অনলাইনে স্টার মেকার অ্যাপের মাধ্যমে অভিনব প্রতারণা ও অর্থ-সম্পদ লুট চক্রের হোতাকে আটক করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) যশোর। গ্রেফতারকৃত মাসুদ রানা ওরফে সাকিব খাঁন (৩৯) পাবনার ভাঙ্গুরা উপজেলার গোনাইগাছি গ্রামের মফিজ উদ্দিনের ছেলে। এই প্রতারক অ্যাপের মাধ্যমে সম্পর্ক গড়ে একাধিক নারীর সাথে প্রতারণা করে অর্থ-সম্পদ হাতিয়ে নিয়েছে বলে জানিয়েছে পিবিআই।
শনিবার গভীর রাতে পাবনা থেকে তাকে আটকের পর হাতিয়ে নেয়া স্বর্ণালংকার রোববার খুলনা থেকে উদ্ধার করা হয়। এদিন প্রতারক মাসুদ রানা ওরফে সাকিব খাঁন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। সোমবার পিবিআই প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে এই প্রতারণার বিস্তারিত জানিয়েছে।
পিবিআই যশোরের পুলিশ সুপার রেশমা শারমিন জানিয়েছেন, প্রতারক মাসুদ রানা ওরফে সাকিব খাঁন এ নিজেকে সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন পরিচয়ে গান পরিবেশন করত। আইডির মাধ্যমে যশোরের এক স্কুল শিক্ষিকার সাথে তার পরিচয় হয়। পরিচয়ের সূত্র ধরে ভালো চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে তার কাছ থেকে দুই লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। পরবর্তীতে আরও টাকা চাইলে গত ৭ জুলাই সাকিব খান যশোরের চাঁচড়া এলাকায় ওই শিক্ষিকার সাথে দেখা করেন। এরপর তাকে ওষুধমিশ্রিত জুস খাইয়ে সম্মোহন (অবচেতন) করে দুই লাখ ৪১ হাজার টাকা মূল্যের সোনার চেইন, কানের দুল, আংটি ও মোবাইল ফোন নিয়ে চলে যায়। প্রতারণার বিষয়টি বুঝতে পেরে ওই স্কুল শিক্ষিকা ১৫ জুলাই পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার বরাবর আবেদন করে।
এই আবেদনের প্রেক্ষিতে পিবিআইয়ের এসআই রেজোয়ান ছায়া তদন্ত করে জানতে পারেন, মাসুদ রানা ওরফে সাকিব খাঁন (৩৯) পেশায় একজন কৃষক, সে এসএসসি পর্যন্ত পড়াশুনা করেছে। সে পেশায় কৃষক হলেও মূলত আর্মি ক্যাপ্টেন পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন মেয়ের সাথে সখ্যতা গড়ে তোলে। পরবর্তীতে ভালো চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে তাদের কাছ থেকে নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকর নিয়ে নেয়। বিভিন্ন জেলায় একাধিক নারীর সাথে সে এই ঘটনা ঘটিয়েছে।
অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় গত ২ সেপ্টেম্বর গভীর রাতে পিবিআইয়ের একটি দল পাবনার ভাঙ্গুরা উপজেলার থানা রোডের ওমর ট্রেডার্সের সামনে থেকে সাকিবকে আটক করে। এ সময় তার কাছ থেকে ভিকটিম এর ব্যবহৃত স্যামসাং মোবাইল ফোন এবং পরবর্তীতে গত ৩ সেপ্টেম্বর আসামি দেয়া স্বীকারোক্তি অনুযায়ী, ওই শিক্ষিকার কাছ থেকে নেয়া সোনার অলংকার খুলনার হেলাতলা রোডের নিউ অনিমা জুয়েলার্সে গিয়ে ১২ দশমিক ৫৮ গ্রাম গলিত সোনা উদ্ধার করা হয়। পরবর্তীতে স্কুল শিক্ষিকা আসামির বিরুদ্ধে যশোর কোতয়ালি থানায় মামলা করেন।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামি সাকিব ঘটনার সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে। পরে ৩ সেপ্টেম্বর সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট পলাশ কুমার দালাল’র আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান দিয়েছে বলে পিবিআই জানিয়েছে।