চেক জালিয়াতির মাধ্যমে যশোর শিক্ষা বোর্ডের ব্যাংক হিসাব থেকে আরও আড়াই কোটি টাকা আত্মসাতের তথ্য বেরিয়ে এসেছে। বিষয়টি ধরা পড়ার পর শিক্ষা বোর্ডের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মাধব চন্দ্র রুদ্র দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) যশোর কার্যালয়ে চিঠি দিয়েছেন।
গত বৃহস্পতিবার পাঠানো ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, ২০১৭ সালে বর্তমান চেয়ারম্যান মোল্লা আমির হোসেন বোর্ডের সচিব থাকা অবস্থায় হিসাব সহকারী আবদুস সালাম চেক জালিয়াতি শুরু করেন। সেই থেকে এখন পর্যন্ত চেক জালিয়াতির মাধ্যমে মোট পাঁচ কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে।
যশোর মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড এবং দুদক সূত্রে জানা যায়, শিক্ষা বোর্ডে পণ্য সরবরাহকারী ৯টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও বোর্ডের কয়েকজন কর্মচারীর যোগসাজশে ২০১৭ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত চার বছর চেক জালিয়াতির মাধ্যমে মোট পাঁচ কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে।
মাধব চন্দ্র রুদ্র আরও বলেন, ‘আমরা আরও আড়াই কোটি টাকার চেক জালিয়াতির প্রমাণ পেয়েছি। যা লিখিত পত্রের মাধ্যমে দুদকের কর্মকর্তাদের অবহিত করা হয়েছে। বোর্ডের অভ্যন্তরীণ হিসাব নিরীক্ষায় ২০১৭ সাল থেকে এখন পর্যন্ত চেক জালিয়াতির মাধ্যমে প্রায় পাঁচ কোটি টাকার ঘাপলা ধরা পড়েছে।’
২০১৭ সালে যখন চেক জালিয়াতি শুরু হয় তখন শিক্ষা বোর্ডের বর্তমান চেয়ারম্যান মোল্লা আমির হোসেন সচিব ছিলেন। টাকা আত্মসাতের মামলায় অভিযুক্ত বোর্ডের হিসাব সহকারী আবদুস সালাম তখনো হিসাব শাখার দায়িত্বে ছিলেন।
দুদকের যশোর কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. নাজমুচ্ছায়াদাত বলেন, ‘যশোর শিক্ষা বোর্ডের আরও আড়াই কোটি টাকার দুর্নীতির আরেকটি অভিযোগ আমাদের হাতে এসেছে। আগের আড়াই কোটি টাকা দুর্নীতি মামলার তদন্ত কর্মকর্তা (আইও) এখনো নিয়োগ হয়নি। আইও নিয়োগের পর নতুন অভিযোগের বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হবে।’
এর আগে ১৮ অক্টোবর আড়াই কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান মোল্লা আমির হোসেনসহ পাঁচজনকে আসামি করে দুর্নীতির একটি মামলা করে দুদক। দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় যশোরের সহকারী পরিচালক মাহফুজ ইকবাল বাদী হয়ে ওই মামলা করেন।
ওই মামলার অন্য অভিযুক্তরা হলেন বোর্ডের সচিব এএমএইচ আলী আর রেজা, হিসাব সহকারী আবদুস সালাম, প্রতিষ্ঠান ভেনাস প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিংয়ের মালিক শরিফুল ইসলাম ও শাহী লাল স্টোরের মালিক আশরাফুল আলম। মামলার পরদিন রাতেই চেয়ারম্যান ও সচিব তাঁদের বাংলো থেকে বের হয়ে যান। এরপর তাঁদের কেউ আর অফিসে যাননি।
এদিকে মামলার পর আবদুস সালাম দায় স্বীকার করে শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানের কাছে একটি চিঠি দেন। সেখানে লোপাট হওয়া আড়াই কোটি টাকা ফেরত দেওয়ার অঙ্গীকার করেন তিনি। ইতিমধ্যে তিনি দুই দফায় ৩০ লাখ টাকা ফেরত দিয়েছেন। এ ঘটনায় শিক্ষা বোর্ড তাঁকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে।