আজ - শনিবার, ২১শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৬ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৯শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি, (শীতকাল), সময় - রাত ৯:৪৭

শিশু তৃষা হত্যাকান্ড||যশোরের ওসি অপূর্ব হাসান ভাসছেন ধন্যবাদ-অভিনন্দনের জোয়ারে

মুনতাসির মামুন,যশোর।। ধন্যবাদ ওসি, অভিনন্দন ওসি,  ধন্যবাদ অপূর্ব হাসান এমন রব উঠেছে গোটা যশোরে। দুদিন আগেও যেখানে শোকের মাতমে আত্মহারা ছিলো গোটা এলাকা।যশোরের ধর্মতলার খ্রীষ্টান পাড়ার ৭ বছরের শিশু কারবালা সরকারী প্রথমিক বিদ্যালয়ের দ্বীতিয় শ্রেণীর ছাত্রী কথা আরেফিন তৃষা ধর্ষনের পর হত্যাকান্ডের ঘটনায় অভিযুক্ত মূল আসামি  শামিম বন্দুকযুদ্ধে নিহত হবার পর যশোর জেলা প্রশানকে এই ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেছেন নিহত তৃষার বাবা তরিকুল ইসলাম (৩৭)।

পৃথীবির সবচেয়ে ভারী বোঝা বাবার কাঁধে সন্তানের লাশ। সে লাশের বোঝা বহন শেষে কোতয়ালী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) অপূর্ব হাসান কে আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়েছেন সদ্য সন্তান হারানো এই বাবা।

গেল রবিবার (৩ মার্চ) নিখোঁজ হয় তৃষা। সোমবার (৪ মার্চ) সন্ধ্যায় তৃষার মরদেহ উদ্ধারের পর মূল অভিযুক্ত অস্ত্র ও মাদক ব্যবসায়ী শামিম কে খুঁজছিলো পুলিশ। মঙ্গলবার (৫ মার্চ)  নড়াইলের ভাটিয়া গ্রামে তৃষাকে চির নিন্দ্রায় শায়িত করার পরদিন বুধবার (৬ মার্চ)  ভোর ৩ টার দিকে যশোর শহরতলীর খোলাডাঙ্গার সোহরাবের রাইস মিলের পাশ থেকে তৃষা হত্যায় মূল অভিযুক্ত অস্ত্র ও মাদক ব্যবসায়ী শামিমের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করে কোতয়ালী মডেল থানা পুলিশ। এ সময় ঘটনাস্থল থেকে একটি ওয়ান শুটারগান ও ৫০ পিস ইয়াবাও উদ্ধার করে পুলিশ।

মূল অভিযুক্ত শামিম নিহত হবার খবর ছড়িয়ে পড়লে ছোট্ট শিশু তৃষার পরিবারের শোকের মাতমে যেন শান্তনার অবিরাম বারিধারা ঝরে পড়েছে। মুহুর্তেই মুছে গেছে চোখের জল শোক হয়ে গেছে শক্তি। ছোট্ট শিশু তৃষার পরিবার এখন শুধু দোয়া করছেন তাদের সদ্য প্রয়াত তৃষার জন্য, দোয়া করছেন কোতয়ালী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) অপূর্ব হাসানের জন্য, দোয়া করছেন আরবপুর ইউপি চেয়ারম্যান শাহারুল ইসলামের জন্য।

শুধু নড়াইলেই নই-যশোরের ধর্মতলা এলাকায়ও শোকাহত হৃদয়ে অষ্ফুট হাসি ফুঁটেছে স্থানীয় বাসিন্দাদের চোখে মুখে। শুক্রবার (৮ মার্চ) যশোরের ধর্মতলায় ছোট্ট শিশু তৃষার বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনায় অয়োজিত দোয়া মাহফিলে জেলা প্রশাসনের সাহসী ভূমিকা ও তাৎক্ষনিক তৎপরতার ব্যাপক প্রশংসা করেন স্থানীয়রা। এ সময় তৃষার বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করে দোয়ার পাশাপাশি ওসি অপূর্ব হাসান ও আরবপুর ইউপি চেয়ারম্যান শাহারুল ইসলামের জন্যেও বিশেষ মোনাজাত করা হয়েছে।

