আজ - রবিবার, ২৪শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৯ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২২শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি, (হেমন্তকাল), সময় - ভোর ৫:০২

‘চাকরির হতাশায়’ ঢাবি গ্রাজুয়েটের আত্মহত্যা!

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপরের সারির বিভাগ ইংরেজি থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করেছেন। লক্ষ্য প্রথম শ্রেণির সরকারি কর্মকর্তা হওয়া। শুরু করলেন বিসিএস প্রস্তুতি। কিন্তু কৃষক বাবার পাঁচ সদস্যের বড় পরিবার চালিয়ে মাস্টার্স শেষ করা ছেলের জন্য অর্থের যোগান দেওয়া আর সম্ভব হচ্ছিল না। তাই বেসরকারি একটি কলেজে ইংরেজির প্রভাষক হিসেবে যোগ দিলেন। হাড়ভাঙ্গা খাটুনি খেটে যে বেতন ভাতা পেতেন তা নিতান্তই অপ্রতুল। অধিকাংশ সময় এ চাকরির পেছনে চলে যাওয়ায়, কাঙ্ক্ষিত চাকরির প্রস্তুতিও ঠিকমতো হচ্ছিল না।

এ অবস্থায়ও দুই বার বিসিএস প্রাথমিক বাছাইয়ে উত্তীর্ণ হলেও ফেল করলেন লিখিত পরীক্ষায়। এরই মধ্যে পেরিয়ে গেল সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩০ বছর।জীবন যখন ছেয়ে ফেলেছে এমন ঘোরতর অমানিশা তখন পরিবারের পছন্দের মেয়ের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন বছর দুই আগে। গেল বছর কোলজুড়ে আসে এক কন্যা সন্তান।

বন্ধুদের ভাষায় ‘আত্মবিশ্বাসী এবং উচ্চাভিলাষী” এ ছেলেটি একসময় আত্মাভিমান নিয়েই ঢাকা ছাড়েন।

যোগ দেন নিজ জেলা সিরাজগঞ্জের একটি মহিলা কলেজে। কিন্তু  এবারও মন্দ কপাল। নিয়োগ সংক্রান্ত জটিলতায় বেতন ভাতা আটকে গেল।একদিকে পিতা মাতা ও নির্ভরশীল ভাই বোন অন্যদিকে নববিবাহিত স্ত্রী এবং নবজাতক কন্যা। তাই কার্যকর একটা কিছু করতে না পারার হতাশায় ক্রমশই ডুবে যাচ্ছিলেন অতলে। কিন্তু, সমস্যা মোকাবেলার পরিবর্তে সবাইকে আরো বড় সমস্যায় ফেলে নিজ থেকে চলে গেলেন।

গ্রামের বাড়ি সিরাজগঞ্জেরর সালঙ্গা থানার ধুপিল গ্রামে। বাবার নাম আবদুল মন্নাফ। বাবা-মায়ের তিন সন্তানের মধ্যে মোমিনই ছিলেন বড়।

তার আত্মহত্যার বিষয়টি চ্যানেল আই অনলাইনকে নিশ্চিত করেন সালঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো: আবদুর রফিক।

এ পুলিশ কর্মকর্তা চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, ‘মৃত্যুর খবর পেয়েই আমি ছুটে যাই। পরিবার এবং গ্রামের মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারি ঢাকা ভার্সিটির ইংরেজির মতো বিভাগে পড়েও চাকরি নিয়ে হতাশার কারণে তিনি আত্মহত্যা করেন।’

পরিবারের আপত্তির কারণে মরদেহের ময়নাতদন্ত করা হয়নি বলে জানান তিনি।

বন্ধুর এমন অকাল মৃত্যুর সংবাদে হতবিহ্বল তার বন্ধু সহপাঠীরা। চ্যানেল আই অনলাইনের সঙ্গে কথা বলার সময় বারবার গলা ধরে আসছিল মোমিনের ক্লাসমেট এবং হলমেট আবু তাহেরের।

রাজধানীর অগ্রণী স্কুলের শিক্ষক আবু তাহের বলেন, আমার বিশ্বাসই হচ্ছে না এমন হৃদয় বিদারক কিছু ঘটতে পারে!

তবে চাকরি নিয়ে মোমিনের যে হতাশা ছিল তা জানতেন তাহেরও। তাহের জানান, ২০১২ সালের দিকে মোমিন রাজধানীর কুইন মেরি কলেজে যোগ দেন। ২৯তম বিসিএসসহ দুটি বিসিএসের প্রাথমিক বাছাইয়ে উত্তীর্ণ হয়েও ফেল করেন লিখিত পরীক্ষায়।

এরপর চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা শেষ হওয়ার পর ২০১৬ সালে যোগ দেন সিরাজগঞ্জের তারাশ মহিলা ডিগ্রি কলেজে।

আরো সংবাদ
যশোর জেলা
ফেসবুক পেজ
সর্বাধিক পঠিত