মানিকগঞ্জের ঘিওরে আঙ্গারপাড়া গ্রামে স্ত্রী ও দুই কন্যাকে ধারালো দা দিয়ে জবাই করে দন্ত চিকিৎসক আসাদুজ্জামান রুবেল (৪০) হত্যা করেছেন বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছেন প্রতিবেশীদের। আজ রোববার ভোররাতে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।
এরপর রুবেল সকাল সাড়ে ছয়টার দিকে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের পাচুরিয়া এলাকায় বাসের নিচে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। স্থানীয়রা জানান, এ সময় তাকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়েছে। তবে পুলিশের পক্ষ থেকে এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত (বেলা সড়ে ১১টা) রুবেলকে আটক বা হেফাজতে নেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়নি।
হত্যাকাণ্ডের শিকার রুবেলের স্ত্রীর নাম লাভলী আক্তার (৩৫)। অপর দুজন হলেন তার বড় মেয়ে বানিয়াজুরী সরকারি স্কুল অ্যান্ড কলেজের এসএসসি পরীক্ষার্থী ছোঁয়া আক্তার (১৬) ও ছোট মেয়ে বানিয়াজুরী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থী কথা আক্তার (১২)।
ঘিওর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ বিপ্লব জানান, আসাদুর রহমান রুবেল উপজেলার আঙ্গারপাড়া গ্রামের আব্দুল বারেকের ছেলে। তিনি বানিয়াজুরী বাসস্ট্যান্ডে দন্ত চিকিৎসক হিসেবে দীর্ঘদিন কাজ করে আসছেন।
রুবেলের প্রতিবেশী সোহেল হোসেন জানান, ২০ বছর আগে রুবেল ও লাভলী ভালোবেসে ঘর বাঁধেন। দীর্ঘদিন তারা সুখে-শান্তিতে সংসার করে আসছিলেন। পনের বছর ধরে রুবেল আঙ্গারপাড়া গ্রামে তার শ্বশুরবাড়ি থেকে পাওয়া জমিতে একটি ছাপড়া ঘরে বসবাস করে আসছিলেন। কিন্তু বেশ কিছু দিন ধরে তিনি ঋণগ্রস্ত হয়ে মানসিক বিকারগ্রস্ত হয়ে পড়েন। এ নিয়ে পারিবারিক কলহ বাড়তে থাকে। শনিবার রাতে স্বামী-স্ত্রীর মাঝে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে এমন ঘটনা ঘটতে পারে।
নিহত লাভলীর ভাতিজা সাইফুল ইসলাম জানান, সম্প্রতি একটি ভুল চিকিৎসা করার দায়ে রুবেলকে দেড় লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। ওই জরিমানার টাকা আজ রোববার দেওয়ার কথা ছিল। এ নিয়ে তিনি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। স্ত্রী ও দুই কন্যাকে হত্যা করে তিনি ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের পাচুরিয়া এলাকায় বাসের নিচে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন। স্থানীয়রা তাকে আহত অবস্থায় পাচুরিয়া থেকে উদ্ধার করে পুলিশের কাছে সোর্পদ করেছে।
লাভলীর মা হালিমা বেগম জানান, সকালে তিনি মেয়ের বাড়িতে যান। এ সময় ডাকাডাকি করে কারো সাড়া না পেয়ে ঘরের বাইরের ছিকল খুলে দেখা যায় রক্তাক্ত অবস্থায় খাটের শুয়ে আছেন তার মেয়ে লাভলী ও দুই নাতনি। কাছে গেলে দেখা যায় তাদের গলা কাটা।
স্থানীয় বালিয়াখোড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আব্দুল আওয়াল খান সমকালকে বলেন, রুবেল অনেক টাকা ঋণগ্রস্ত ছিলেন। মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলেন। হতাশা থেকে এমন ঘটনা ঘটাতে পারেন বলে প্রাথমিকভাবে স্থানীয়রা ধারণা করছেন।
শিবালয় সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নূরজাহান লাবণী আক্তার জানান, যে দা দিয়ে জবাই করা হয়েছে সেটি ঘর থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। লাশ তিনটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মানিকগঞ্জ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট এবং রুবেলকে আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদ করে হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যাবে।