পাঠানো ক্ষুদে বার্তাগুলো যে স্টাইলে লেখা ওই স্টাইলে সাধারণত আনার লেখেন না বলেই তার পরিচিতরা বলছেন। তবে কে লিখল আনারের মোবাইল থেকে ওই ক্ষুদে বার্তা?

 

আর আনার যদি স্বেচ্ছায় গাড়িতে উঠে ডাক্তার দেখাতে যান তবে তার মোবাইল ফোন বন্ধ কেন?

 

আরো সংবাদ