আজ - মঙ্গলবার, ২৪শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৯ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২২শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি, (শীতকাল), সময় - রাত ১০:৩৩

যশোরে ৫ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের সম্পদের বিবরণী প্রকাশ

যশোরের ৫ উপজেলার ৫ জন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তাঁদের আর্থিক সম্পদের বিবরণী প্রকাশ করেছেন। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের আর্থিক সম্পদ বিবরণী প্রকাশ জোরদারকরণ শীর্ষক প্রকল্পের অধীনে তাঁরাই প্রথম এটি প্রকাশ করলেন। সোমবার দুপুরে রাইটস যশোরের উদ্যোগে ও এশিয়া ফাউন্ডেশনের সহযোগীতায় যশোর শহরের হোটেল সিটি প্লাজায় এ উপলক্ষে এক সভার আয়োজন করা হয়। দেশে এই প্রথম জনগণের সামনে জনপ্রতিনিধিদের সম্পদের বিবরণী তুলে ধরা হচ্ছে।

সম্পদের বিবরণী প্রকাশ করা জনপ্রতিনিধিরা হলেন, যশোর সদর উপজেলার নরেদ্রপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোদাচ্ছের আলী, কেশবপুর সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন আলা, অভয়নগরের প্রেমবাগ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মফিজ উদ্দিন, শার্শার বেনাপোল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বজলুর রহমান ও বাঘারপাড়ার বন্দবিলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সবদুল হোসেন খান।

রাইটস যশোরের সভাপতি ডা. ইয়াকুব আলী মোল্লার সভাপতিত্বে গণমাধ্যমে জনপ্রতিনিধিদের আর্থিক সম্পদ বিবরণী প্রকাশ বিষয়ক সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতা করেন, যশোরের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক হুসাইন শওকত। বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন, যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলন, দুর্নীতি দমন কমিশনের কর্মকর্তা মাহফুজ ইকবাল, প্রেসক্লাব যশোরের সাধারণ সম্পাদক এস এম তৌহিদুর রহমান ও এশিয়ান ফাউন্ডেশনের প্রোগ্রাম কর্মকর্তা আচিনুর রেজা। স্বাগত বক্তব্য দেন, রাইটস যশোরের নির্বাহী পরিচালক বিনয় কৃষ্ণ মল্লিক। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন, রাইটস যশোরের প্রোগ্রাম ম্যানেজার এস এম আজহারুল ইসলাম।

সম্পদ বিবরণী প্রকাশকালে যশোর সদর উপজেলার নরেদ্রপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোদাচ্ছের আলী বলেন, আমার ব্যক্তিগত আয়ের উৎস কৃষি খাত ও ব্যবসা। সেখান থেকে প্রতি বছরে ১১ লাখ ৬০ হাজার টাকা আয় হয়। এছাড়া আমার শিক্ষিকা স্ত্রী ও ছেলের আয় ৬ লাখ ৮৬ হাজার টাকা। নিজের নামে কৃষি জমি ২ একর ও বাড়ি ৩৩ শতাংশ এবং স্ত্রীর নামে জমি রয়েছে ১০ শতাংশ। ব্যাংক থেকে ৪ লাখ টাকা ঋণ নেওয়া আছে। আমার নামে আদালতে কোন মামলা নেই।

কেশবপুর সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান প্রভাষক আলাউদ্দিন আলা বলেন, আমি ও আমীর স্ত্রী দুজনই শিক্ষকতা করি। চাকুরি করে প্রতি বছরে দু’জন ৭ লাখ ৪০ হাজার ৪০০ টাকা আয় হয়। এছাড়া ভাইদের সঙ্গে যৌথ কৃষি খাত থেকে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা আয় হয়ে থাকে। নিজের নামে ৩ বিঘা ও স্ত্রীর নামে ৯ শতাংশ জমি আছে। ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়া আছে ৯ লাখ টাকা। বর্তমানে যশোর কোতায়ালী থানায় একটি মামলা চলমান রয়েছে।

