সাড়ে ৫ হাজার টাকা মূল্যের বই ৮৫ হাজার ৫০০ টাকায় কেনার অভিযোগ উঠেছে স্বাস্থ্য অধিদফতরের বিরুদ্ধে।
বইটির নাম ‘প্রিন্সিপাল অ্যান্ড প্র্যাকটিস অব সার্জারি’। সার্জারির ছাত্র ও শিক্ষানবিশদের পড়ানো হয় এটি।
সূত্র জানায়, স্বাস্থ্য অধিদফতর এ বইয়ের ১০টি কপি গোপালগঞ্জের শেখ সায়েরা খাতুন মেডিকেল কলেজের জন্য কিনেছে, যার প্রতিটির মূল্য দেখানো হয়েছে ৮৫ হাজার ৫০০ টাকা। অর্থাৎ ১০ বইয়ে খরচ দেখানো হয়েছে ৮ লাখ ৫৫ হাজার টাকা! অথচ বইটির বাজার মূল্য সাড়ে ৫ হাজার টাকা।
শুধু এই বইয়ের বেলায়ই নয় বাজারমূল্যের চেয়ে অতিরিক্ত মূল্যে আরও কয়েকটি বই কিনেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।
সাতটি মেডিকেল কলেজের জন্য গ্রেজ অ্যানাটমি নামে ৯৫টি বই কিনেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। বইটির প্রতি কপির বাজারমূল্য ৫ হাজার থেকে ৭ হাজার টাকা।
কিন্তু স্বাস্থ্য অধিদফতরের করা বিলে প্রতিটি বইয়ের মূল্য পরিশোধ দেখানো হয়েছে ৪৩ হাজার টাকা করে। মোট ৯৫টি বই কেনা হয়েছে। যেখানে মোট খরচ দেখানো হয়েছে ৪০ লাখ ৮৫ হাজার টাকা!
অর্থাৎ বাজার মূল্যের চেয়ে অন্তত সাত গুণ বেশি দামে বইটি কিনেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
একইভাবে প্রায় ৫ গুণ বেশি দামে বার্ন অ্যান্ড লেভি ফিজিওলোজি নামের বইটির ৬৫টি কপি কিনেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।
প্রতিটি বই ২০ হাজার ৪৮০ টাকায় দেশের পাঁচটি মেডিকেল কলেজের জন্য কেনা হয়েছে। জানা গেছে, বইটির বাজারমূল্য ৪ হাজার থেকে ৬ হাজার টাকা!
একই অভিযোগ ‘অর্থোডোনটিক মেটারিয়াল সায়েন্টেফিক অ্যান্ড ক্লিনিক্যাল অ্যাসপেক্টস’ নামে বইটি কেনার বেলায়। মুগদা মেডিকেলের জন্য এ বইয়ের ৩টি কপি কিনেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।
সূত্র জানায়, বইটির বর্তমান বাজারমূল্য ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা। অথচ মূল্য পরিশোধ বিলে এ তিন বইয়ের দাম দেখানো হয়েছে ১৪ হাজার ১৭৫ টাকা করে। অর্থাৎ প্রায় ১৫ হাজার টাকার বই কেনা হয়েছে ৪২ হাজার ৫২৫ টাকায়।
এ ছাড়াও মুগদা মেডিকেলের জন্য প্রাকটিক্যাল অপটামোলজি: ম্যানুয়াল ফর বিগেনার্স নামের বইটির প্রতি কপি কেনা হয়েছে ১ লাখ ৮২ হাজার ২৫০ টাকা করে।
জানা গেছে, এর প্রতি কপির বাজারমূল্য ২৯ হাজার টাকা। প্রতিটি বই ৬ গুণ বেশি দামে এর ৫ কপি কেনা হয়েছে।
একই বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ‘অর্থোফিক্স এক্সটার্নাল ফিক্সেশন ইন ট্রমা অ্যান্ড অর্থোপেডিকস’ নামের বইটির ১০টি কপি কিনেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।
১০ কপিতে মূল্য পরিশোধ দেখানো হয়েছে ৩ লাখ ৩০ হাজার ৭৫০ টাকা। অথচ বাজারমূল্য অনুযায়ী এ ১০ কপি বইয়ের দাম দেড় লাখ টাকার মতো।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দুটি টেন্ডারে ৪৭৯টি প্রকারের ৭ হাজার ৯৫০ বই কিনেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। এ সব বইয়ের মূল্য বাবদ পরিশোধ করা হয়েছে ৬ কোটি ৮৯ লাখ ৩৪ হাজার ২৪৩ টাকা।
চলতি বছরের ১৯ জুন ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান হাক্কানী পাবলিশার্স থেকে বইগুলো কিনে স্বাস্থ্য অধিদফতর।
এর মধ্যে ৩১৭ প্রকারের মোট ২৪৫৪টি বই শুধু রাজধানীর মুগদা মেডিকেলের জন্য কেনা হয়, যার মূল্য দেখানো হয়েছে ২ কোটি ৫০ লাখ ৯১ হাজার ২৮৫ টাকা।
এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন মেডিকেল কলেজের জন্য ১৬২ প্রকারের মোট ৫৪৯৬টি বই কেনা হয়েছে, যার মূল্য দেখানো হয়েছে ৪ কোটি ৩৮ লাখ ৪২ হাজার ৯৫৮ টাকা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, স্বাস্থ্য অধিদফতরের পক্ষে এ সব বই কেনার দায়িত্বে ছিলেন উপ-পরিচালক (চিকিৎসা শিক্ষা) ডা. শেখ মো. মনজুর রহমান, শিক্ষা চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য জনশক্তি উন্নয়ন বিভাগের লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক ডা. মো. নাজমুল ইসলাম ও ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. মোহাম্মদ শামীম আল মামুন।
বইয়ের মূল্য কয়েক গুণ বেশি ধরা হয়েছে এমন অভিযোগে স্বাস্থ্য অধিদফতরের ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. মোহাম্মদ শামীম আল মামুন বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে যাচাই-বাছাই করেই মূল্য নির্ধারণ করেছি।’
এ বিষয়ে স্বাস্থ্য জনশক্তি উন্নয়ন বিভাগের লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক ডা. মো. নাজমুল ইসলামের দাবি, ‘আমরা কেনাকাটার প্রতিটি নিয়ম মেনেই বইগুলো কিনেছি।
তবে অভিযোগের বিষয়ে যাচাই-বাছাই করে দেখবেন বলে জানান তিনি।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের উপ-পরিচালক (চিকিৎসা শিক্ষা) ডা. শেখ মো. মনজুর রহমান বলেন, ‘এত ব্যবধানে বই কেনার কথা না। তবুও যেহেতু অভিযোগ উঠেছে তাই বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখব । ’