ক্যান্সারে আক্রান্ত এই শহীদ-সন্তান কানাডার ভ্যাংকুভারের একটি হাসপাতালে বাংলাদেশ সময় শনিবার বেলা ১০টার দিকে মারা যান।
তার বয়স হয়েছিল ৬৬ বছর। তিনি দুই পুত্র সন্তানের জনক।
ইত্তেফাকের সাবেক সাংবাদিক শাহীন রেজা নূর যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দাবির আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন। ‘প্রজন্ম একাত্তর’ গড়ে তোলায় নেতৃত্ব দেন তিনি। জামায়াত নেতা আলী আহসান মো. মুজাহিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে তিনি সাক্ষী ছিলেন।
শাহীন রেজা নূর দীর্ঘদিন ধরেই কানাডায় বসবাস করছিলেন। মাঝেমধ্যে তিনি দেশে আসতেন। সর্বশেষ তিনি ২০১৮ সালে বাংলাদেশে এসেছিলেন।
শাহীন রেজা নূরের ভাই তৌহিদ রেজা নূর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “তিনি তিন বছর ধরে অগ্নাশয়ের ক্যান্সারে ভুগছিলেন। তার কেমো চলছিল। আজ সকালে তিনি চলে গেলেন।”
এর আগে কোলন ক্যান্সার হলেও চিকিৎসায় তিনি সেরে উঠেছিলেন বলে জানান জাহিদ।
শাহীন রেজা নূরের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তার দাফনের বিষয়ে তৌহিদ রেজা নূর বলেন, “শাহীন ও আমাদের পরিবারের ইচ্ছা, দেশের মাটিতেই অন্তিম শয়ান হোক তার। এ ব্যাপারে আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি।”
শাহীন রেজা নূরের বাবা সিরাজুদ্দীন হোসেন ছিলেন দৈনিক ইত্তেফাকের বার্তা ও কার্যনির্বাহী সম্পাদক। তার আট সন্তানের মধ্যে দ্বিতীয় শাহীন রেজা নূরের জন্ম ১৯৫৫ সালে মাগুরা জেলার শালিখা থানার শরশুনা গ্রামে।
১৯৭১ সালের ১০ ডিসেম্বর বুদ্ধিজীবী নিধনযজ্ঞ শুরু হলে তার নির্মম শিকার হন সাংবাদিক সিরাজুদ্দীন হোসেন।
যুদ্ধাপরাধীর বিচার দাবির আন্দোলনে থেকে শহীদ সন্তানদের নিয়ে গড়ে ওঠা সংগঠন ‘প্রজন্ম একাত্তর’র সভাপতি শাহীন রেজা নূর।
একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরু হলে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মো. মুজাহিদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দেওয়ার পর হামলার মুখেও পড়েছিলেন শাহীন রেজা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় স্নাতক ডিগ্রি নেওয়ার পর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে স্নাতকোত্তর করেন শাহীন রেজা।
তিনি ১৯৭২ সালে ঢাকা বেতার কেন্দ্রে বার্তা বিভাগে অনুলিপিকারের চাকরি নিয়ে কর্মজীবন শুরু করেন, পরে অনুবাদকের ভূমিকাও পালন করেন।
১৯৭৩ সালের নভেম্বর মাসে দৈনিক ইত্তেফাকের শিক্ষানবিশ সহ-সম্পাদক পদে যোগ দেন শাহীন রেজা। একটানা ১৬ বছর ইত্তেফাকে সাংবাদিকতা করার পর ১৯৮৮ সালে তিনি কানাডা যান। সেখানে মন্ট্রিয়ালে থেকে বাংলা সাপ্তাহিক প্রবাস বাংলা প্রকাশের সঙ্গে সম্পৃক্ত হন।
কানাডা থেকে দেশে ফিরে আবার দৈনিক ইত্তেফাকে যোগ দেন।
বাংলাদেশ টেলিভিশনের বার্তা বিভাগে অনুবাদক হিসেবে কিছুকাল কাজ করেছেন তিনি। জাতীয় রাজনীতি, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বিষয়ের উপরও প্রচুর লেখালেখিও করেন।