অভয়নগরের প্রেমবাগ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মফিজ উদ্দিন বলেন, আমার শুধুমাত্র ব্যবসা থেকে প্রতি বছর ৬ লাখ টাকা আয় হয়। বাবা ও শিক্ষিকা স্ত্রীর প্রতি বছরে আয় ৭ লাখ ২১ হাজার টাকা। স্ত্রীর নামে ৫ শতক জমি রয়েছে। এছাড়া যৌথ মালিকানায় আমার ২ দশমিক ১৮ একর জমি আছে। বর্তমানে আমার নামে কোন মামলা নেই। অতীতে একটি মামলা ছিল, যা ২০১৭ সালে নিষ্পত্তি এবং নির্দোষ প্রমাণিত হই।

শার্শার বেনাপোল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বজলুর রহমান বলেন, কৃষি খাত, বাড়ি ভাড়া, ব্যবসা, শেয়ার/সঞ্চয়পত্র ও অন্যান্য খাত থেকে ১৮ লাখ ২০ হাজার টাকা আয় করি। নিজের নামে ১৩ বিঘা ও স্ত্রীর নামে ১ বিঘা জমি রয়েছে। আমার কোন দায়-দেনা ও আদালতে মামলা নেই। বাঘারপাড়ার বন্দবিলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সবদুল হোসেন খান বলেন, কৃষি খাত ও ব্যবসা থেকে আমার বছরে ৭ লাখ টাকা আয় হয়। ভাইদের কৃষি খাত, ব্যবসা ও চাকুরি থেকে আয় হয় ১৫ লাখ টাকা। নিজের নামে ১৫ একর জমি আছে। আমার ব্যবসা সংক্রান্ত বিষয়ে ৬ লাখ টাকা দেনা আছে। আমার নামে কোন মামলা নেই।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে চেয়ারম্যানরা বলেন, আমরা জনপ্রতিনিধি হওয়ার পরে সম্পদ বাড়েনি। অপরদিকে ঋণগ্রস্থ হয়ে পড়েছি। চেয়ারম্যান পদে দায়িত্ব পালন করাকালে প্রতি মাসে মাত্র ১০ হাজার টাকা বেতন পায় আমরা।

রাইটস যশোরের প্রোগ্রাম ম্যানেজার এস এম আজহারুল ইসলাম বলেন, যশোরের ৫ উপজেলার ৫ জন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের প্রথম পর্যায়ে (চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেওয়ার শুরুর) সম্পদের বিবরণী প্রকাশিত হয়েছে। আগামী ডিসেম্বরে দ্বিতীয় পর্যায়ে (চেয়ারম্যানের মেয়াদ শেষে) সম্পদের বিবরণী প্রকাশ করা হবে। দুই মেয়াদ বিশ্লেষণ করে মিডিয়ার মাধ্যমে আবারও জনপ্রতিনিধিদের সম্পদের বিবরণী আনুষ্ঠানিকভাবে জনসম্মুখে তুলে ধরা হবে।

তিনি আরও বলেন, দেশে এই প্রথম জনগণের সামনে জনপ্রতিনিধিদের সম্পদের বিবরণী তুলে ধরা হচ্ছে। জনপ্রতিনিধিরা তাঁদের আয়-ব্যয়ের হিসাব প্রকাশের মাধ্যমে সমাজে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখবে। 

রাইটস যশোরের নির্বাহী পরিচালক বিনয় কৃষ্ণ মল্লিক বলেন, ইউপি চেয়ারম্যানদের বিরুদ্ধে প্রায়ই নানা ধরনের দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। মূলত জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতেই ইউপি চেয়ারম্যানদের নিয়ে পরীক্ষামূলক এ প্রকল্প। এছাড়া স্থানীয় পর্যায়ে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য সরকারি কর্মকর্তাদের ঘুষ দিতে হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। যার জন্য চেয়ারম্যাদের অপ্রদর্শিত টাকা ব্যয় করতে হয়। শতভাগ স্বচ্ছতার মাধ্যমে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা কাজ করতে পারছেন না। সে ক্ষেত্রে এ উদ্যোগ তাঁদের জন্য সহায়ক হবে। বাংলাদেশের পাশাপাশি নেপাল, ভুটান ও মালদ্বীপেও এ প্রকল্প চলছে।

আরো সংবাদ