ডেস্ক রিপোর্ট।। কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচি (কাবিখা) প্রকল্পের ১৬ মেট্রিক টন ওজনের ৫৫৫ বস্তা চাল চুরির মামলায় যশোরের মনিরামপুর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান উত্তম চক্রবর্তী জড়িত বলে গ্রেপ্তার হওয়া আসামিদের জবানবন্দিতে উঠে এসেছে। ওই মামলায় গ্রেপ্তার পাঁচজন ইতিমধ্যে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে তিনজন উত্তম চক্রবর্তীর জড়িত থাকার কথা বলেছেন।
এদিকে চাল আত্মসাতের ঘটনায় উত্তম চক্রবর্তী জড়িত কি না, তা তদন্ত করে প্রতিবেদন পাঠানোর জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে জেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়ে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। ইতিমধ্যে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) রফিকুল হাসানকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
উত্তম চক্রবর্তী স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্যের ভাগনে। অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ভাইস চেয়ারম্যান উত্তম চক্রবর্তী বলেন, ‘অভিযানের সময় পুলিশ চালসহ দুজনকে আটক করেছিল। তাঁরা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে শহিদুল ও জগদীশের নাম বলেছেন। পরে পুলিশ শহিদুল ও জগদীশকে মারধর করে আমার বিরুদ্ধে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি নিয়েছে। আমি চাল চুরির বিষয়ে কিছুই জানি না।’
পুলিশ ও আদালত সূত্র জানায়, গত ৪ এপ্রিল বিকেলে মনিরামপুর উপজেলার বিজয়রামপুর এলাকার ‘ভাই ভাই রাইস মিল অ্যান্ড চাতাল’ নামের একটি চালকলে অভিযান চালান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আহসান উল্লাহ শরিফী ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম। চাতালটির গুদাম থেকে ট্রাকবোঝাই কাবিখা প্রকল্পের ৫৫৫ বস্তা চাল জব্দ করা হয়। এ ঘটনায় চালকলের মালিক আবদুল্লাহ আল মামুন ও ট্রাকচালক ফরিদ হাওলাদারকে আটক করে পুলিশ। পরে মনিরামপুর থানার উপপরিদর্শক তপন কুমার সিংহ আটক দুজনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতপরিচয়ের আরও কয়েকজনকে আসামি করে মামলা করেন। পরে তাঁদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়। ওই দুই আসামি আদালতে স্বীকারোক্তিতে আরও তিনজনের জড়িত থাকার কথা জানান। সেই তিনজন হলেন মনিরামপুর উপজেলার বিজয়রামপুর গ্রামের চালকল ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলাম, জুড়ানপুরের বিদ্যালয়ের প্রহরী জগদিশ দাস ও একই গ্রামের বাসিন্দা আবদুল কুদ্দুস। পরে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁরাও আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
গত ১০ মে আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে আসামি শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘গত ৩০ মার্চ মনিরামপুর খাদ্যগুদামের সমানে দাঁড়িয়ে চালকলের ব্যবসায়ী আবদুল্লাহ আল মামুন, প্রহরী জগদীশ দাস ও আবদুল কুদ্দুসকে চালসংক্রান্ত আলোচনা করতে দেখি। তখন তাঁরা আমাকে ডেকে সরকারি ১৬ টন চাল বিক্রির কথা জানান। সরকারি চাল বলে আমি কিনতে রাজি হইনি। সেখানে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান উত্তম চক্রবর্তী ও কুদ্দুসের কাছ থেকে ১৬ টন চাল আবদুল্লাহ আল মামুন ৫ লাখ টাকায় কিনে নেবেন বলে কথা হয়েছে। পরে স্থানীয় বাজারে গিয়ে জানতে পারি, ৪ লাখ ৮০ হাজার টাকায় উত্তম চক্রবর্তী ওই চাল আবদুল্লাহ আল মামুনের কাছে বিক্রি করেছেন।’
২৭ জুলাই দেওয়া জবানবন্দিতে জগদীশ দাস বলেন, ‘চালকল ব্যবসায়ী শহিদুল ও আমার সামনেই উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান উত্তম চক্রবর্তী আরেক চালকলের মালিক আবদুল্লাহ আল মামুনের কাছে সরকারি ৫৫৫ বস্তা চাল ৪ লাখ ৮০ হাজার টাকায় বিক্রি করেন। উত্তম চক্রবর্তী গত ৩০ মার্চ মামুনের চালকলে গিয়ে চাল বিক্রির ওই টাকা নিয়ে আসেন।’ এর আগে ১৩ জুলাই প্রায় একই ধরনের স্বীকারোক্তি দেন অপর ব্যক্তি আবদুল কুদ্দুস।
মামলাটি তদন্তকারী কর্মকর্তা ছিলেন গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মারুফ আহমেদ। তিনি সম্প্রতি বদলি হয়েছেন। নতুন করে তদন্তের জন্য পরিদর্শক সৌমেন দাসকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
জানতে চাইলে পুলিশ সুপার মুহাম্মদ আশরাফ হোসেন বলেন, মামলাটির তদন্ত চলছে। তদন্তকারী কর্মকর্তা বদলি হওয়ায় নতুন একজন পরিদর্শককে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তদন্ত শেষে দ্রুত সময়ের মধ্যে অভিযোগপত্র দেওয়া হবে।
এদিকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ একটি তদন্ত শুরু করেছে স্থানীয় জেলা প্রশাসন। এ বিষয়ে যশোরের জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান বলেন, সরকারি চাল আত্মসাতের ঘটনায় উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান উত্তম চক্রবর্তী জড়িত কি না, তা তদন্তের জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে একটি চিঠি দেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) রফিকুল হাসানকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।