আজ - শুক্রবার, ২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২০শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি, (হেমন্তকাল), সময় - বিকাল ৩:০০

ছিন্নমূল মানুষের জীবনমান বদলে দিয়েছে আশ্রয়ন প্রকল্প।

রাজশাহীর তানোর উপজেলায় আশ্রয়হীনদের জীবনমান বদলে দিয়েছে প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার আশ্রয়ন প্রকল্প। সরজমিনে আজ (৫ ডিসেম্বর) সোমবার সকালে তানোর উপজেলার সরনজাই ইউনিয়নের জামিন শিধাইড় আশ্রয়ন প্রকল্পে গিয়ে দেখা যায়, সময়ের সঙ্গে এখন বদলেছে ছিন্নমূল মানুষের জীবনমান। তারা এখন বসবাস করছেন রঙিন ঢেউটিন আর পাঁকা দেয়ালের আধা পাঁকা বাড়িতে।

ওইসব বাড়ির আশেপাশে তৈরি করা হয়েছে শাকসবজির চাষাবাদ। কেউ পালন করছেন হাঁস, মুরগি ও ছাগল। সন্তানদের পাঠাচ্ছেন স্কুলে। বসতির দুশ্চিন্তা ছেড়ে নিশ্চিন্ত মনে কাজ করে এগিয়ে নিচ্ছেন সংসার। সংসারে এসেছে অর্থনৈতিক সচ্ছলতা। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার সহযোগিতায় প্রকল্পের বাসিন্দারা গঠন করছেন সমবায় সমিতি। নিয়মিতভাবে দিচ্ছেন প্রশিক্ষণ। অনেকের একাডেমিক শিক্ষা না থাকলেও বিভিন্ন প্রশিক্ষণ নিয়ে তারা হয়ে উঠছেন স্বশিক্ষিত। উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাবৃন্দরা নিয়মিত তদারকি করে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন আশ্রয়ন প্রকল্পের বাসিন্দাদের।

এবিষয়ে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও যুবলীগের সংগ্রামী সভাপতি লুৎফর হায়দার রশিদ ময়না জানান, বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে তানোর উপজেলাতে হতদরিদ্রদের ভাগ্য বদলের জন্য উদ্যোগ নেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। তাঁর উদ্যোগ বাস্তবায়নে পর্যায়ক্রমে ছিন্নমুল মানুষের তালিকা করে স্থায়ী আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এতে মানুষগুলো তাদের ভাগ্যের চাকা নতুন ভাবে ঘোরাতে শুরু করেছেন।সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে প্রথম পর্যায় থেকে শুরু করে চতুর্থ পর্যায়ে প্রায় ৩২৩ জন ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য ভূমি ও গৃহ প্রদান করা হয়েছে। এরমধ্যে উপজেলার কলমা ইউপির বিল্লি ও বনগাঁ, বাধাঁইড় ইউপিতে রামদেবপুর ও জুমারপাড়া, পাঁচন্দর ইউপিতে বনকেশর, চাঁদপুর ও ইলামদোহী কাজীজিয়া, সরনজাই ইউপিতে তাঁতিহাটী, নবনবী ও সিধাঁইড়, কামারগাঁ ইউপিতে মাদারীপুর গ্রামে আশ্রয়ণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। আর চতুর্থ পর্যায়ের ৩২০টি ঘর নির্মাণে কাজ চলমান রয়েছে।

এব্যাপারে তানোর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) পঙ্কজ চন্দ্র দেবনাথ বলেন, স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের সমন্বয়ে যোগ্যদের চিহ্নিত করে সরকারি জায়গায় বিনামূল্যে ঘর তৈরি করে দেয়া হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় ভূমিহীন, গৃহহীন, হতদরিদ্র ও উৎপাটিত পরিবারের স্বামী-স্ত্রী যৌথ নামে জমি ও বাড়ির মালিকানা দেয়া হয়েছে। প্রতিটি ইউনিটে দুটি কক্ষ, একটি রান্নাঘর, একটি টয়লেট ও একটি বারান্দা রয়েছে। পূনর্বাসিত পরিবারগুলোর জন্য বিনামূল্যে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়েছে এবং প্রকল্পের জায়গায় নিরাপদ পানির জন্য মোটরচালিত নলকূপ স্থাপন করা হয়েছে।

