আজ - সোমবার, ২৩শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৮ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২১শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি, (শীতকাল), সময় - সন্ধ্যা ৭:২৭

যশোরে প্রস্তুত ৯৬ হাজার কোরবানির পশু, বিক্রি নিয়ে শঙ্কা

ঈদুল আজহা আসন্ন। ঈদে কোরবানির পশু সরবরাহে প্রস্তুত যশোরের খামারিরা। এ বছর জেলায় ৯৬ হাজার ৩৭টি গবাদি পশু কোরবানির উপযোগী করে তোলা হয়েছে। যা এ জেলার চাহিদার তুলনায় ২৪ হাজার ৩২৭টি বেশি।

এদিকে, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে লডকাউন চলমান থাকায় কোরবানির পশু বিক্রি নিয়ে শঙ্কায় আছেন খামারিরা। তবে, জেলা প্রশাসনের দাবি, অনলাইনে কোরবানির পশু বিক্রির প্ল্যাটফর্ম চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। করোনার সংক্রমণ কমলে হাট চালু করা হবে।

জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর যশোরে ৪৪ হাজার ৫৫০টি গরু ও মহিষ কোরবানির উপযোগী করা হয়েছে। এ জেলায় ৩২ হাজার ৬৪০টি গরু-মহিষের চাহিদা আছে। ছাগল ও ভেড়া আছে ৫১ হাজার ৪৮৭টি। চাহিদা আছে ৩৯ হাজার ৭০টির।

কোরবানির উপযোগী পশুর মধ‌্যে যশোর সদর উপজেলায় ১১ হাজার ৩৭টি, ঝিকরগাছায় ৬ হাজার ৯০৪টি, শার্শায় ৭ হাজার ৫৫০টি, মণিরামপুরে ২৫ হাজার ৫৬০টি, কেশবপুরে ৬ হাজার ৭৮৫টি, অভয়নগরে ৫ হাজার ৩৮৩টি, বাঘারপাড়ায় ৭ হাজার ৪৪৯টি ও চৌগাছায় ১৬ হাজার ১০৮টি।

এসব পশু বিক্রির জন্য অনলাইনে নয়টি পশুর হাট চালু করা হবে। হাটগুলো হচ্ছে—পশুর হাট, যশোর; গট ফার্ম, যশোর; পশুর হাট, চৌগাছা; পশুর হাট, শার্শা; পশুর হাট, ঝিকরগাছা; পশুর হাট, অভয়নগর; পশুর হাট মণিরামপুর; পশুর হাট, কেশবপুর ও পশুর হাট, বাঘারপাড়া। জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় একটি অ্যাপস তৈরি করা হবে। এ অ্যাপসের মাধ‌্যমে এসব পশুর হাটে প্রবেশ করা যাবে।

যশোর জেলা দুগ্ধ ও মাংস উৎপাদন সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি মফিজুর রহমান জানিয়েছেন, এ জেলায় ১৬০ জন গবাদি পশুর খামারি আছেন। তাদের সবাই কোরবানিকে টার্গেট করে পশু মোটাতাজা করেছেন। খামারিদের কাছে প্রায় ২৫০ কোটি টাকার গরু আছে। করোনার কারণে যশোরে পশুর হাট চালুর সম্ভবনা নেই। তাই, ব্যবসায়ীদের বাঁচাতে অনলাইন মার্কেট চালু করা ছাড়া পথ নেই। অনলাইন হাটে পশুর ছবি দেওয়া থাকবে। ফার্মের মালিকের নাম, ঠিকানা ও মোবাইল নম্বর থাকবে। পশু পছন্দ হলে ক্রেতাদের বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হবে। করোনা পরিস্থিতির উন্নতি না হলে সপ্তাহখানেক পর অনলাইন পশুর হাট চালু করা হবে।

বাঘারপাড়ার নারিকেলবাড়িয়া গ্রামের প্রত্যাশা অ‌্যাগ্রো ফার্মের স্বত্বাধিকারী মফিজুর রহমান। তার ফার্মে ২২টি গরু আছে। তার মধ্যে ১৪টি বিক্রির জন্য মোটাতাজা করেছেন। প্রতিটি গরুর পেছনে তার প্রায় ৪০ হাজার টাকা করে খরচ হয়েছে। বাজার ভালমতো জমলে একেকটি গরু ৮০ হাজার টাকায় বিক্রি করতে পারবেন তিনি। এ মুহূর্তে তিনি পশু বিক্রির জন্য অনলাইন মার্কেটের বিকল্প কিছু দেখছেন না।

ঘোপ নওয়াপাড়া রোড ডেইরি ফার্মের মালিক অভিজিত রায় জানান, তার ফার্মে ৩৮টি মোটাতাজা গরু আছে। প্রতিটি গরু লাখ টাকার ওপরে বিক্রি করা সম্ভব। ইতোমধ্যে গরু পালন করতে তার প্রায় ১৫ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। লকডাউনে পশুর হাট বন্ধ থাকায় তিনি উদ্বিগ্ন।

বেজপাড়ার রাবেয়া ডেইরি ফার্মের স্বত্বাধিকারী রওশন আরা জানান, তার ফার্মে বিক্রি করার মতো ৩২টি গরু আছে। করোনা পরিস্থিতিতে গরু বিক্রির বিষয়ে তিনি দুশ্চিন্তায় আছেন।

যশোর সদর উপজেলার প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা শফিউল্লাহ বলেছেন, ‘যশোরে বর্তমানে যে পরিস্থিতি, তাতে পশুর হাট চালু করা সম্ভব নয়। জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় অনলাইনে পশুর হাট করার উদ্যোগ নেওয়া হবে।’

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা বখতিয়ার হোসেন বলেছেন, ‘যশোরে করোনা পরিস্থিতি খুবই ভয়াবহ। কঠোর বিধি-নিষেধ পরিপালন করা হচ্ছে। সাধারণ মানুষকে কোনোভাবেই ঘর থেকে বের হতে দেওয়া হচ্ছে না। পরিস্থিতি এ রকম চলতে থাকলে অনলাইন হাট ছাড়া পশুর বিক্রির পথ নেই।’

যশোরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কাজী সায়েমুজ্জামান বলেছেন, ‘করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় জেলার সব পশুর হাট বন্ধ রাখা হয়েছে। কোরবানির পশু বেচাকেনার জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অনলাইন প্ল‌্যাটফর্ম সক্রিয় করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সবাইকে অনলাইনে পশু বেচাকেনায় উদ্বুদ্ধ করছি। কোরবানির পশু বেচাকেনার জন্য স্বতন্ত্র পোর্টাল চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে কার্যক্রম শুরু হয়েছে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ কমলে কোরবানির আগেই পশুর হাট চালু করা সম্ভব হবে। খামারিদের আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই। তারা পশু বিক্রি করতে পারবেন।’

আরো সংবাদ