যশোর সদরের গোয়ালদাহ গ্রামের ঋষিপাড়ার গান্ধী। ৬৫ বছর বয়সী এই নারীর বৃদ্ধ স্বামী থাকলেও তিনি এখন বয়সজনিত কারণে কাজকর্ম করতে পারেন না। ফলে অভাব-অনটনকে ‘আলিঙ্গন’ করেই চলছে তাদের স্বামী-স্ত্রীর দুইজনের সংসার। এমন অবস্থায় সম্প্রতি ব্র্যাকের আলট্রা-পুওর গ্র্যাজুয়েশন (ইউপিজি) কর্মসূচি থেকে একটা গরু পেয়েছেন গান্ধী। সেটা পালন করে উপার্জনের একটা পথ খুঁজে পেয়েছেন তিনি।
একই পাড়ার শ্যামলী ঋষি। বৃদ্ধ কর্মহীন স্বামীকে নিয়ে তার সংসারও চলছে ধুঁকে ধুঁকে। তিনি ঝুড়ি, ডালা তৈরি করে বিক্রি করেন। সেই সামান্য উপার্জনেই তাদের চলতে হয়। এখবরে তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে ইউপিজি কর্মসূচি। এ নারীকে স্বাবলম্বী হতে অর্থ সহায়তা দিয়ে তার কাজকে প্রসারিত করা হয়েছে।
না চাইতেই গান্ধী ও শ্যামলী এমন সহযোগিতা পেয়ে যেন আকাশের চাঁদ হাতে পেয়েছেন। তার মতো ১২ হাজার পরিবারে এমন সুবিধা পেয়েছেন। বুধবার যশোর সদরের গোয়ালদাহ-এড়েন্দা এলাকায় এমন ১০-১৫ জনের বাড়িতে গিয়েছিলেন যশোরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) রফিকুল হাসান। এসময় তার সঙ্গে ছিলেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোরের উপ-পরিচালক মঞ্জুরুল হক। এমন হতদরিদ্রদের সাথে এই দুই কর্মকর্তা বৈঠক করেন। শোনেন তাদের জীবিকা যুদ্ধের কথা।
ইউপিজি কর্মসূচির রিজিওনাল ম্যানেজার বলেন, যাদের স্বামী অক্ষম, স্বামী পরিত্যক্তা, পঙ্গু, অসহায় এমন অতিদরিদ্রদের আর্থসামাজিক উন্নয়নে যশোরে ২০১৬ সালে এ প্রকল্পের কার্যক্রম শুরু হয়। ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত জেলাটির ১০ হাজার ১৪৫টি অতিদরিদ্র পরিবার ব্র্যাকের ইউপিজি কর্মসূচির আওতায় এসেছে। ২০২২ সালে জেলার ৮ টি উপজেলার ২১১৫ টি ্র পরিবার এসেছে এই সুবিধা। এ পর্যন্ত ১২ হাজার ২৬০ পরিবারকে স্বাবলম্বী করতে গরু, ছাগল, হাঁস-মুরগি, নার্সারি করে দেওয়া হয়েছে। সুবিধাভোগী অনেকে এখন আগের চেয়ে ভালো আছেন।
ব্র্যাকের যশোর জেলা সমন্বয়কারী আলমাসুর রহমান বলেন, আন্তর্জাতিক দারিদ্র্য বিমোচন দিবস উপলক্ষে ব্র্যাক বাংলাদেশসহ আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অক্টোবর মাসব্যাপী নানা কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে বুধবার যশোর জেলায় ব্র্যাকের ইউপিজি প্রোগ্রামের কার্যক্রম পরিদর্শন করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) রফিকুল হাসান। তিনি কর্মসূচির অংশগ্রহণকারীদের বাড়ি পরিদর্শন করেন এবং তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। অতিদারিদ্র্য নিরসনে ব্র্যাকের এমন ভূমিকার প্রশংসা করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক।