আজ - শুক্রবার, ২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২০শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি, (হেমন্তকাল), সময় - সকাল ১১:৫১

ছয় দফা বঙ্গবন্ধুর নিজের চিন্তার ফসল : প্রধানমন্ত্রী

বাঙালির মুক্তির সংগ্রামের গুরুত্বপূর্ণ সোপান হিসেবে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে ঐতিহাসিক ছয় দফা প্রণয়ন করেছিলেন, তার পুরোটা নিজের চিন্তা থেকে তৈরি বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির আয়োজনে গতকাল বুধবার ঐতিহাসিক ৬-দফা দিবসের কুইজ প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে ভিডিও কনফারেন্সে যোগ দিয়ে তিনি একথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ছয় দফা প্রণয়নটা এটা অনেকে অনেকভাবে বলতে চায়। কেউ এর পরামর্শ, ওর পরামর্শ  কিন্তু আমি নিজে জানি যে, এটা তার (বঙ্গবন্ধুর) সম্পূর্ণ নিজের চিন্তার ফসল। কারণ তাকে যখন গ্রেপ্তার করা হলো ১৯৫৮ সালে এবং তিনি ১৯৫৯ সালের ১৭ ডিসেম্বর মুক্তি পান, সেই সময় রাজনীতি নিষিদ্ধ। (তিনি) ঢাকার বাইরে যেতে পারতেন না, সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। তখন তিনি চাকরি নিলেন আলফা ইন্সুরেন্স কোম্পানিতে। তখন তাজউদ্দিন সাহেব গ্রেপ্তার ছিলেন। পরে মুক্তি পেয়ে উনি একটা চাকরি নিয়ে চলে গিয়েছিলেন নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লাতে। বঙ্গবন্ধু নিজে গিয়ে তাজউদ্দিন আহমেদকে নিয়ে এসে আলফা ইন্সুরেন্স কোম্পানিতে চাকরি দিলেন। এবং মোহাম্মদ হানিফ তাকেও কিন্তু আলফা ইন্সুরেন্সে চাকরি দেন তার পিএ হিসেবে। বঙ্গবন্ধু সব সময় নিজে বসে বসে চিন্তা করতেন, নিজেই লিখতেন এবং হানিফকে দিয়ে এটা টাইপ করাতেন। এখানে শুধুমাত্র একমাত্র হানিফ জানতো, সেই টাইপ করেছিল এছাড়া কিন্তু আর কারো জানা ছিল না। এটা সম্পূর্ণ তার (বঙ্গবন্ধু) নিজের চিন্তা থেকে এই ছয় তৈরি করা।

শেখ হাসিনা বলেন, তিনি যখন লাহোরে গিয়ে এটা পেশ করার চেষ্টা করেন সেখানে প্রচণ্ড বাধা আসে। পশ্চিম পাকিস্তানের লোকেরা প্রচণ্ড বাধা দেয়। বাধা পেয়ে তিনি সেখানে সংবাদ সম্মেলন করে সেটা তুলে ধরেন। তাতে ওরা আরো ক্ষিপ্ত হয়ে যায়। এটা ছিল ৫ ফেব্রুয়ারি এই সম্মেলনটা সেখানে তিনি তুলে ধরার চেষ্টা করেন। পরে সাংবাদিকদের কাছে তিনি তার ছয় দফাটা দিয়ে দেন।

বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, তিনি ঢাকায় ফিরে তেঁজগাও বিমানবন্দরে সংবাদ সম্মলন করে ছয় দফার মূল কথাগুলো প্রকাশ করেন। পরে তিনি আওয়ামী লীগের কার্যপ্রণালী কমিটির সভা ডাকেন। এর আগে এটা কিন্তু তিনি সভায় পেশ করেননি। এটা তখন সিক্রেট রেখেছিলেন। সেখানে এই ছয় দফা পাশ হয় এবং এটাকে কাউন্সিলে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তখন কাউন্সিলে এটা পাস করা হয়। তারপর তিনি শুরু করেন সমগ্র বাংলাদেশে ছয় দফা নিয়ে প্রচার এবং জনসভা। যে যে জেলায় তখন সভা করেছেন, সেখানেই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

