আজ - মঙ্গলবার, ২৪শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৯ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২২শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি, (শীতকাল), সময় - সকাল ৬:২০

চৌগাছায় রাতে ঘরে ঢুকে নারীকে মারধর, তদন্তে গিয়ে হুমকি এসআই’র!

যশোরের চৌগাছা উপজেলায় রাতে এক নারীর ঘরে ঢুকে তার ওপর অতর্কিত হামলা-মারধর ও বাড়ির আসবাবপত্র ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে সেখানকার কয়েকজন দুর্বৃত্তের বিরুদ্ধে। গত সোমবার রাতের এ ঘটনায় জরুরি সেবা ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে সাহায্য চান তার ছেলে। সে রাতেই হামলার শিকার বাড়িতে তদন্তে যান চৌগাছা থানার এক উপপরিদর্শক (এসআই)। সেখানে গিয়ে ভুক্তভোগীকে ‘বাড়াবাড়ি’ করতে নিষেধ করেন তিনি!

এ ঘটনায় গতকাল বুধবার দুপুরে চৌগাছা প্রেসক্লাবে একটি সংবাদ সম্মেলন করেছেন ভুক্তভোগী। পুলিশের পক্ষ থেকে তাকে হুমকি দেওয়া হয়েছে বলে সংবাদ সম্মেলনে তিনি অভিযোগ করেন। বিষয়টি নিয়ে চৌগাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দাবি করেছেন, মীমাংসা করার জন্য উভয় পক্ষকেই গোলযোগ করতে নিষেধ করা হয়েছিল।

ভুক্তভোগীর নাম লিপিকা সুলতানা (৫৫)। সোমবার রাতে তার সঙ্গে হামলার শিকার হন তার ছোট ছেলে রিয়াদ হোসেনও। দুজনকেই মারধর করা হয়। তাদের ঘরের আসবাবপত্র ভাঙচুর করে দুর্বৃত্তরা।

চৌগাছা প্রেসক্লাবে লিখিত বক্তব্যে ভুক্তভোগী বলেন, ‘আমি লিপিকা সুলতানা, স্বামী মিজানুর রহমান, উপজেলার নারায়নপুর ইউনিয়নের বাদেখানপুর গ্রামে বসবাস করি। আমি একজন কৃষকের গৃহবধূ। আমি আমার স্বামী ও ২ সন্তান রুবেল হোসেন ও রিয়াদ হোসেনকে নিয়ে গ্রামে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করি। সোমবার রাত ১০টার দিকে আমি বারান্দায় ঘুমিয়ে ছিলাম। এমন সময় ঘুমের মধ্যেই লাঠির আঘাতে আমার ঘুম ভেঙে যায়। দেখি গ্রামের হায়দারের ছেলে আক্তার ও মতিয়ারের ছেলে মুক্তারসহ ১৩/১৪ জন লাঠি ও রামদাসহ আমার বাড়িতে আক্রমণ করেছে। তারা ঘরে প্রবেশ করে আমার ছোট ছেলেকে (রিয়াদ হোসেন) বেধড়ক মারপিট করে।’

তবে কী কারণে এই হামলা হয়েছে, তা উল্লেখ করেননি লিপিকা। তিনি আরও বলেন, ‘সন্ত্রাসীরা চলে যাওয়ার পর দেখি আমার ছোট ছেলে অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে। আমার আপন ছোট দেবরের ছেলে তাদের গতিরোধ করলে সন্ত্রাসীরা তাকেও মারধর করে। এ ঘটনায় আমার বড় ছেলে রুবেল হোসেন রাত ১০টা ৪৫ মিনিটে ৯৯৯ নম্বরে কল করে। এরপর রাত ১১টা ২৭ মিনিট, ১১টা ৩২ মিনিটে (৯৯৯) সাহায্যের জন্য কল করে। পরে চৌগাছা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) কাওসার আমার বাড়িতে আসেন।’

ভুক্তভোগী বলেন, “এসআই কাওসার আমার বাড়িতে এসেই বলেন, ‘বাড়িতে এত লোক কেন?’। তিনি বাড়িতে ভেতরে ঢুকে কিছু একটা খুঁজতে থাকেন। তারপর সন্ত্রাসীদের ফেলে যাওয়া একজোড়া জুতা, একটি মোবাইল ফোন ও একটি রামদা জব্দ করে বাড়ি থেকে চলে যান। যাওয়ার সময় তিনি বলেন, ‘আপনারা ওদের (সন্ত্রাসীদের) সঙ্গে আর গোলযোগ করবেন না। ওরা আপনাদের আর মারবে না। আর আপনারা কেউ বাড়াবাড়ি করবেন না। তাহলে কিন্তু সমস্যা আছে।’ এর কারণ কী?”

লিপিকা এ সময় উপস্থিত সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, ‘আমি আপনাদের কাছে জানতে চাই ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে পুলিশের সাহায্য নেওয়া কি আমার অপরাধ হয়েছে? আমার বাড়ি ভাঙচুর, লুটপাট এবং আমাকে ও আমার ছেলেকে মারধরের ঘটনা তদন্তে এসআই কাওসারের সন্ত্রাসীদের পক্ষে অবস্থানের কারণ কি? আমি এ ঘটনার সুষ্ঠ বিচার চাই।’

এ বিষয়ে চৌগাছা থানার এসআই কাওছার আলম বলেন, ‘স্যারের (ওসি) সঙ্গে কথা বলেন।’

ওই নারীর বড় ছেলে রুবেল হোসেন জানান, এ ঘটনায় তারা গত মঙ্গলবারই চৌগাছা থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। যার তদন্তের দায়িত্বে রয়েছেন এসআই এমদাদ হোসেন।

জানতে চাইলে এমদাদ বলেন, ‘ওই পরিবারের লিখিত অভিযোগটি আমার কাছে আছে। বুধবার সময় না পাওয়ায় তদন্তে যাওয়া হয়নি। আজ (বৃহস্পতিবার) যাব।’

এ ব্যাপারে চৌগাছা থানার ওসি রিফাত খান রাজীবের সঙ্গে কথা বলে প্রথমে তিনি জানান, ভুক্তভোগীর পরিবার থেকে কোনো লিখিত অভিযোগ করা হয়নি। পরে তাকে এসআই এমদাদের বক্তব্যের কথা জানালে তিনি বলেন, ‘অনেক অভিযোগই তো আসে, সে সময় আমার মনে ছিল না। অভিযোগ হলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এসআই কাওছারের বিষয়টি সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি দাবি করে বলেন, ‘হুমকি দেওয়ার কোনো ঘটনা ঘটেনি। মীমাংসা করার জন্য উভয় পক্ষকেই গোলযোগ করতে নিষেধ করা হয়েছে।’

আরো সংবাদ