এছাড়া বিভিন্ন উৎপাদনশীল এবং আয়বদ্ধ কর্মকান্ডে নিয়োজিত করার জন্য ব্যবহারিক এবং প্রযুক্তি প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে। তাদের আত্মসামাজিক উন্নয়নের জন্য ক্ষুদ্র ঋণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বর্তমানে আশ্রয়ন প্রকল্পের বাসিন্দারা তাদের জীবনমান উন্নয়নে নিজেরাই এগিয়ে এসেছে। আমরা সরকারের পক্ষ থেকে তাদের সহযোগিতা করছি। এই প্রকল্প একটি রোল মডেল কারণ এভাবে কোন দেশে আশ্রয়হীনদের জন্য সরকারিভাবে নিরাপদ ছাদ তৈরির ব্যবস্থা হয়নি।এবিষয়ে তানোর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা প্রকৌশলী তারিকুল ইসলাম বলেন, এই প্রকল্পের মাধ্যমে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি স্বপ্নের বাস্তবায়ন হয়েছে। এই প্রকল্পের বাসিন্দাদের সচ্ছলতা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ এবং সরকারি পুকুর পাড়ের বাসিন্দাদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আশ্রয়ন প্রকল্পবাসীদের সমিতির মাধ্যমে দেওয়ার ঘর দেবার ব্যবস্থা করা হয়।

এনিয়ে উপজেলার সরনজাই ইউপির জামিন সিধাঁইড় আশ্রয়ন প্রকল্পের বাসিন্দা রনি ইসলাম, সুমাইয়া বেগম, আফসার আলী, মাইনুল ইসলাম ও সাকেরা বেওয়া ছাড়াও আরো অনেকে বলেন, আমরা কোনদিন ভাবিনি নিজের ভালো একটা বসবাসের ঠিকানা করতে পারব। এখন সেটি প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার মাধ্যমে হয়েছে। সন্তানদের স্কুলে পাঠাতে পারছি। নিজের হাঁস-মুরগি, ছাগল ও ভেড়া পালনসহ নানা কাজ করার সুযোগ হয়েছে। সত্যিই এটা স্বপ্নের আশ্রয়ন প্রকল্প। আল্লাহপাকের নিকট বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তার পরিবারের সকল সদস্যদের দীর্ঘায়ু কামনা করে দোয়া করি।

আশ্রয়ন প্রকল্পের বাসিন্দা রনি ইসলাম বলেন, আমার এক ছেলে ও এক মেয়ে সন্তান। আট বছর বয়সী মেয়ে রনকজাহান রিমি এবার দ্বিতীয় শ্রেণীতে পড়ছে। ছেলে সৌরভ আলীর বয়স পাঁচ বছর। এক সময় মাথা গোঁজার কোন ঠাঁই ছিল না তাদের। রোদ বৃষ্টির মধ্যে কোন রকমে অন্যের জায়গায় জীবন-যাপন চলতো।

সুমাইয়া বেগম জানান, দুই বছর আগে বিয়ে হয়। তাঁর স্বামীর বাড়িঘর ছিলো না। ফলে নানীর বাড়িতে বাস করতেন। হঠাৎ নানী তাড়িয়ে দেয়। পড়ে তার স্বামী উপজেলা ভূমি অফিসে যোগাযোগ করে তারা প্রধানমন্ত্রীর দেয়া ঘর পেয়েছেন। বর্তমানে তাদের থাকা ঘর নিয়ে আর চিন্তা নেই।

সুমাইয়া বেগমের স্বামী রনি নামের কলেজ পড়ুয়া ছাত্র জানান, বর্তমানে আশ্রয়ন প্রকল্পের আওতায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেয়া স্বপ্নের বাড়িতে জীবনের অন্ধকার কেটে আলোর মুখ দেখতে পেয়েছি। এখন নিশ্চিন্তে মাথা গোঁজার ঠাই হয়েছে। তিনি রাজশাহী নিউ ডিগ্রি কলেজে অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে পড়ালেখা করছেন। অন্যের কাজ করে আর বাড়িতে স্ত্রী মুরগি পোশে তাদের অভাব দূর হয়ে যায়। বর্তমানে আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘর পেয়ে তাদের সংসারে শান্তির সুবাতাস বইছে।#সোহানুল হক পারভেজ তানোর রাজশাহী ৫ ডিসেম্বর ২০২২

আরো সংবাদ
যশোর জেলা
ফেসবুক পেজ
সর্বাধিক পঠিত