আজ - সোমবার, ২৩শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৮ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২১শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি, (শীতকাল), সময় - সন্ধ্যা ৭:৫৪

যশোরে শীতের পিঠা বিক্রির ধুম

হাসিবুল ইসলাম শান্ত, যশোর।। শীতকাল আর পিঠা একসূত্রে গাঁথা। গত কয়েকদিন থেকে প্রকৃতিতে শীতল হাওয়া বইতে শুরু করার সঙ্গে-সঙ্গে যশোর শহরের বিভিন্ন মোড়ে গড়ে উঠেছে ভ্রাম্যমাণ শীতকালীন পিঠার দোকান। প্রতিদিন বিকাল থেকে এসব দোকানে পিঠার স্বাদ নিতে ভিড় করছে মানুষ।
সন্ধ্যা নামার সঙ্গে-সঙ্গে শুরু হয় কনকনে শীত। তখনই বেড়ে যায় ক্রেতা সমাগম, যা মধ্যরাত পর্যন্ত থাকে। এমন পরিবেশ শীতের পিঠা খেতে কার না ভালো লাগে। অনেকে পরিবার নিয়ে ছুটছেন বিভিন্ন এলাকার পরিপাটি পিঠার দোকানে। আবার ডিজিটাল সুবিধাকেও কাজে লাগাচ্ছেন অনেকে। অনলাইনে অর্ডার দিয়ে বাসায় বসেই পরিবারের সঙ্গে শীতের পিঠার স্বাদ নিচ্ছেন।
যশোরবাসীর শীতের পিঠার চাহিদাকে কেন্দ্র করে অলিগলিতে গড়ে উঠেছে অসংখ্য পিঠাপুলির দোকান। শীত আসার সঙ্গে-সঙ্গে অনেকে মৌসুমি পেশা হিসাবে সড়কের পাশে অস্থায়ীভাবে পিঠা বিক্রি করছেন।
সরেজমিন দেখা যায়, গরম গরম ভাপা পিঠা নামছে মাটির চুলা থেকে। ক্রেতারা সারিবদ্ধ হয়ে পিঠা কিনছেন। কেউ নিয়ে যাচ্ছেন। কেউ আবার দাঁড়িয়ে খাচ্ছেন। কোনো চুলায় ভাপাপিঠা, কোনোটিতে চিতই, কোনোটিতে ডিম বা অন্য কোনো পিঠা। শীত যতই বাড়ছে এসব পিঠাপুলির দোকানগুলোতে ভিড় বাড়ছে। দোকানগুলোয় পিঠার পাশাপাশি থাকছে হরেক রকম ভর্তা। রসুন-মরিচবাটা, ধনিয়াপাতা বাটা, শুঁটকি, কালোজিরা, সর্ষে ভর্তাসহ নানা রকম উপকরণ মিলিয়ে বিক্রি করা হয় চিতই পিঠা।
এর মধ্যে ভাপা আর চিতই পিঠার কদর বেশি। প্রতিটি বিক্রি হয় পাঁচ থেকে ১০ টাকা করে। এছাড়া অভিজাত এলাকায় গড়ে ওঠা পিঠার দোকানে পাওয়া যাচ্ছে পুলি, ভাপা, তেলের পিঠা, পাটিসাপটাসহ হরেক রকম আইটেম।
যশোর শহরের মনিহার এলাকার এক পিঠা বিক্রেতা মজিদ মিয়া বলেন, বছরের এই সময়টা শীতকালীন পিঠার বিক্রি বেশি হয়। বর্তমানে চিতই, ভাপা পিঠা, পাটিসাপটাসহ পাঁচ থেকে সাত ধরনের পিঠা তৈরি করছেন। আর চিতই ও ভাপা পিঠা খাওয়ার জন্য থাকছে নারকেল গুড়সহ বাহারি পদের ভর্তা, লাভও ভালো।
সেখানে গরম চিতই পিঠার জন্য অপেক্ষমান রায়হান নামে এক তরুণ জানান, শীতে চুলার পাশে বসে পিঠা খাওয়ার যে ছবি আমাদের চোখে ভেসে ওঠে, নগর জীবনে তার দেখা মিলবে কই। এরা আছে বলে একটু পিঠা খাওয়ার সুযোগ হয়।
বিক্রেতারা পিঠা তৈরি করছেন আর ক্রেতারা দাঁড়িয়ে বা বসে-বসে গরম গরম এসব শীতের পিঠার স্বাদ নিচ্ছেন। এ যেন শীতের আরেক ধরনের আমেজ।যশোর শহর ঘুরে দেখা যায়, বিভিন্ন মোড়ে ও পাড়া-মহল্লায় স্বল্প আয়ের লোকজন গড়ে তুলেছেন পিঠার দোকান।

 

শহরের আরএন রোড,দড়াটানা, টার্মিনালের সামনে, মনিহারের সামনে, পোস্ট অফিসের সামনে,কোর্টের মোড়,পালবাড়ি,টাউনহল মায়দানসহ বিভিন্ন হাটের রাস্তা বা এলাকায় এসব পিঠার দোকান বসেছে। মূলত সেখানে ভাপা ও চিতই পিঠা তৈরি হচ্ছে এসব দোকানে।

রিকশাচালক, দিনমজুর, শিশু-কিশোর, চাকরিজীবী, শিক্ষার্থী সব শ্রেণী-পেশার মানুষ পিঠার দোকানের ক্রেতা। কাজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে অনেককে আবার পিঠা খেতে দেখা যায়। অনেকে আবার পরিবারের সদস্যদের জন্য পছন্দের পিঠা নিয়ে যাচ্ছেন বাড়িতে। টাউনহল ময়দানে বসেছে বেশ কয়েকটি ভাপা-পিঠার দোকান।
সেখানকার পিঠা বিক্রেতারা বলেন, আমরা চালের গুঁড়া, ভর্তা আর প্লাস্টিকের পিরিচ সাজিয়ে দোকান খুলি। পরে ভাপা-চিতুয়া ও অন্যান্য পিঠা বানিয়ে হটপটে ঢুকিয়ে রাখি। এরই মধ্যেই ক্রেতার ভিড় জমে গেলে সেখান থেকে বের করে তাদের সামনে পরিবেশন করি। পাশাপাশি সিদ্ধ ডিম, ডিম চিতুয়া ইত্যাদিও চলে বেশি। এসব পিঠার দোকানে আসা বেজপাড়ার বাসিন্দা আনিসুর রহমান মিঠু বলেন, ছোটবেলার একটা সুখকর স্মৃতি হচ্ছে শীতের সকালে চুলার পাশে বসে ঝোলা গুড় মিশিয়ে চিতই পিঠা খাওয়া। গ্রাম থেকে শহরে এসে পিঠার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নানা ভর্তা।
পিঠা বিক্রেতা তইমুর রহমান জানান, এবার শীত শুরু হাওয়ার আগেই প্রচুর পিঠা বিক্রি হচ্ছে। বিকাল ৫টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত পিঠা বিক্রি হয়। তবে রাতে পিঠার চাহিদা বেড়ে যায়। তাই আয়ও এবার একটু বেশি হচ্ছে। প্রতিদিন ৩শ’ থেকে ৪শ’ টাকা লাভ হচ্ছে

 

আরো সংবাদ