আজ - শনিবার, ২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২১শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি, (হেমন্তকাল), সময় - সকাল ৭:৫৫

জয় দিয়ে ২০২১ শুরু তামিমদের

লক্ষ্য মাত্র ১২৩ রান। বাংলাদেশ এই রানটা সহজেই তুলে নেবে, এমনটাই আশা ছিল বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের। প্রতিপক্ষে আলজারি জোসেফ ছাড়া ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রতিষ্ঠিত বোলারদের কেউ নেই। এই রান বাংলাদেশ কত ওভারের মধ্যে তুলে নেবে, কত উইকেট হাতে রেখে তুলে নেবে—সেটিই তাই ছিল বড় প্রশ্ন।

একেবারে সহজেই যে জিতে গেছে বাংলাদেশ, এমনটা বলা যাবে না। শীতের মেঘলা দিনে পুরো দিন ফ্লাডলাইটের নিচে খেলা হয়েছে, সকালে বৃষ্টি হয়েছে, সবকিছুর প্রভাব পড়েছে পিচে। তার ওপর করোনাকে পাশ কাটিয়ে আজই প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলতে নেমেছে বাংলাদেশ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের এটি দ্বিতীয় না তৃতীয়—কোন সারির দল সে নিয়ে আলোচনা যতই চলুক, ৩০০-এরও বেশি দিন পর আন্তর্জাতিক ম্যাচে নামার আড়ষ্টতা তো একটু ছিলই বাংলাদেশের। সঙ্গে যোগ হলো কন্ডিশনও। তবু জয় দিয়ে ২০২১ শুরু করতে পেরেছে বাংলাদেশ।

সে কারণেই কি না, বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানের ব্যাটে স্ট্রোকের ফুলঝুরি দেখা গেল না। সহজ স্বাভাবিক স্ট্রোক প্লে দেখা গেছে খুব কম। লক্ষ্য কম থাকায় দেখেশুনে খেলার, ম্যাচের মধ্যেই ব্যাটে-বলে ‘নক’ করার, ম্যাচের আবহ আরেকটু গায়ে মাখার হিসাবও ছিল কি না কে জানে!

তবু ৬ উইকেট আর ৯৭ বল হাতে রেখেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের ১২২ রান পেরিয়ে গেছে বাংলাদেশ। অধিনায়ক হিসেবে এই ম্যাচ দিয়েই পূর্ণকালীন দায়িত্ব শুরু করা তামিম ইকবাল ওপেনিংয়ে নেমে ৪৪ রান করেছেন।বিজ্ঞাপন

তামিম আউট হয়েছেন ৪৪ রান করে।
তামিম আউট হয়েছেন ৪৪ রান করে। 

তামিমের সঙ্গে ওপেনিং জুটিতে ভালো শুরু করেছিলেন লিটন দাস। লক্ষ্য কম হলেও স্নায়ুচাপ না বাড়ায় ভালো শুরুটা জরুরি ছিল। ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে আলজারি জোসেপ দারুণ বোলিং করছেন। বেশ কয়েকবার ব্যাটসম্যানের ব্যাট ফাঁকি দিয়েছে তাঁর বল। ভাগ্য একটু এদিক-ওদিক হলে উইকেট পেয়েই যেতেন উইন্ডিজের ২৪ বছর বয়সী ফাস্ট বোলার।

কিন্তু তাঁর সঙ্গে বোলিং উদ্বোধন করা অন্য বোলার চেমার হোল্ডারকে শুরু থেকেই আক্রমণ করে গেছে বাংলাদেশ। ৩ ওভারে ২৬ রান দিয়েছেন এই ম্যাচ দিয়ে অভিষিক্ত হোল্ডার। তাঁর কারণেই প্রথম ৭ ওভারে লিটন ও তামিম তুলে নেন ৩৭ রান। এ সময়ে ৬টি চার মেরেছে বাংলাদেশ, এর মধ্যে একটি জোসেফের বলে, তৃতীয় ওভারে যেটি মেরেছিলেন তামিম। বাকি ছয়টিই হোল্ডারের বলে। অবশ্য সপ্তম ওভারের শেষ বলে জোসেফের একটি বল লেগ বাই হয়েও চার হয়েছে। ৭ ওভার শেষ হওয়ার সময়ে তামিমের রান ছিল ৩২ বলে ২০, লিটনের ১২ বলে ১০।

