আজ - শনিবার, ২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২১শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি, (হেমন্তকাল), সময় - বিকাল ৫:০৪

মোল্লাপাড়ার বহুল আলোচিত আরিফকে পুলিশ পরিচয়ে অপহরণ।

স্টাফ রিপোর্টার ॥ যশোর শহরের বারান্দী-মোল্যাপড়ার আলোচিত আরিফকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে তুলে নেওয়ার অভিযোগ করেছেন তার পরিবার। সোমবার ঝিনাইদহ থেকে মাইক্রোবাসে তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সাথে যশোরে আসছিলেন তিনি। এ সময় কালীগঞ্জ থানার অদূরে প্রাণিসম্পদ অফিসের সামনে একদল অস্ত্রধারী আইনৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে মাইক্রোবাস থামিয়ে তাকে দ্রুত তুলে নিয়ে যায়। মঙ্গলবার বিকেলে প্রেস ক্লাবে যশোরে এক সংবাদ সম্মেলনে আরিফের স্বজনরা এ অভিযোগ করেন। তবে এ বিষয়ে পুলিশ বা অন্য কোনো সংস্থার কাছে কোনো তথ্য নেই বলে জানা গেছে।
যশোর শহরের বারান্দী-মোল্যাপাড়া ঢাকা রোড সংলগ্ন এলাকার আউয়াল মিস্ত্রির ছেলে আরিফ। তার আরেক ভাইয়ের নাম শাকির । গত বছরের ডিসেম্বর মাসে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ এলাকা থেকে অস্ত্র ও গুলিসহ আটক হয় শাকির। ওই মামলায় শাকির বর্তমানে ঝিনাইদহ জেলা কারাগারে আছেন। সংবাদ সম্মেলনে আরিফের ছোট ভাই আসিফ হোসেন সানি বলেন, সোমবার সকাল ৮ টার দিকে তিনিসহ পরিবারের ৭ সদস্যরা যান ঝিনাইদহে কারাগারে বড়ভাই শাকিরকে দেখতে। কারাগারে শাকিরের সাথে দেখা করার পর তারা মাইক্রোবাসে যশোরে উদ্দেশে রওনা হন। এ সময় যশোর-ঝিনাইদহ সড়কের কালীগঞ্জ থানার প্রাণিসম্পদ অফিসের সামনে তাদের বহনকারী মাইক্রোবাসটি আসা মাত্রই একটি পাজেরো জিপ গাড়ি ও আরেকটি মাইক্রোবাসে আসা একদল সাদা পোশাকের অস্ত্রধারীরা আমাদের গাড়ির গতিরোধ করে। এক পর্যায়ে তারা জোর করে আমাদের গাড়ির মধ্যে ঢুকে যে যার মতো সবাইকে মারধর করতে থাকে। তিনি বলেন, এ সময় আমরা আশপাশের লোকদের সাহায্যের জন্য চিৎকার দিলে অস্ত্রধারী লোকগুলো কেউ এগুবেনা আমরা প্রশাসনের লোক বলে চিৎকার করতে থাকে। তারা আমার ভাইকে মাইক্রোবাসের ভেতর থেকে হাত-পা ও মুখ বেঁধে ফেলে। অস্ত্রধারীরা আমাদের গাড়ির চাবি নিয়ে তাদের মধ্যে একজন নিজেই ড্রাইভ করে যশোর অভিমুখে পিরোজপুর কলারহাট নামক স্থানে নিয়ে যায়। সেখানে নিয়ে গাড়ি থেকে আমার ভাই আরিফকে জোর করে টেনেহিঁচড়ে তাদের গাড়িতে তুলে নিয়ে চলে যায়।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, অস্ত্রধারী ওই লোকগুলো শুধু আমার ভাইকে নয়, যাওয়ার সময় গাড়িতে থাকা সকলের ব্যবহৃত দামি মোবাইল ফোন ও মাইক্রোবাসের চাবি পর্যন্ত নিয়ে যায়। পরে আমরা ঘটনাস্থল থেকে পার্শ্ববর্তী বারোবাজার ফাঁড়ি পুলিশকে খবর দিলে তারা ঘটনাস্থলে আসে। পুলিশের সহায়তায় আমরা কালীগঞ্জ থানায় গিয়ে একটি সাধারণ ডায়েরি করি। সংবাদ সম্মেলন থেকে আরিফকে অক্ষত অবস্থায় ফেরতের জন্য তার পরিবারের সদস্যরা আহ্বান জানান। সংবাদ সম্মেলনে আরিফের শাশুড়ি, ছোট ভাইসহ অন্যান্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। তবে কালীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মাহফুজুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করলে এ সংক্রান্ত জিডির বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে তিনি জানান। তবে বারোবাজার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই শিকদার মনিরুল ইসলাম বলেন, খবর পেয়ে তিনি ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখেন তারা সেখানে দাঁড়িয়ে আছেন। এদিকে পুলিশের দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, মোল্লাপাড়ার আলোচিত দুই সহোদর আরিফ ও শাকির দুজনই পেশাদার অস্ত্র ও মাদক ব্যবসায়ী। পুলিশের সাথে সখ্যতা গড়ে তাদের বিরুদ্ধে এসব ব্যবসা করার অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে ২০১৫ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি যশোর সদরের ইছালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা মোশাররফ হোসেনকে খুন হন। সে সময় সন্ত্রাসীরা যে পিস্তলটি ব্যবহার করেছিলো সেটি আরিফ সরবরাহ করেছিলেন বলে সিআইডি পুলিশের কাছে তথ্য আছে। যেকারণে ওই হত্যাকান্ডের সাথে আরিফকেও আসামি করে আদালতে চার্জশিট দেয় সিআইডি পুলিশ। পুলিশের সূত্রটি জানায়, সন্ত্রাসী আরিফ এ ঘটনা এর আগে ছাড়াও র‌্যাবের হাতে ৫টি পিস্তলসহ আটক হয়েছিলো। পরে জামিন নিয়ে তিনি আবারও অপরাধ জগতের সাথে জড়িয়ে পড়েন। এরই মাঝে গত বছরের ডিসেম্বর মাসে তার ভাই শাকির র‌্যাবের হাতে অস্ত্র ও গোলাবারুদসহ আটক হন।

আরো সংবাদ
যশোর জেলা
ফেসবুক পেজ
সর্বাধিক পঠিত