ধর্মতলা বাজার কমিটির সাধারন সম্পাদক জামান বলেন, তৃষার ব্যাপারে পুলিশের  ভূমিকা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। ওসি সাহেব যে ভাবে অভিযোগ পাওয়ার পর ঝাপিয়ে পড়েছেন ইতিপূর্বে কোন ওসি এমন ভূমিকা চোখে পড়েনি। আমরা মানববন্ধন থেকে তৃষা হত্যার মূল আসামির সর্বোচ্চ শাস্তি চেয়েছিলাম আল্লাহ্ সেটা কবুল করেছে। এখন এক জন আসামি পুলিশের হেফাজতে রয়েছে তাঁর জবানবন্দি অনুযায়ী এ ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত আটক করে আইনের আওতার আনার দাবি জানাচ্ছি ।জামান আরোও বলেন চেয়ারম্যান শাহারুল ইসলামের উদ্দ্যোগে মাদক ৯০ শতাংশ নির্মূল হয়েছে আর কোন তৃষা এ ভাবে যেন বিচ্ছিন্ন মাদক সেবীদের বলি না হয়ে যায় সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের অনুরোধ জানান তিনি। ধর্মতলা এলাকায় ফের পূর্বের মত মাদক বিরোধী অভিযান চালানো উচিত বলে মনে করেন তিনি।

ধর্মতলা ইজিবাইক শ্রমিক সমিতির সাধারন সম্পাদক বাদশা বলেন, সে দিন আরবপুরের চেয়ারম্যান শাহারুল ইসলাম, ওসি অপুর্ব হাসান, ফায়ার ব্রিগেড যে আন্তরিতার সাথে কাজ করেছেন সাহায্য করেছেন তা ভুলার মত না। ওসি সাহেব খবর পেয়েই সাথে সাথে চলে আসে এবং শামিমের ঘরের তালা ভেঙ্গে হত্যার আলামত উদ্ধার করেছেন। আমরা বিচার পেয়ে গেছি তবে আমাদের দাবি আংশিক পূর্ণ হয়েছে। যে ভাবে নৃসংশ ও পাশবিক নির্যাতন করে তৃষাকে হত্যা করা হয়েছে তার বিনিময়ে শুধু শামিম নই যারা জড়িত আছে প্রত্যেকটি আসামির একই রকম পরিণতি আমরা দেখতে চাই।আমার ধারনা ৩/৪ জন জড়িত রয়েছে। সর্বপরি ওসি সাহেব যে কাজ করেছে আমরা তাকে সাধুবাদ জানাই, আমরা যে দিন মামলা করতে গিয়েছিলাম ওসি সাহেব সে দিন আমাদের সাথে যে ব্যবহারটি করেছেন তাতে আমি মুগ্ধ। থানায় এ রকম ব্যবহার করে আগে কোনদিন দেখিনি। এই ওসি যদি যশোরে থাকে আপনি বিশ্বাস করেন ভাই মানুষ পুলিশকে কোনদিন গালাগালি দেবে না। আরোও খুশি হবো যদি ঘটনার সাথে জড়িত প্রত্যেকটি আসামির একই পরিণতি হয়।

ধর্মতলা (দক্ষিনপাড়া) মহিলা আওয়ামীলীগ নেত্রী জেসমিন আরা বলেন,  আমি তৃষার রক্তাত লাশ কোলে করে হাসপাতালে নিয়ে যায় । ঐ সময় তৃষার হাত পা বাঁধা ছিলো জরায়ু ছেঁড়া ছিলো সারা শরীরে রক্ত ছিলো। এত জঘন্য অবস্থা ছিলো যে বলার মত নই। আমারা মানববন্ধ করেছিলাম বিচার পাইছি। অপূর্ব ভাই (ওসি অপুর্ব হাসান) যে ভাবে পদক্ষেপ নিয়েছেন আমরা পুলিশের উপর খুবই সন্তুষ্ট। ওসি অপুর্ব হাসান মাদক সন্ত্রাস ধর্ষন শিশু হত্যা এসকল ব্যাপারে যা করছেন তাঁর প্রতি আমাদের অসীম কৃতজ্ঞতা। আমার ধর্মতলার সবাই খুশি আমরা খুব খুব খুবই ভালো আছি ভাই এখন। আমাদের চেয়ারম্যান শাহারুল ভাইও এ সকল ব্যাপারে স্পাত কঠিন। আল্লাহ স্বয়ং আমাদের উপর রহমত করেছে।