জোসেফকে সরিয়ে উইন্ডিজ অধিনায়ক জেসন মোহাম্মদ অষ্টম ওভারে স্পিনার নিয়ে আসতেই বাংলাদেশের রানে বাঁধ পড়ে। একদিকে জোসেফ, অন্যদিকে আকিল মিলে চেপে ধরেছিলেন লিটন-তামিমকে। পরের ৫ ওভারে আসে মাত্র ৪ রান! ১৩তম ওভারে অবশ্য এক-এক করেই ছয় রান নেন তামিম-লিটন।

একদিকে রান আটকে যাওয়া, অন্যদিকে বাউন্ডারি না আসা—এই চাপেই হয়তো ভেঙে যায় লিটনের ধৈর্যের বাঁধ। ১৪তম ওভারের দ্বিতীয় বলে আকিলের বলের লাইন মিস করে বোল্ড হয়ে যান বাংলাদেশ ওপেনার (১৪ রানে), আজ উইন্ডিজের অভিষিক্ত ছয়জনের একজন আকিলের প্রথম ওয়ানডে উইকেট এটি।

পরের উইকেটটিও আকিলের। তবে সেটিকে নাজমুলের ‘উপহার’ বললেও ভুল হবে না। ১৬তম ওভারের শেষ বলে টাইমিংয়ে গড়বড় করে ফেলেন নাজমুল, বল তাঁর ব্যাটের কানায় লেগে মিডউইকেটে সহজ ক্যাচ! সাকিবকে নিচে নামিয়ে ব্যাটিং অর্ডারের ৩ নম্বর জায়গাটা ধরে রেখেছেন নাজমুল, কিন্তু আজ মাত্র ১ রান করে সেটির মূল্য দিতে পারেননি বাঁহাতি ব্যাটসম্যান।

এরপর সাকিবের সঙ্গে ২৬ রানের জুটি গড়ার পর উইন্ডিজ অধিনায়ক জেসন মোহাম্মদের বলে স্টাম্পড হয়ে গেছেন তামিম। ইনিংস যত গড়িয়েছে, স্পিন আক্রমণ যখন এসেছে, তারপর থেকে তামিমের ব্যাটেও অবশ্য ইনিংস শুরুর ছন্দটা ছিল না। তবু অধিনায়ক হিসেবে প্রথম ইনিংসে ফিফটির দিকে যেতে যেতেও আউট হয়ে গেছেন ৪৪ রানে। ৬৯ বলে গড়া ইনিংসটা সাজানো ৭ চারে।

দলের ১০৫ রানের সময় সাকিব আউট হয়েছেন ২৮তম ওভারের শেষ বলে আকিল হোসেনের বলে। বল তাঁর ব্যাটে লেগে স্টাম্পে আঘাত হানে। নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে ক্রিকেটে ফেরার পর শুরুটা বল হাতে রাঙালেও ব্যাট হাতে দারুণ কিছু করা হয়নি সাকিবের।

সাকিব আউট হওয়ার সময়ই অবশ্য জয়ের জন্য আর ১৮ রান দরকার ছিল বাংলাদেশের, মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদউল্লাহ মিলে আর কোনো বিপদ বাড়তে দেননি। ১৬ বলে ৯ রান করা মাহমুদউল্লাহ দারুণ শটে চার মেরে রানের খাতা খুলেছেন, আর মুশফিকের ৩১ বলে ১৯ রানের ইনিংসে একমাত্র চারটি এসেছে বাংলাদেশের জয়সূচক বাউন্ডারি হয়ে। তা-ও আবার রিভার্স সুইপে!

এর আগে সাকিব ৪ উইকেট, অভিষিক্ত হাসান মাহমুদ ৩ উইকেট আর উইন্ডিজ ইনিংসের শুরুতেই বৃষ্টি-বাধার আগে-পরে মোস্তাফিজুর রহমানের ২ উইকেটে ওয়েস্ট ইন্ডিজ অলআউট হয়ে যায় ১২২ রানে। উইন্ডিজের হয়ে অভিষিক্ত কাইল মেয়ার্স ৪০ রান করেন, সাতে নামা রোভম্যান পাওয়েল করেন ২৮ রান। ষষ্ঠ উইকেটে এ দুজন গড়েছিলেন ৫৯ রানের জুটি।

আরো সংবাদ
যশোর জেলা
ফেসবুক পেজ
সর্বাধিক পঠিত