ঐতিহাসিক ছয় দফার গুরুত্ব তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটা জাতিকে স্বাধীনতার চেতনায় উদ্বুদ্ধ করা, মানসিকভাবে প্রস্তুত করা… এই জাতিকেই তিনি (বঙ্গবন্ধু) পাকিস্তান আন্দোলনের জন্য সম্পৃক্ত করেছিলেন। আবার সেখান থেকে ভেঙে এসে স্বাধীন বাংলাদেশ তৈরি করা- এটাই ছিল তার উদ্দেশ্য এবং একটা কঠিন দায়িত্ব ছিল। কিন্তু সেটা তিনি অত্যন্ত দক্ষতার সাথে করে দিয়ে যান। কাজেই আমাদের স্বাধীনতা অর্জনের পেছনে ছয় দফা অর্থাৎ একেকটা ধাপ পার হয়ে কিন্তু আমরা এই অর্জনটা করতে পেরেছি। এটার উপর ভিত্তি করেই কিন্তু আমাদের মুক্তি সংগ্রাম, মুক্তিযুদ্ধ এবং আমাদের বিজয় অর্জন। সেদিক থেকে ছয় দফা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

পশ্চিম পাকিস্তানি শাষকগোষ্ঠীর শোষণ-বঞ্চনা থেকে মুক্তির লক্ষ্যে স্বৈরাচার আইয়ুব সরকারের বিরুদ্ধে ১৯৬৬ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি লাহোরে তৎকালীন পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের সব বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে ডাকা এক জাতীয় সম্মেলনে পূর্ব বাংলার জনগণের পক্ষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পূর্ব বাংলার স্বায়ত্তশাসনসহ ৬ দফা দাবি উত্থাপন করেন। ১১ ফেব্রুয়ারি তিনি দেশে ফিরে ৬ দফার পক্ষে দেশব্যাপী প্রচারাভিযান শুরু করেন এবং বাংলার আনাচে-কানাচে প্রত্যন্ত অঞ্চলে গিয়ে জনগণের সামনে ৬ দফার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন। বাংলার সর্বস্তরের জনগণ তাতে স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন জানায়। ৬ দফা দাবি আদায়ে ঢাকাসহ সারা বাংলায় আওয়ামী লীগের ডাকে হরতাল পালিত হয় ১৯৬৬ সালের ৭ জুন। হরতাল চলাকালে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও টঙ্গীতে সৈন্যদের গুলিতে মনু মিয়া, সফিক ও শামসুল হকসহ বেশ কয়েকজন নিহত হন। গ্রেপ্তার হন অনেকে। স্বাধিকারের এই আন্দোলন ও আত্মত্যাগের পথ বেয়েই শুরু হয়েছিল বাঙালির চূড়ান্ত স্বাধীনতার সংগ্রাম। শোষিত, বঞ্চিত মানুষের অধিকার আদায়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আজীবন সংগ্রামের কথা তুলে ধরে তাকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যার পর বঙ্গবন্ধুকে ইতিহাস থেকে মুছে ফেলার ব্যর্থ চেষ্টা হয়েছিল বলেও উল্লেখ করেন সরকার প্রধান।

তিনি বলেন, আজকে জাতির পিতা যেই পথ দেখিয়ে গেছেন সেই পথ ধরেই আমরা বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। এই বাংলাদেশকে যদি আমরা ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত, উন্নত, সমৃদ্ধ সোনার বাংলা করতে চাই তাহলে অবশ্যই ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়ে জাতির পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করেই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে এবং আমাদের এই বিজয়কে সমুন্নত রাখতে হবে। অনুষ্ঠানে গণভবন প্রান্তে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিমসহ ঊর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

 

আরো সংবাদ
যশোর জেলা
ফেসবুক পেজ
সর্বাধিক পঠিত