আজ - শনিবার, ২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২১শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি, (হেমন্তকাল), সময় - সন্ধ্যা ৭:২৪

পদ্মা সেতুর ১৭তম স্প্যান বসানো হচ্ছে, দৃশ্যমান হতে যাচ্ছে আড়াই কিলোমিটারেরও বেশি

পদ্মা সেতুর ১৭তম স্প্যান বসানো শুরু হয়েছে। মঙ্গলবার সকাল ১০টা থেকে এই প্রক্রিয়া শুরু করা হয়। ‘৪ডি’ নম্বর স্প্যানটি ২৮ ও ২৯ নম্বর খুঁটির কাছ থেকে ভাসমান জাহাজ পাজা করে ধরে রওনা হয় সকাল ঠিক ১০ টায়। ৩৭ মিনিটেই প্রায় এক কিলোমিটার পথ পারি দিয়ে এটি পৌছে যায় গন্তব্যে অর্থ্যাৎ ২২ ও ২৩ নম্বর খুঁটির সামনে। এখন এটির পজিশনিং চলছে।
এটি বসে গেলে পদ্মা সেতু ২৫৫০ মিটার অর্থ্যাৎ আড়াই কিলোমিটারেরও বেশী দৃশ্যমান হবে। ১৬তম স্প্যান বাসানোর মাত্র সাত দিনের ব্যবধানে এই স্প্যানটি বসানো হচ্ছে। এর আগে ১৬তম স্প্যানটি গত ১৯ নভেম্বর ১৬ ও ১৭ নম্বর খুঁটিতে বসেছিল। দায়িত্বশীল প্রকৌশলীরা জানান, এখন এভাবেই ঘন ঘন স্প্যান বসবে।
কয়েক মাস আগেই ‘৪ডি’ নম্বর স্প্যানটি স্থাপনের উপযোগী করে খুঁটির কিছুটা দূরে পদ্মা তীরে স্টোর করে রাখা ছিল। ধূসর রঙের ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্যরে ৩ হাজার ১৪০ টন ওজনের ¯প্যানটিকে বহন করে তিন হাজার ৬০০ টন ধারণ ক্ষমতার ‘তিয়ান ই’ ভাসমান ক্রেনবাহী জাহাজ।
পদ্মা সেতু কর্তৃপক্ষের প্রকৌশলী হুমায়ূন কবির জানিয়েছেন, ২২ ও ২৩ নম্বর খুঁটির জন্য তৈরি করা ‘৪ডি’ স্প্যানটি ২৮ ও ২৯ নম্বর খুঁটির কাছে প্লাটফরম তৈরি করে নদীর তীরে রাখা ছিল। কিন্তু নদীর চ্যানেলের নাব্যতার কারণে স্প্যানটি সেখান থেকে তুলে এনে স্থাপনে বিলম্ব হয়েছে। পলি জমে থাকায় নাব্যতা সঙ্কটের কারণে ক্রেনবাহী জাহাজ খুঁটির কাছে পৌঁছতে পারছিল না তাই স্প্যান বসাতে বিলম্ব হচ্ছিল। তবে দিনরাত ড্রেজিং করে ওই এলাকায় নাব্যতা ফিরিয়ে আনা হয়েছে। এখন আর কোনও সমস্যা নেই।
এছাড়া ৪ বা ৫ ডিসেম্বর ১৮তম স্প্যান বসানোর কথা রয়েছে। ১৮তম স্প্যানটি বসবে ১৭ ও ১৮ নম্বর খুঁটিতে। পরবর্তীতে ডিসেম্বরেই ২১ ও ২২ নম্বর খুঁটিতেও স্প্যান বসানোর পরিকল্পনা রয়েছে। এছাড়া ৩৩-৩২ ও ৩১-৩২ নম্বর খুঁটিতেও স্প্যান বসবে অল্প সময়ের মধ্যে। খুঁটি এবং স্প্যান তৈরি হয়ে যাওয়ায় দ্রুত সময়ের ব্যবধানে স্প্যান উঠতে থাকবে। এদিকে চীন থেকে আরও দু’টি স্প্যান বাংলাদেশে পৌঁছেছে। সমুদ্র পথে ১৯ নভেম্বর বিকালে স্প্যান দু’টি মোংলা পোর্টে এসে পৌছায়। কাস্টমসের কাজ চলছে এখন। শিঘ্রই এই স্প্যান দুটিও মাওয়ায় এসে পৌঁছানোর কথা রয়েছে।
সেতুর ৪২টি খুঁটির মধ্যে এরই মধ্যে ৩৩টি খুঁটি নির্মাণ সম্পন্ন হয়ে গেছে। এছাড়া আলোচিত ৭ নম্বর খুঁটির কাজ চলতি মাসেই শেষ হতে যাচ্ছে। আগামী ১০ ডিসেম্বর ৬ ও ৩০ নম্বর খুঁটির কাজ সম্পন্ন হওয়ার কথা রয়েছে। আর বাকি ৮, ১০, ১১, ২৬, ২৭ ও ২৯ নম্বর খুঁটির কাজ আগামী মার্চের মধ্যে শেষ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
ওই প্রকৌশলী আরও জানান, ঘন কুয়াশাসহ আবহাওয়া আর ভাসমান ক্রেনটির অ্যাংকরিংসহ সবকিছু অনুকুলে থাকায় ১৭তম স্প্যানটি আজই বসতে যাচ্ছে। সেতুটির মাঝামাঝি স্থানে মাঝের চরে এই স্প্যান বসানো নিয়ে বিশেষ এক পরিবেশ তৈরী হয়েছে।
জাহাজটি পজিশনিং করে ইঞ্চি ইঞ্চি মেপে স্প্যানটিকে পিলারের উচ্চতায় তোলার প্রক্রিয়া চলছে। স্প্যানটি রাখা হবে দু’পিলারের বেয়ারিং এর ওপর।
মাওয়া কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডে ‘৬এ’, ‘৬-বি’ ও ‘৬-সি’ পেইন্টিং শেষে পিলারের ওপর নিয়ে যাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে। ৪১টি স্প্যানের মধ্যে মাওয়ায় ৩১টি স্প্যান আছে। এর মধ্যে ১৬টি স্প্যান ইতিমধ্যে বসানো হয়েছে।
২০১৪ সালের ডিসেম্বরে পদ্মাসেতুর নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়েছে। মূল সেতু নির্মাণের জন্য কাজ করছে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি (এমবিইসি) ও নদী শাসনের কাজ করছে দেশটির আরেকটি প্রতিষ্ঠান সিনো হাইড্রো করপোরেশন।
৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এ বহুমুখী সেতুর মূল আকৃতি হবে দোতলা। কংক্রিট ও স্টিল দিয়ে নির্মিত হচ্ছে এ সেতুর কাঠামো। অনেক ষড়যন্ত্র পেরিয়ে পদ্মা সেতু এখন নিজস্ব অর্থায়নে দ্রুত গতিতে কর্মযজ্ঞ চলছে। পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ সম্পূর্ণ হওয়ার পর আগামী ২০২১ সালেই খুলে দেয়া হবে।

আরো সংবাদ
যশোর জেলা
ফেসবুক পেজ
সর্বাধিক পঠিত