এম আহম্মেদ (যশোর প্রতিনিধি): বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুর পর যশোরের বিভিন্ন অঞ্চলে মাইকিং, পোস্টারিংয়ের মাধ্যমে স্বাধীণতার পক্ষের প্রচারণা থেকে শুরু করে আজ অব্দি শুধুমাত্র স্বাধীণতার পক্ষের জনশক্তি দ্বারা প্রচারিত পত্রিকা বিক্রেতা যশোরের আওয়ামীলীগ পাড়ায় পরিচিত মুখ চিত্তরঞ্জন দাসের থাকার জন্য ঘর নেই।
৭৫ পরবর্তী,পূর্ববর্তী প্রায় ৫০ বছর ধরে পত্রিকা বিক্রয় করে আসছেন যশোরের হকার চিত্তরঞ্জন দাস। বর্তমান তার বয়স ৬৫ বছর। স্বল্প রোজগার, সদা আধাপেট আহারী আর গৃহহীন এ বৃদ্ধ হকার চিত্তরঞ্জনের বেচাবিক্রির তালিকায় স্বাধীণতার বিপক্ষের কোন পত্রিকা নেই। দেশকে ভালোবাসেনা, মুক্তিযুদ্ধ বিরোধি বা দেশপ্রেমে ঘাটতি রয়েছে এরকম কোন জনশক্তি দ্বারা প্রচারিত পত্রিকাগুলো বর্জন কারী চিত্তরঞ্জন সর্বজন সমাদৃত।
৬৫ বছর বয়সী চিত্তরঞ্জন দাস মৃত মলিনদ্রনাথ দাসের পূত্র। এক কণ্যা সন্তান ও এক পূত্র সন্তানের জনক এই চিত্তরঞ্জন দাসের একমাত্র আয়ের উৎস পত্রিকা বিক্রির লভ্যাংশ। বেঁছে বেঁছে পত্রিকা বিক্রি করায় চিত্তরঞ্জনের বিক্রয়কৃত পত্রিকার তালিকা অনেক ছোট। গত ৫০ বছরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলায় দৃশ্যমান উন্নয়নের ছোয়া লাগলেও বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী যশোরের হকার চিত্তরঞ্জনের ভাগ্যে বদল ঘটেনি। ভাড়া বাড়িতেই স্ত্রীকে নিয়ে জীবন কাটছে তার। অল্প উপার্জনে একমাত্র ছেলেটিকে লেখাপড়া শেখানো সম্ভব হয়নি। এরই মধ্যে কণ্যাদায় মিটিয়ে করোনার ভয়াবহ সময় মোকাবেলা শেষে কোনরকম টিকে আছে এই দেশপ্রেমী মানুষটি।
একটু একরোখা আর বঙ্গবন্ধু প্রেমী হওয়ায় আওয়ামী সরকার দলীয় এই পত্রিকা বিক্রেতাকে কয়েকমাস জেল খাটতে হয়েছে তাকে। জেল থেকে ছাড়া পেলেও জীবনে একটুকুও সুখের দেখা না পাওয়া বৃদ্ধ মানুষটির কারও কাছে কোন চাওয়া নেই। জীবনে যতদিন বেঁচে থাকবেন ততদিন শুধুমাত্র স্ধাধীণতার পক্ষে থেকে জীবনধারণ করতে চাওয়া চিত্তরঞ্জন কেবলই অসুস্থ স্ত্রীকে নিয়ে একটি ঘর পেলেই খুশি। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার আশ্রায়ন প্রকল্পের অধীনস্থ একটি থাকার জায়গার দাবী তার। শেষ নিশ্বাস থাকা পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও শেখ হাসিনার জয়গান করতে পারাটায় তার স্বপ্নপূরণ।
তিনি বলেন, “বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে দেশ স্বাধীন হয়েছিল বলেই তার প্রতি আমি এত দুর্বল। আমি পত্রিকা বিক্রি করি কিন্তু আওয়ামীলীগও করি। সরকার দলে না থাকলে আমাকে অনেক অত্যাচার সহ্য করতে হয়েছে,জেল খেটেছি, বহুদিন না খেয়ে থাকতে হয়েছে। আমার থাকার জন্য বাড়ি নেই তবুও আমি খুশি। শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে যুদ্ধ হয়েছে,দেশ স্বাধীণ হয়েছে। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা এখনও যুদ্ধ করছেন। দেশের মানুষকে সুখে রাখতে শেখ হাসিনার সকল অবদানের কথা সবাইকে জানানোর উদ্যেশ্যেই আমি এখনো পত্রিকা বেঁচি।”
স্বাধীনতার বিপক্ষের জনশক্তি দ্বারা পরিচালিত কোন পত্রিকায় বিক্রয় করেন না চিত্তরঞ্জন । দিনে দু-তিনশ টাকা রোজগার করেন তিনি। স্বামী স্ত্রী দুজনে বেজপাড়া পুজোর মাঠ এলাকায় ভাড়া বাড়িতে থাকা চিত্তরঞ্জন দাস শেষ বয়সে একটি আশ্রয় চান।