আজ - শুক্রবার, ২৭শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৫শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি, (শীতকাল), সময় - রাত ৩:৫৪

বুকভরা বাওড়ে প্রকাশ্যে চলছে বালি উত্তোলন- শহীদের খুঁটির জোর কোথায়?

মুনতাসির মামুন, জেষ্ঠ প্রতিবেদক (অনুসন্ধান): যশোর সদর উপজেলার দেয়াড়া ইউনিয়নের বুকভরা বাওড়ে ভূ-গর্ভ থেকে অবৈধ ভাবে চলছে দেদারছে বালি উত্তোলন। স্থানীয় প্রভাবশালী আওয়ামীলীগ ও যুবলীগ নেতাদের দাপটে কোনঠাঁসা হয়ে পড়েছে স্থানীয় বাসিন্দারা। হুমকির মুখে পড়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় উপসানালয় (মসজিদ)  সহ শত শত বসত বাড়ী। বার বার বাঁধা প্রদান করেও কোন কূল কিনারা পাননি স্থানীয়রা বীপরিতে মারধরের শীকার হয়েছেন অনেকেই।

মঠবাড়ীয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ওয়াজেদ আলী খানজাহান আলী 24/7 নিউজ কে জানান। আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সহ বসতবাড়ীও হুমকির মুখে পড়েছে। প্রশাসনের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ বরাবর কয়েকবার অভিযোগ জানিয়েও তেমন কোন ফল হয়নি। প্রশাসনের লোকজন এসে কয়েকবার বাওড় থেকে বালি উত্তোলনের মেশিন তুলে দিয়ে গেছে। কিছুদিনপর পরিস্থিতি আগের মতই হয়ে গেছে।

স্থানীয় জেলে হিরু, হাবিবুর ও নান্নু জানান বালি উত্তোলনের ফলে আমাদের ফসলী জমি নিঁচু হয়ে যাচ্ছে, বাড়ীর দেয়াল ফেঁটে যাচ্ছে, গাছগাছালি মারা যাচ্ছে ইত্যাদি নানা সমস্যা তুলে ধরে তাঁরা প্রশাসনের আশুহস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

বুকভরা বাওড় কমিটির সভাপতি বাবু বিষনু পদ সরকার খানজাহান আলী 24/7 নিউজ কে জানান ‍,আমি জেলা প্রশাসক , মৎস অধিদপ্তর এমনকি থানার ওসিকেও ঘটনা জানিয়েছি। কিন্তু প্রতিকার পাইনি । আমি নিজে বাঁধা প্রদান করতে গেলে আমাকেও লাঞ্ছিত করেছে তাঁরা।

খানজাহান আলী 24/7 নিউজের অনুসন্ধানী দল বুকভরা বাওড় তথা মঠবাড়ীয়া, পশ্চিম ফরিদপুর, অমদাবাদ, আরিচপুর ও চান্দুটিয়ায় তথ্য সংগ্রহ করতে গেলে বেরিয়ে আসে ঘটনার পেছনের ঘটনা। স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতা সদর উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ও সাবেক ইউপি সদস্য শাহিদুজ্জামান শহীদের নেতৃত্বে ৩ টি গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে বাওড়ে। এদের মধ্যে রাজ্জাক ও আনোয়ারে ১ টি গ্রুপ,আলী মেম্বার ও হযরত আলীদের ১ টি গ্রুপ ও আমির আলী সামির আলী ও মন্টুদের ১ টি গ্রুপ। মোট তিনটি গ্রুপ ভূ-গর্ভ থেকে অবৈধ বালি উত্তোলনে কাজ করছে।

যোগাযোগ করা হলে অবৈধ বালি উত্তোলন কাজে নিয়োজিত আলী মেম্বার গ্রুপের আলী খানজাহান আলী 24/7 নিউজের কাছে নিঃশঙ্কোচে অকপটে সব দোষ স্বীকার করেন। অন্য দুটি গ্রুপের দিকে ইঙ্গিত করে আলী বলেন ওরা তুলছে আমিও তুলছি। মাঝে মাঝে প্রশাসনের লোকজন এসে মেশিন তুলে দিয়ে যায়। বিভিন্ন ভাবে তাদের ম্যানেজ করে অবার কাজ শুরু করেন তাঁরা। অপরাধ জেনেও কেন রাষ্ট্রীয় সম্পদ অবৈধ পন্থায় ভোগ করছেন এমন প্রশ্নের জবাবে আলী জানান, এটা আমার ব্যবসা । এ সময় তিনি অনুসন্ধানী প্রতিবেদকের দুটি বালি উত্তোলক মেশিন বসানোর ব্যবস্থা করে দেবেন বলেও আশ্বাস প্রদান করে বলেন ভাই সরকারী মাল চলেন একসাথে ভাগ করেনি।

গোটা সিন্ডিকেট প্রধান শহীদ জানান, আমি সরকারের সাথে যুদ্ধ করে খাচ্ছি ভাই। এখন আমার অন্য কোন ব্যবসা নাই আমি কি করবো। এ সময় শহীদ নিজেকে যশোর থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহীক স্মৃতি পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক বলে দবি করেন। বলেন, এখন আমরা ভাই ভাই । আমাকে কি করতে হবে সেটা বলেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে সাপ্তাহীক স্মৃতি পত্রিকার  ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক শহীদ নন গোলাম মুস্তাফা। তারপর শহীদও এই প্রতিবেদক কে ম্যানেজ করার বিীভন্ন চেষ্টা করেন।

অভিযোগ রয়েছে প্রতিদিন গড়ে আট থেকে নয় শতাধিক ট্রাক বালি অবৈধভাবে উত্তোলন করে চক্রটি। সারাদিন নিজস্ব সন্ত্রাসী বাহীনির স্বশস্ত্র অস্ত্রের বেষ্টনির মধ্য দিয়েই দেদারছে চলছে এই কর্মযোজ্ঞ। স্থানীয় বাসিন্দারা এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক যশোর , এসপি যশোর ও কোতয়ালি মডেল থানা যশোরের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন। জনৈক শিক্ষক বলেন আমরা আইনের কাছে যেতে পারছিনা আমরা তো জিম্মি, আইন কি স্বপ্রণোদিত হতে পারেনা? ( চলবে……) চোখ রাখুন অনুসন্ধানের ২য় পর্বে।

আরো সংবাদ