যশোর শহরের রেলগেট পশ্চিমপাড়ায় ৩২ মামলার আসামি সন্ত্রাসী রমজান শেখ খুনের ঘটনায় মামলা হয়েছে। নিহতের মা রেখা খাতুন শনিবার ১৩ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত পরিচয় আরো ৭/৮ জনের বিরুদ্ধে কোতয়ালি থানায় মামলাটি করেছেন। মামলার আসামিদের মধ্যে ইতোমধ্যে দুইজন গ্রেপ্তার হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
আসামিরা হলো, রেলগেট কলাবাগান পাড়ার মজিবর ওরফে জাহাঙ্গীরের ছেলে রাজা ওরফে পিচ্চি রাজা (২৫), কানা বাসারের ছেলে তুহিন (২৮), চোরমারা দিঘিরপাড় এলাকার ফারুক ওরফে ফারুক পকেটমারের ছেলে কুদরত (৩০), ঢ্যাপ পকেটমারের ছেলে সাগর (২৬), শাহ আলম মৃধার ছেলে শাওন ওরফে পটকে শাওন (২২), খড়কী এলাকার কুদ্দুসের ছেলে ইবাদুল (২৫), রেলগেট পাশ্চিমপাড়ার সালামের ছেলে দেলোয়ার হোসেন (২৪), আব্দুল খালেকের ছেলে শুকুর আলী (২৮), রায়পাড়া তুলাতলা এলাকার জিহাদ আলীর ছেলে বাবু ওরফে পলিথিন বাবু (৩৫), রেলগেট পশ্চিমপাড়ার হাফিজুরের ছেলে ইয়াছিন (২৬), চাঁচড়া ডালমিল এলাকার সুজন ব্যাপারীর ছেলে পায়েল (২২), বেজপাড়া টিবি ক্লিনিক এলাকার কানা বাবুর ছেলে সুমন ওরফে ট্যাটু সুমন (২৮) ও আশ্রম রোড মহিলা মাদ্রাসার পাশের মোহাম্মদ আলীর ছেলে মেহেদী (৩০)।
রেলগেট পর্শ্চিমপাড়া ও খড়কীসহ আশপাশের এলাকায় মাদক ব্যবসা ও আধিপত্য বিস্তার নিয়ে অভ্যন্তরীণ বিরোধ ও পুলিশ দিয়ে হয়রানী করানো নিয়ে প্রতিপক্ষ সন্ত্রাসীদের হাতে শুক্রবার রাতে খুন হয় রেলগেট পশ্চিমপাড়ার কুখ্যাত সন্ত্রাসী রমজান শেখ (৩০)। রমজান ওই এলাকার চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী দম্পতি ফায়েখ শেখ ও রেখা খাতুনের ছেলে। তার ভাই সাগর শেখও একজন চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও একাধিক মামলার আসামি।
নিহতের ভাই সাগর শেখ জানায়, রমজান পরিবার পরিজন নিয়ে যশোরে বসবাস করলেও পৈতৃক বাড়ি গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার দত্তডাঙ্গা গ্রামে। শনিবার বিকেলে রমজানের মরদেহ দাফনের জন্য গোপালগঞ্জের দত্তডাঙ্গা গ্রামে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তারা দীর্ঘদিন ধরে সপরিবারে যশোর শহরের রেলগেট পশ্চিমপাড়া এলাকায় রেলাইনের পাশে সরকারি জমিতে ঘর তৈরি করে বসবাস করতেন।
এজাহারে রেখা খাতুন উল্লেখ করেছেন, তার ছেলে রমজান শেখ ইট-বালির ব্যবসা করতো। গত ৮ মার্চ রাতে মোটরসাইকেল নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়। রাত সাড়ে ৮টার দিকে শ্বশুর বাড়ির সামনে পৌঁছালে আসামিরা তার গতিরোধ করে। এরপর তার হাত, পা ও মুখ চেপে ধরে ও পিচ্চি রাজা তার বুধে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপ দেয়। মাটিতে পড়ে গেলে আসামিরা তাকে মারধর করে। পরে পিচ্চি রাজা গলা চেপে ধরে শ্বাসরোধে হত্যা করে। সে সময় স্থানীয় এক গৃহবধূ দেখতে পেয়ে চিৎকার দেয়। পরে আশপাশের লোকজন এগিয়ে আসলে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়। পরে রমজানকে যশোর জেনারেল হসাতপালে ভর্তি করা হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
স্থানীয়রা জানায়, রমজান এলাকার চিহ্নিত অপরাধী। মাদক ব্যবসায় তার মূল পেশা। রেললাইনের পাশে বাড়ি থাকার সুবাদে নির্বিঘ্নে মাদকদ্রব্য বিক্রি করতো। পুলিশ তার বাড়িতে অভিযান চালনোর আগেই রমজান টের পেয়ে পালিয়ে যেতো। এ ছাড়া এলাকায় অধিপত্য বিস্তুার নিয়ে প্রায়ই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালাতো। রমজান দলবদ্ধ হয়ে প্রতিপক্ষের বাড়ি ঘরে হামলা চালিয়ে ক্ষয়-ক্ষতি করতো। তার বাড়িতেও প্রতিপক্ষের হামলাও হয়েছে অনেকবার। হত্যা, ডাকাতি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসায়, হুমকি ও মারামারিসহ এমন কোনো অপরাধ নেই যেটি রমজান করেনি।
জানা গেছে, তার বিরুদ্ধে কোতয়ালি থানায় ৩২টি মামলা আছে। পুলিশি অভিযানের মুখে কিছুদিন গা-ঢাকা দিয়ে ছিল রমজান। সম্প্রতি এলাকায় ফিরে ফের মাদক ব্যবসায় ও অধিপত্য বিস্তারে সক্রিয় হয়। কিন্তু প্রতিপক্ষরা এটি মেনে নিতে পারেনি।
স্থানীয় একটি সূত্র জানায়, পুলিশি অভিযানের মুখে চিহ্নিত সন্ত্রাসী পিচ্চি রাজা বেশ কিছুদিন ধরে আত্মগোপন করে আছে। সেই সাথে তার গ্রুপের সদস্যরাও আত্মগোপনে রয়েছে। পিচ্চি রাজাসহ তার সহযোগীরা দুই থেকে তিনটি করে মামলার আসামি। রমজার পুলিশের কাছে গোপনে তথ্য দিয়ে পিচ্চি রাজাকে ধরিয়ে দেবে এমন খবরে রমজানের প্রতি আরো ক্ষোভ সৃষ্টি হয় রাজার। যার কারণে রমজানকে হত্যা করা হয়।
এ বিষয়ে কোতয়ালি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুর রাজ্জাক জানান, নিহতের মা একটি এজাহার দায়ের করেছেন। সেটি মামলা হিসেবে রেকর্ড করা হয়েছে। ইতোমধ্যে দুই আসামি গ্রেপ্তার হয়েছে। বাকিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। তবে গ্রেপ্তার দুইজনের নাম ও পরিচয় তিনি জানাতে রাজি হননি।