বড় ধরনের রি-ব্র্যান্ডিং বা নতুন চমক নিয়ে সামনে আসার অংশ হিসেবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক তার করপোরেট নাম পরিবর্তন করে ‘মেটা’ নাম ধারণ করেছে। প্রতিষ্ঠানটি বলছে—তারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বাইরেও ভার্চুয়াল রিয়েলিটির (ভিআর) মতো ক্ষেত্রগুলোতে নিজেদের পরিসর বাড়িয়েছে। ফলে, এখন একটি ছাতার নিচে সবকিছু আরও ভালোভাবে ‘অন্তর্ভুক্ত’ করার সময় হয়েছে। যে কারণে এ নাম পরিবর্তন তবে, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম ও হোয়াটসঅ্যাপের মতো স্বতন্ত্র প্ল্যাটফর্মগুলোর নাম পরিবর্তন হচ্ছে না। নাম বদলেছে শুধু এসব প্ল্যাটফর্মের মূল কোম্পানির। সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।
সম্প্রতি ফেসবুকের একজন কর্মচারী চাকরি ছাড়ার পর সাবেক প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে বিভিন্ন গোপন তথ্য ফাঁস করেন। এরপর ফেসবুক সম্পর্কে একের পর এক নেতিবাচক খবর প্রকাশ হতে থাকে। এমন পরিস্থিতির মধ্যেই নাম পরিবর্তন করল ফেসবুক।
ফ্রান্সেস হাওগেন ফেসবুকের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে বলেছিলেন—ফেসবুক গ্রাহকের ‘নিরাপত্তার চেয়ে কোম্পানির মুনাফাকে’ প্রাধান্য দিয়ে থাকে।
এর আগে আরেক শীর্ষ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান গুগল ২০১৫ সালে তাদের মূল কোম্পানির নাম বদলে ‘অ্যালফাবেট’ রাখে। তবে, সে নামটি আড়ালেই পড়ে রয়েছে।
ফেসবুকের সহপ্রতিষ্ঠাতা এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মার্ক জাকারবার্গ গতকাল বৃহস্পতিবার কোম্পানির নতুন নাম ঘোষণা করেন। তিনি মূলত ‘মেটাভার্স’ নামের একটি অনলাইন দুনিয়া তৈরির পরিকল্পনা সবার সামনে উপস্থাপন করেছেন, যেখানে মানুষ ভার্চুয়াল পরিবেশে ভিআর হেডসেট ব্যবহার করে বিভিন্ন কাজ করার পাশাপাশি, গেম খেলা এবং যোগাযোগ করতে পারবে।
জাকারবার্গ বলেন, ‘আমরা যা কিছু করছি এবং ভবিষ্যতে করব, তার সবটা বর্তমান ব্র্যান্ডটি সম্ভবত উপস্থাপন করতে পারছে না, তাই পরিবর্তন দরকার।’
‘আমি আশা করি—সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের একটি মেটাভার্স কোম্পানি হিসেবে দেখা হবে। আর, আমরা সামনে যা তৈরি করতে যাচ্ছি, সেটার ওপর ভিত্তি করেই আমাদের কাজ ও পরিচয় গড়ে উঠবে’, এক ভার্চুয়াল কনফারেন্সে জাকারবার্গ এ কথা বলেন।
জাকারবার্গ আরও বলেন, ‘আমরা এখন আমাদের ব্যবসাকে দুটি ভিন্ন অংশ হিসেবে দেখছি—একটি অংশ আমাদের অ্যাপস পরিবারের জন্য এবং আরেকটি অংশ ভবিষ্যতের প্ল্যাটফর্মে কাজের জন্য৷’
‘আর এর অংশ হিসেবে সময় এসেছে একটি নতুন কোম্পানি ব্র্যান্ড গ্রহণ করার, যেটি আমরা যা কিছু করি, আমাদের পরিচয় এবং আমরা কী করতে চাই—সে বিষয়গুলোকে প্রতিফলিত করবে।’
যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার মেনলো পার্কে গতকাল সাবেক ফেসবুক কোম্পানি তার সদর দপ্তরে একটি নতুন সাইনবোর্ড উন্মোচন করে, যেখানে আগের থাম্বস-আপ ‘লাইক’ লোগোটি সরিয়ে সে জায়গায় একটি নীল ইনফিনিটি বা অসীম চিহ্নের লোগো বসানো হয়েছে।
জাকারবার্গ বলেন, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ব্যবহারকারীদের কোম্পানির অন্যান্য পরিষেবাগুলো ব্যবহারের জন্য আর ফেসবুক ব্যবহার করা লাগবে না। নতুন নামটি সে বিষয়টির প্রতিফলন।
‘মেটা’ শব্দটি এসেছে গ্রিক শব্দ থেকে, যার অর্থ—‘গণ্ডির বাইরে’।
গড়পড়তা মানুষের কাছে মেটাভার্স দেখতে ভিআর-এর একটি সংস্করণের মতো মনে হতে পারে, কিন্তু কিছু মানুষ বিশ্বাস করে—এই মেটাভার্স হতে পারে ইন্টারনেটের ভবিষ্যৎ। সেখানে মানুষ কম্পিউটারে কাজ করার পরিবর্তে মেটাভার্স নামের ভার্চুয়াল জগতে হেডসেটের সাহায্যে প্রবেশ করতে পারবে। যেখানে সব ধরনের ডিজিটাল পরিবেশের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করা যাবে৷
আশা করা হচ্ছে—মেটাভার্স ভার্চুয়াল জগতটি কাজ, খেলা ও কনসার্ট থেকে শুরু করে বন্ধুবান্ধব ও পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগের জন্যও ব্যবহার করা যাবে।
ফেসবুক বলছে, তারা ১ ডিসেম্বর থেকে নতুন স্টক টিকার এমভিআরএস-এর অধীনে কোম্পানির শেয়ার লেনদেন শুরু করতে চায়।
ফাঁস হওয়া নথি
ফেসবুক (মেটা) প্রতিষ্ঠানটির সুখ্যাতির ওপর বার বার আঘাত এসেছে। সবশেষ দ্য ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে—করোনার মহামারিকালে কোভিড টিকার বিষয়ে নানা ভুল তথ্য সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ফেসবুকের কাছে থাকা সত্ত্বেও তারা নীতি-নির্ধারকদের সেসব তথ্য দেয়নি।
সাবেক কর্মচারী হাওগেন গণমাধ্যমের সামনে ফেসবুকের যেসব অভ্যন্তরীণ নথি ফাঁস করেছেন, তার ওপর ভিত্তি করে ধারাবাহিকভাবে প্রতিবেদন প্রকাশ করছে দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট। অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে এসব প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে—ফেসবুক এক গবেষণায় দেখেছে যে, ইনস্টাগ্রাম কিশোর-কিশোরীদের মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষতি করছে এবং যুক্তরাষ্ট্রের বাইরের ব্যবহারকারীদের ঘৃণামূলক বক্তব্য সরাতে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হচ্ছে।
জাকারবার্গ দ্য ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদনের বিষয়ে বলেছেন—ফাঁস হওয়া নথিগুলোকে ‘একটি সমন্বিত প্রয়াসে এমনভাবে বেছে বেছে ব্যবহার করা হয়েছে, যেন প্রতিষ্ঠানটি সম্পর্কে একটি মিথ্যা চিত্র দাঁড় করানো যায়।’