তৌহিদুর রহমান, যশোর ও মোতাহার হুসাইন, কেশবপুর : যশোর-৬ (কেশবপুর) আসনের উপনির্বাচনে দলীয় প্রার্থী শাহীন চাকলাদারকে ঘিরে একাট্টা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। আর প্রার্থী ঘোষণায় দেরি করায় প্রচারে যেমন পিছিয়ে পড়েছে বিএনপি, তেমনি স্থানীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে রয়েছে বিভাজন। জাতীয় পার্টির (এরশাদ) প্রার্থীর পক্ষেও দেখা যাচ্ছে না কোনো প্রচার। তবে বিএনপি প্রার্থী আবুল হোসেন আজাদ ও জাতীয় পার্টির প্রার্থী হাবিবুর রহমান বলেছেন, প্রতীক পাওয়ার অপেক্ষায় ছিলেন তারা। এখন থেকে পুরোদমে চলবে প্রচার। এর আগে সোমবার প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দ দিয়েছেন জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির। ২৯ মার্চ এ উপনির্বাচনে ভোট গ্রহণ হবে।
গত ২১ জানুয়ারি কেশবপুরের সংসদ সদস্য ও সাবেক জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ইসমাত আরা সাদেকের মৃত্যুতে আসনটি শূন্য হয়। ১৫ ফেব্রুয়ারি রাতে গণভবনে দলের মনোনয়ন বোর্ডের সভা শেষে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক
ওবায়দুল কাদের আসনটিতে দলীয় প্রার্থী হিসেবে শাহীনের নাম ঘোষণা করেন। যদিও শাহীন চাকলাদার এ আসনের বাসিন্দা না হওয়ায় তাকে নিয়ে নানা গুঞ্জনও ছিল ভোটারদের মধ্যে। শেষ পর্যন্ত তাকে ঘিরে কেশবপুরের রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণ দেখা দিয়েছে। তার মনোনয়ন প্রাপ্তিকে দলের স্থানীয় রাজনীতির জন্য শান্তির সুবাতাস বলে মনে করছে দলের নেতাকর্মীদের বড় অংশ। বিষয়টিকে সাদেক পরিবারের অনুসারীরা ভিন্নভাবে দেখলেও এ নিয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিক্রিয়া জানাননি।
এ প্রসঙ্গে কেশবপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা বলেন, ভোটের বিবেচনায় এ আসনে আওয়ামী লীগের অবস্থান শীর্ষে। ১৯৯১ সাল থেকে এ পর্যন্ত একবার জামায়াত প্রার্থী সাংসদ হন। বাকি পাঁচবারই নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের প্রার্থী। এবার মনোনয়ন পেয়েছেন দলের কর্মীবান্ধব হিসেবে পরিচিত শাহীন চাকলাদার।
কেশবপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মাস্টার রুহুল আমিন দলীয় প্রার্থী শাহীনকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, শাহীন চাকলাদার এ আসনের সাংসদ হলে দলের প্রকৃত নেতাকর্মীদের মাথা নিচু করে পথ চলতে হবে না।
কেশবপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গাজী গোলাম মোস্তাফা বলেন, শাহীন মনোনয়ন পাওয়ার পর থেকেই মাঠ গোছাতে শুরু করেন। দলের নেতাকর্মীরা সব ভেদাভেদ ভুলে একাট্টা হয়েছেন।
মহিলা আওয়ামী লীগের উপজেলা সভাপতি রাবেয়া ইকবাল বলেন, ‘কেশবপুরের মানুষ দীর্ঘদিন ধরে হাতুড়ি বাহিনীর হাতে জিম্মি ছিল। শাহীনকে মনোনয়ন দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কেশবপুরবাসীকে সেই জিম্মিদশা থেকে মুক্তির পথ বাতলে দিয়েছেন। তার মনোনয়নকে আমরা শান্তির সুবাতাস বলে মনে করছি।’
যশোর জেলা আওয়ামী লীগের টানা তিনবারের সাধারণ সম্পাদক ও তিন মেয়াদে সদর উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন শাহীন। তিনি বলেন, কেশবপুরে দীর্ঘদিন দল অনেকটা বিভক্ত ছিল। সেই বিভক্তি দূর করে দলকে ঐক্যবদ্ধ করতে নেত্রী তাকে মনোনয়ন দিয়েছেন। সাংসদ নির্বাচিত হলে সেটিই হবে তার প্রধান কাজ।
এদিকে, ২৫ ফেব্রুয়ারি রাতে বিএনপি প্রার্থী হিসেবে উপজেলা শাখার সাবেক সভাপতি আবুল হোসেন আজাদের নাম ঘোষণার পর ২৭ ফেব্রুয়ারি মনোনয়নপত্র জমা দেন তিনি। এর পর গত রোববার খুলনা বিভাগের দায়িত্বে থাকা বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও উপনির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক নজরুল ইসলাম মঞ্জুর নেতৃত্বে জেলা বিএনপির শীর্ষ নেতারা কেশবপুর এলে সেদিন দেখা যায় তাকে। এদিন স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় ও সোমবার প্রতীক গ্রহণ করেন তিনি নিজেই। এ ছাড়া এ পর্যন্ত তার আর কোনো নির্বাচনী তৎপরতা চোখে পড়েনি। অবশ্য আজাদ বলেন, প্রতীক বরাদ্দের জন্য অপেক্ষা করছিলেন তিনি। মঙ্গলবার নির্বাচনী এলাকায় গণসংযোগ করেছেন তিনি।
আবুল হোসেন আজাদ এর আগেও দু’বার এ আসনে নির্বাচন করে পরাজিত হন। কেশবপুরে বিএনপি নেতাকর্মীরা স্পষ্টত একাধিক গ্রুপে বিভক্ত। কেশবপুর পৌর বিএনপির সভাপতি আব্দুস সামাদ বিশ্বাস তার সমর্থকদের নিয়ে শহরে পৃথক একটি কার্যালয়ে বসেন। এই বিভাজন এখনও বিদ্যমান। ফলে নির্বাচনে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মনে করেন ভোটাররা। তবে উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মশিয়ার রহমান দাবি করেন, নির্বাচনী কার্যক্রম জোরদার হলে বিভাজন থাকবে না।
এ আসনের জাতীয় পার্টির প্রার্থী হাবিবুর রহমান ঢাকায় থাকেন। তিনি ২৭ ফেব্রুয়ারি উপজেলা নির্বাচন অফিসে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পর ঢাকায় চলে যান। সোমবার যশোর ফিরে প্রতীক গ্রহণ করেন। তিনি জানান, প্রতীক বরাদ্দের পর মাইক লাগাবেন এবং বিভিন্ন ইউনিয়নে তিনি গণসংযোগ ও নির্বাচনী সভা করবেন। তবে তাকে মনোনয়ন দেওয়ায় ইতোমধ্যে উপজেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুল মজিদসহ তার অনুসারীরা দল থেকে পদত্যাগ করেছেন।
তথ্যসূত্র : সমকাল।