নির্মম ভাবে নিহত তৃষার বাবা তরিকুল ইসলাম বলেন, শামিমের উপর আমার প্রথম সন্দেহ ছিলোনা। কিন্তু আমার মেয়েকে যখন পাচ্ছিলাম না তখন শামিমের ঘরের লাইট অফ আর তালা বন্ধ ছিলো । আর শামিম বাইরে থেকে ফোন করে আরেক প্রতিবেশির কাছে এলাকার খবর জানতে চাচ্ছিলো। তখনই খটকা লাগে। আমি বিষয়টি শাহারুল ইসলাম ও ওসি সাহেব কে জানাই। তখন তাঁরা শামিমের ঘরের তালা ভেঙ্গে হত্যায় ব্যবহৃত আলামত ও মাটি মাখানো শাবল উদ্ধার করে। পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন করলে তরিকুল বলেন আমি আন্তরিকতার সাথে পুলিশ প্রশাসন কে বলতে চাই তাঁরা যেভাবে তদন্ত করতেছেন আমি তাতে খুবই সন্তুষ্ট। আল্লার রহমত ছাড়া এরকম বিচার আশা করা যায় না। আল্লাহ রহমত নাযিল করেছে আর এই ওসি অপূর্ব হাসান ছিলো তাই সঠিক বিচার আমি পাইছি। শাহারুল ভাইও আমাকে বিশাল উপকার করেছে আমি এই এলাকার ছেলে না তারপরেও যে আন্তরিকতা সহযোগিতা শাহারুল ভাই করেছেন আমি তাকেও আন্তরিক ভাবে ধন্যবাদ জানাই। ৭ বছর আগে তরিকুল জীবিকার তাগিদে যশোর আসেন তখন তৃষার বয়স ছিলো ১ বছর। পরে আরেক কন্যা সন্তান খাদিজা জন্ম হয় যার বয়স এখন আড়াই বছর। দুই সন্তান ও স্ত্রী কে নিয়ে যশোর থাকতেন তরিকুল।

আরবপুর ইউপি চেয়ারম্যান শাহারুল ইসলাম বলেন, তৃষা হত্যা ঘটনায় পুলিশের প্রশংসনীয় ভূমিকা ছিলো। ওসি অপূর্ব হাসানের মত একজন চৌকস পুলিশ অফিসার যশোরবাসীর জন্য অর্শিবাদ। যাকে নিয়ে গর্ব করা যায় । মালিক তাকে দীর্ঘজীবি করুক তিনি যেন এ ভাবে জনগণের সেবা করতে পারেন এই কামনা রইল। শুধু তৃষা হত্যাকান্ড ই নই মাদক সন্ত্রাস দমনেও অপূর্ব হাসান একজন মাইলফলক।  সমাজ থেকে সকল প্রকার অসামাজিক কর্মকান্ড চিরতরে দূর হোক এটাই আমার কামনা। আর কোন তৃষাকে আমরা হারাতে চাইনা। সমাজের ভালোর জন্য যা কিছু করা দরকার সব দাবি আমি পূরন করবো। আগামি শুক্রবার ধর্মতলা সহ প্রতিটি মহল্লায় মহল্লায় মাদক নির্মূল কমিটি গঠন করা হবে বলে জানান শাহারুল ইসলাম।

এ ছাড়াও বিভিন্ন রাজনৈতিক, সমাজিক সংগঠন সহ  সোস্যাল মিডিয়াতেও অভিনন্দনের জোয়ারে ভাসছেন ওসি অপূর্ব হাসান।

কোতয়ালী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) অপূর্ব হাসান বলেন, ঘটনার সাথে জড়িত ছিলো ৩ জন ।একজন আসামি সাইফুল (২৬) পুলিশ হেফাজতে রয়েছে শামিম তো গ্রেপ্তারের আগেই বন্দুকযুদ্ধে মারা গেছে বাকী একজনের নাম তদন্তের গোপনীয়তার স্বার্থে বলতে পারছিনা। সাইফুলের স্বীকারোক্তি তাঁরা ৩ জনই মাদকাসক্ত ছিলো এবং মানষিক ভারসম্য হারিয়ে তাঁরা এ কর্মকান্ড ঘটিয়েছে। ছোট্ট শিশুটিকে ৩ বার পালাক্রমে ধর্ষন করেছে তাঁরা চতুর্থবার ফের ধর্ষন করতে গেলে শিশুটি ডাক চিৎকার করতে থাকে সে সময় মুখ চেপে ধরলে মেয়েটি মারা যায়। মাদকের ব্যাপারে ফের অভিযানে নেমেছে পুলিশ এবার অল্প কিছুদিনের মধ্যে যশোর কে মাদকমুক্ত ঘোষণা করবো। কমিউনিটি পুলিশিং ও স্থানীয়দের সাথে নিয়ে আমরা যশোর কে মাদক সন্ত্রাস মুক্ত করবো এটাই আমার মিশন। আর কোন তৃষা হত্যার পুণরাবৃত্তি যশোরে হতে দিবোনা। এ ছাড়াও সার্বিক ব্যাপারে পুলিশের নজরদারি রয়েছে এবং জেলা প্রশাসনের সহযোগিতা সব সময় জনগণের সাথে থাকবে বলে আশ্বস্ত করেন ওসি।

আরো সংবাদ