করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে সর্বাত্মক লকডাউন ঘোষণার পর ঢাকা ছাড়তে শুরু করেছে সব শ্রেণির সাধারণ মানুষ। গণপরিবহণ বন্ধ থাকলেও ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস, অটোরিকশা ও মোটরসাইকেলযোগে ঢাকা ছাড়ছেন দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের হাজার হাজার মানুষ। ঘরে ফিরতে গিয়ে পথঘাটে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন তারা। এছাড়া লকডাউনের সুযোগে ব্যক্তিগত ছোট গাড়ির মালিকরা তিন গুণ ভাড়া আদায় করে যাত্রী আনা নেওয়া করছে।
সোমবার সকাল থেকে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক ও পাটুরিয়া ঘাটে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস, সিএনজি, অটো রিকশা আর মোটরসাইকেলের লম্বা লাইন। ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা এসব ছোট যানবাহনের ভেতর গাদাগাদি করে এবং নির্ধারিত ভাড়ার চাইতে তিন-চার গুণ বেশি ভাড়া নিয়ে যাত্রী নেওয়া হচ্ছে।
যাত্রীদের অভিযোগ, রাস্তায় ভাড়া নিয়ে নৈরাজ্য চালানো হলেও দেখার কেউ নেই। সাধারণ সময় গণপরিবহণে পাটুরিয়া থেকে সর্বোচ্চ ১২০ টাকা ভাড়া নেওয়া হতো। কিন্তু লকডাউনে গণপরিবহণ বন্ধ থাকায় প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাসে ভাড়া জনপ্রতি নেওয়া হচ্ছে পাঁচশ থেকে ছয়শ টাকা পর্যন্ত। এছাড়া মোটরসাইকেলেও যাত্রী আনা নেওয়া বাবদ ঢাকা থেকে হাজার পর্যন্তও গনতে হচ্ছে।
এদিকে লকডাউনের কারণে পাটুরিয়া ঘাটে লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকলেও ফেরি চলাচল করছে। সাধারণ যাত্রীরা ফেরিতে গাদাগাদি করে নদী পার হচ্ছে। যাত্রীর পাশাপাশি ব্যক্তিগত প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস ও জরুরি পণ্যবাহী ট্রাক এবং রোগী বহনকারী অ্যাম্বুলেন্স পারাপার অব্যাহত রয়েছে। তবে ১৪ তারিখ থেকে কঠোর লকডাউন ঘোষণার পর থেকে ঘাটে ছোট গাড়ির অতিরিক্ত চাপ বেড়েছে। দেশে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষজন ঢাকা ছেড়ে গ্রামের বাড়ি ফিরতে গিয়ে অনেক দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন।
বিআইডব্লিউটিসি আরিচা কার্যালয়ের উপ-মহাব্যবস্থাপক জিল্লুর রহমান জানান, আগামী ১৪ তারিখ থেকে সর্বাত্মক লকডাউন ঘোষণার পর থেকেই পাটুরিয়া ঘাটে প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস, জরুরি পণ্যবাহী ট্রাকে চাপ বেশি পড়েছে। সকাল থেকে এসব গাড়ির অতিরিক্ত চাপের পাশাপাশি যাত্রীর চাপও রয়েছে। ফলে ১৪টি ফেরি দিয়ে এসব যানবাহন ও যাত্রী পারাপার করা হচ্ছে। পাটুরিয়া ঘাটে সকাল থেকে আটকে আছে প্রায় দুই শতাধিক পণ্যবাহী ট্রাক। পর্যায়ক্রমে সেগুলো পার করা হচ্ছে।
এদিকে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ও আরিচা-কাজিরহাট নৌরুটে বিআইডব্লিউটিএ এবং নৌ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে বন্ধ রয়েছে লঞ্চ চলাচল। পরবর্তী নির্দেশ না পাওয়া পর্যন্ত লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকবে।
আরিচা লঞ্চ মালিক সমিতির কার্যকরী সদস্য উজ্জ্বল ফকির জানান, এতদিন তারা স্বাস্থ্যবিধি মেনে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া এবং আরিচা-কাজিরহাট নৌরুটে যাত্রী আনা-নেওয়া করেছেন। লকডাউন শুরু হলে করোনা নিয়ন্ত্রণে বিআইডব্লিউটিএ এবং নৌ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে লঞ্চ চলাচল বন্ধ রেখেছেন। কিন্তু আগামী ১৪ তারিখ থেকে সারাদেশে সর্বাত্মক লকডাউন শুরু হওয়ায় ঢাকা থেকে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের প্রচুর যাত্রী আসছে। এই অবস্থায় লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকায় স্বাস্থ্যবিধি না মেনে ফেরিযোগে ও ইঞ্জিনচালিত ট্রলারে নদী পার হচ্ছে। লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন লঞ্চ মালিকরা।
এদিকে সরকারঘোষিত লকডাউনের আজ শেষ দিনে এবং আগামী ১৪ তারিখ থেকে সাত দিনের সর্বাত্মক লকডাউন শুরু হবে এ কারণে মানিকগঞ্জ শহরের মার্কেটগুলোতে ছিল ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড়। শহিদ রফিক সড়কের বিভিন্ন মার্কেটে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তৃপ্তি প্লাজা, মায়ের দোয়া, ডলি প্লাজা, পৌর সুপার মার্কেট, সিটি মার্কেট ঘুরে ক্রেতার ভিড় রয়েছে। অনেক দোকানের সামনে জীবাণুনাশক স্প্রে থাকলেও সেগুলো ব্যবহার করছে না। আবার দোকানের ভিতর স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব মেনে বেচাকেনার কথা থাকলেও তার যেন বালাই নেই।
একই অবস্থা মানিকগঞ্জের কাঁচা-বাজারগুলোতেও। জেলা শহরের পুরান কাঁচাবাজার,বাসস্ট্যান্ড কাঁচাবাজার, বেউথা কাঁচাবাজার, গোলড়া সবজি আড়তসহ জেলার সাতটি উপজেলার হাট-বাজারগুলোতে একই অবস্থা বিরাজ করছে। স্বাস্থ্যবিধি না মেনে অনেকে কেনাকাটা করছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে ব্যবসা পরিচালনা করছেন কি না তা তদারকিতে জেলা প্রশাসনের কোনো কর্মকর্তা মাঠে দেখা যায়নি।