৩৭ মিলিয়ন সংখ্যালঘু গুম হওয়ার অভিযোগ তুলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল ট্রাম্পের কাছে নালিশ দিয়েছেন বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক প্রিয়া সাহা।
গত বুধবার মার্কিন টিভি চ্যানেল এবিসি নেটওয়ার্কের চ্যানেল এবিসি ফোর ইউটাহ প্রকাশ করে। এর পরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে সেটি।
সেখানে দেখা গেছে হোয়াইট হাউজে ১৬টি দেশের ধর্মীয় নিপীড়নের শিকার ২৭ ব্যক্তির সঙ্গে বৈঠক করছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক প্রিয়া সাহাও সে বৈঠকে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পান।
প্রিয়া সাহা মার্কিন প্রেসিডেন্টকে বলেন, ‘আমি বাংলাদেশ থেকে এসেছি। বাংলাদেশে ৩ কোটি ৭০ লাখ হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টান নিখোঁজ রয়েছেন। দয়া করে আমাদের লোকজনকে সহায়তা করুন। আমরা আমাদের দেশে থাকতে চাই।’
এরপর তিনি বলেন, ‘এখন সেখানে ১ কোটি ৮০ লাখ সংখ্যালঘু রয়েছে। আমরা আমাদের বাড়িঘর খুইয়েছি। তারা আমাদের বাড়িঘর পুড়িয়ে দিয়েছে, তারা আমাদের ভূমি দখল করে নিয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো বিচার পাইনি।’
ভিডিওতে দেখা গেছে, এক পর্যায়ে ট্রাম্প নিজেই সহানুভূতির সঙ্গে এই নারীর সঙ্গে হাত মেলান।
এ সময় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ওই নারীকে প্রশ্ন করেন, ‘কারা জমি দখল করেছে, করা বাড়ি-ঘর দখল করেছে?’
ট্রাম্পের প্রশ্নের উত্তরে ওই নারী বলেন, ‘তারা মুসলিম মৌলবাদি গ্রুপ এবং তারা সব সময় রাজনৈতিক আশ্রয় পায়। সব সময়ই পায়।’
ভিডিওতে দেখা যায়, প্রিয়া সাহার এসব নালিশের পর ট্রাম্পের মুখে কোনোই প্রতিক্রিয়া নেই। তিনি সেসব অভিযোগের কোনো উত্তর না দিয়ে তার সহকর্মীদের কাছে জানতে চান, তার হেলিকপ্টার ল্যান্ড করেছে কিনা! সেটি এখন কোথায়?
বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকেও তীব্র নিন্দা জানানো হয়েছে। সংখ্যালগুদের নিয়ে যেসব অভিযোগ ট্রাম্পকে দিয়েছেন তিনি তা প্রমাণ করতে না পারলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
এদিকে সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, কে এই প্রিয়া সাহা? জানা গেছে, বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ -খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির একজন সাংগঠনিক সম্পাদক এ প্রিয়া সাহা।
এছাড়াও তিনি বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) ‘শারি’-এর নির্বাহী পরিচালক হিসেবেও দায়িত্বরত ।
তার গ্রামের বাড়ী পিরোজপুর জেলার চরবানিরীর মাটিভাঙ্গা নাজিরপুর। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন প্রিয়া। রোকেয়া হলে থাকতেন তিনি।
সে সময় তিনি ছাত্র ইউনিয়নের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তিনি ‘মহিলা ঐক্য পরিষদ’এর কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।
বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের জন্য গতবছর তাকে মহিলা ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।
বর্তমানে ‘শারি’ এনিজিও সংস্থার মাধ্যমে প্রিয়া নিজ এলাকার দলিত সম্প্রদায়কে নিয়ে কাজ করেন।
তার স্বামী মলয় সাহা দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপ-পরিচালক। কয়েক বছর ধরেই যুক্তরাষ্ট্রে প্রিয়া সাহার দুই মেয়ে বসবাস করছেন। কিছুদিন পূর্বে সেখানে যান প্রিয়া সাহা।
মাসিক ‘দলিত কণ্ঠ’ নামে একটি পত্রিকা সম্পাদনাও করছেন প্রিয়া সাহা।