আজ - মঙ্গলবার, ২৪শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৯ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২২শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি, (শীতকাল), সময় - রাত ১২:০৩

সিলেটের গোয়াইনঘাটে ফের বন্যা

সিলেটের গোয়াইনঘাটে কয়েকদিনের টানা বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে ষষ্ট দফা বন্যায় প্লাবিত,বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে উপজেলার নিম্নাঞ্চলের প্রায় কয়েক শতাধিক হেক্টর জমির আউস ও আমন ধানের জমি,তলিয়ে গেছে সবজি ক্ষেত সহ কয়েক শত মাছের ফিসারী। টানা ষষ্ট বারের মত আবারও বন্যা দেখা দেয়ায় কৃষকের হয়েছে সর্বনাশ,রোপায়িত জমির আউস ও আমন ধান নষ্ট হয়ে যাওয়ার শঙ্কায় তারা এখন দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। নতুন করে ধানের চারা রোপণের সময়ও প্রায় শেষ। কাজেই এ যাত্রায় যদি ফসল নষ্ট হয়ে যায় তাহলে,তাদের আর কোন উপায় থাকবে না। নতুন করে বন্যার পানিতে জমির ফসল তলিয়ে যাওয়ায় নানা শঙ্কায় দিন কাটছে উপজেলার আলীরগাঁও ইউনিয়নের কাকনাখাই গ্রামের বাসিন্দা কৃষক মোঃ জামাল উদ্দিন। এই প্রতিবেদকের সাথে আলাপকালে নানা শঙ্কা প্রকাশ করে তিনি জানান, এ যাবত কালে এমন দুর্যোগ তিনি কখনোই দেখেননি। এ বছর যতবার বন্যা হয়েছে, আর বন্যায় তলিয়ে গিয়ে ফসল নষ্ট হয়েছে এমন নজির এর আগে খুব কমই দেখেছেন তিনি। এর উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, গত কয়েক দফা বন্যায় তার আমন ধানের বীজতলা থেকে শুরু করে বোনা আমন নষ্ট হয়েছে একাধিকবার। তারপরও গেল কয়েকদিন আগে সাড়ে তিন হাজার টাকা দিয়ে এক বিঘা পরিমাণ জমির জন্য (তেত্রিশ শতাংশ) ধানের চারা কিনে তা রোপন করেছেন তিনি। কিন্তু নতুন করে বন্যা দেখা দেয়ায় সেই ফসলও এখন পানিতে তলিয়ে গেছে। শেষ রক্ষা হবে কিনা এনিয়ে শঙ্কায় দিন কাটছে তার। শুধু জামাল উদ্দিনই নন, নতুন করে জমির ফসল তলিয়ে যাওয়ায় তার মত শঙ্কায় দিন কাটছে একই এলাকার কৃষক হামিদ আলী,জমির উদ্দিন,ফরহাদ মিয়া, তোফাজ্জল মিয়াসহ প্রায় শতাধিক কৃষকের। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, টানা কয়কে দিনের ভারী বর্ষণ এবং ডাউকি, পিয়াইন ও সারী নদী দিয়ে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে বৃহ্স্পতিবার থেকে গোয়াইনঘাটের নিম্নাঞ্চলগুলোতে বন্যার পানি বৃদ্ধি পেতে থাকে। আজ শুক্রবার ২৫যে সেপ্টেম্বর সকাল পর্যন্ত যা বৃদ্ধি পেয়ে উপজেলার পূর্ব জাফলং ইউনিয়নের আসাম পাড়া, আসাম পাড়া হাওর, ছৈলাখেল অষ্টম খন্ড (আংশিক এলাকা) নবম খন্ড, সানকি ভাঙ্গা হাওর, নয়াগাঙের পার, বাউরবাগ হাওর, ভিত্রিখেল হাওর, আলীরগাঁও ইউনিয়নের নাইন্দার হাওর, তিতকুল্লি হাওর, বুধিগাঁও হাওর, রাজবাড়ি কান্দি,কাকনাখাই বারোহাল গ্রামসহ পশ্চিম জাফলং, রুস্তমপুর, ডৌবাড়ী, লেঙ্গুড়া, তোয়াকুল, নন্দীরগাঁও এবং পশ্চিম আলীরগাঁও ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পড়ে। এতে করে কৃষকের বোনা আমন ও আমন ধানের বীজতলা এবং সবজি ক্ষেতসহ প্রায় কয়েক শতাধিক হেক্টরের বেশি জমির ফসল পানিতে তলিয়ে যায়। এ ব্যাপারে বিডি সিলেট নিউজ ডটকম’কে গোয়াইনঘাট উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল মোত্তালেব জানান বর্তমান বন্যার পানিতে গোয়াইনঘাট উপজেলার পূর্ব জাফলং,পশ্চিম জাফলং, লেঙ্গুরা,তোয়াকুল,ও নন্দীরগাঁও ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলের আমনের ফসলি জমি প্লাবিত হয়েছে। উল্লেখযোগ্য বেশি ক্ষেতের পরিমাণ আলীরগাঁও, ডৌবাড়ী ও ফতেহপুর ইউনিয়ন। পশ্চিম জাফলং ইউনিয়নের বন্যা কবলিত নিম্নাঞ্চল আমবাড়ি হাওর, গহড়া, শিমুলতলা,ছোটখেল পোয়াউরা ও ছাতারগ্রাম। পূর্ব জাফলং ইউনিয়নের বাউরভাগ হাওর, বড়বন হাওর, আসামপাড়া হাওর ও ভিত্রিখেল হাওর। লেঙ্গুরা ইউনিয়নের গরুকচি, নিয়াগুল,চিটিংবাড়ী। রুস্তুমপুর ইউনিয়নের উপর গ্রাম, হাদার পার,ভিতরগোল,দারীখেল,পেকেরখাল ও বঙ্গবীর। তোয়াকুল ইউনিয়নের লাকী,বলগাঁও,জাঙ্গাইল,বীরকুলি,ফুলতৈলছগাম ও পূর্ব পেকের খালের কয়েকটি গ্রাম উল্লেখযোগ্য। নন্দিরগাঁও ইউনিয়নের নন্দিরগাঁও, নওয়াগাঁও, কদমতলা, লামাপাড়া, কচুয়ার পার ও আংগারজুর গ্রামের আংশিক অংশ। উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল মোতালিব আরো বলেন এই বছর আমনের ফসল অনেকটা ভালো হয়েছিল। বন্যার স্থায়িত্ব দীর্ঘ হলে গোটা উপজেলায় প্রায় ৫০০ থেকে ৭০০ হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

আরো সংবাদ