আজ - সোমবার, ২৩শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৮ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২১শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি, (শীতকাল), সময় - বিকাল ৪:১৯

বেনাপোলের সেই তুহিনের স্ত্রীর বেদনাদায়ক পোস্ট

শার্শা (যশোর) প্রতিনিধিঃ ঈদ মানে আনন্দ, ঈদ মানেই খুশি। আবার এই ঈদ আসলেই হয়তো অনেকের মনে পড়ে যায় বেদনাদায়ক পুরানো দিনের নানা স্মৃতি। ঠিক তেমননি এবার ঈদে ফেসবুক জগতে ভাইরাল হলো যশোরের শার্শা উপজেলার সাবেক ছাত্রলীগের সভাপতি ও বেনাপোল পৌরসভার নির্বাচিত প্রথম প্যানেল মেয়র তারিকুল আলম তুহিনের সহধর্মিণী শামীমা আলম সালমার।

যে পোস্টটা নিখোঁজ তুহিনের স্ত্রী শামীমা আলম সালমার ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডিতে লেখা হয়েছে। তার সবটুকু দেওয়া হলো।।

“আমরাও ঈদ করতে চাই”

বরাবর,
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামীলীগ সভানেত্রী
তেজগাঁও, ঢাকা-১২১৫
বাংলাদেশ

বিষয়:-বাবাহারা সন্তানের অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ।

মাননীয় আসসালামুআলাইকুম,
আশা করছি,কোটি মানুষের নয়নের মণি হয়ে সকলের দোয়া ও ভালোবাসায় আপনি সু্স্থ ও সুন্দর আছেন।

আমি আপনার দলের একজন ক্ষুদ্র কর্মী বিএনপি জামাত জোট সরকারের আওয়ামী কর্মী নিধনের নামে চলা সামরিক বর্বরতার কলুষিত অধ্যায় “অপারেশন ক্লিন হার্টের” অত্যাচারে অমানবিক নির্যাতন শিকার করা, নিখোজ হওয়ার আগ দিন পর্যন্ত যার হাত ও পায়ের নখ ছিলনা(ওই নির্যাতনের সময়ই তার হাত ও পায়ের নখ প্লাস দিয়ে উঠিয়ে ফেলে সামরিক বাহিনীর সদস্যরা,অপরাধ আওয়ামীলীগ করে)বারবার কারা নির্যাতিত, বিরোধীদলীয় অবস্থানে থাকাকালীন শার্শা উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও বেনাপোল পৌরসভার নির্বাচিত প্রথম প্যানেল মেয়র তারিকুল আলম তুহিনের সহধর্মিণী ও বাংলাদেশ যুব মহিলা লীগের একজন কর্মী, তুহিনের ও আমার পিতৃকুল এবং মাতৃকুলের সবাই আওয়ামী রাজনীতির সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমার স্বামী ২০১৩ সালের ০৭ই মার্চ নিখোজ হন,তৎকালীন সময়ে উক্ত ব্যাপারে আপনি আমাদের পাশে ছিলেন এবং শার্শার মাননীয় এমপি আফিল উদ্দীনের মাধ্যমে আমাদেরকে গণভবনে ডেকে মায়ের স্নেহ ভালোবাসায় আগলে ধরেছিলেন, এঘটনার বহৃকাল অতিবাহিত হওয়ার পর আজও আমি ও আমার সন্তান নিখোজ তুহিনের খোজ পাইনি,জানিনা পাব কিনা! আমি তুহিনের রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের বিভিন্ন ধরনের হুমকি ও ভয়-ভীতি উপেক্ষা করে রাজপথের আওয়ামী রাজনীতিতেই আছি, আমার বাবা,মা,ভাইদের সহযোগীতায় রাজনৈতিক খরচ বহন করি, আর শ্বশুর বাড়িতে থাকলেও আমার বাবার পরিবারই আমার ও আমাদের সন্তানের যাবতীয় খরচ বহন করে,আমি নিজে কখনও কোনভাবেই দলীয় নাম ব্যবহার করে সুবিধা গ্রহন করিনি, আর নিজে কোন চাকরী বা ব্যবসার সাথে জড়িত নই, ব্যবসা করতে মূলধনের প্রয়োজন যেটা আমার নেই,তুহিন নিখোজ হওয়ায় তার কোন সম্পদ বা অর্থ আমি বা আমার সন্তান পাইনি,যাদের কাছে টাকা পেত তারাও সেইগুলো আর ফেরত দেয়নি, আবার মুক্তিপণের টাকা বাবদ আমি প্রায় ২৫লক্ষ টাকা আমার বাবার কাছ থেকে নিয়ে মুক্তিপণ দিয়েও তাকে মুক্ত করতে পারি নাই।
আমি নিজের ভাগ্য বলেই এসব মেনে নিয়ে রাজনীতির চর্চা করলেও, আমার সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে আমি সন্দিহান,জানিনা আর কতদিন রাজনীতি ও পারিবারিক খরচ আমার বাবার বাসা থেকে নিয়ে চালাতে পারব, সত্যিই জানিনা।

আজ ঈদের দিন আমাদের সন্তান যখন বলে আম্মু সবার বাবা আছে আমার বাবা কোথায়,সবাই বাবার সাথে ঈদের নামাজে যাচ্ছে আমার বাবা কি আমাকে নিয়ে নামাজে যাবে না আম্মু,আমার বাবা কই আম্মু, বাবা না আসলে আমি ঘরের বাইরে যাব না,বাবা আসবে একদিন! এখন এই বলে সান্তনা দিলেও সন্তানের কাছে তার ভবিষ্যৎ নিয়ে কি সান্তনা দিব তা এই হতভাগা মা জানেনা।

পরিঃশেষে আমি আমার সন্তানের নিরাপদ ভবিষ্যৎের দাবি নিয়ে মানবতার মায়ের সামনে আচল পেতে দাড়ালাম, আমি বিশ্বাস করি যে মানুষের ধমনীতে বঙ্গবন্ধুর রক্ত বহমান সেই মমতাময়ী শেখ হাসিনা এই হতভাগা মাকে খালি হাতে ফেরাবে না।

রক্তসিক্ত প্রার্থনায়,
শামীমা আলম সালমা
(নিখোজ তুহিনের স্ত্রী ও হতভাগা তুমুলের মা)
আপনার দলের একজন ক্ষুদ্র নারী কর্মী।

আরো সংবাদ