ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষদ সমূহের ডীন পদে নির্বাচন নিয়ে মনোনায়ন নির্ধারণ করেছে নীল দল । এতে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডীন পদের জন্য মনোনায়ন চেয়ে এগিয়ে আছেন একই সাথে দুই জন। তবে তাদের মধ্যে , অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের সাবেক চেয়্যারমান অধ্যাপক জিয়াউর রহমানের মনোনায়ন চাওয়া নিয়ে তৈরি হয়েছে বিতর্ক। পূর্ববর্তী সময়ে একাধিক প্রশাসনিক জায়গায় দায়িত্ব পালনকালীন একাধিক অর্থ কেলেঙ্কারী সহ নানা অভিযোগে অভিযুক্ত এই শিক্ষক।
বিশ্ববিদ্যালয়ের জিয়াউর রহমান হলের প্রভোস্ট থাকাকালীন সময়ে প্রভোস্টের নিয়মিত রুটিন ওয়ার্কের কাজেও তিনি শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বিভিন্ন কাগজ ও দরখাস্ততে সাক্ষর বাবদ গ্রহণ করতেন অর্থ। যার সুনির্দিষ্ট একটি অভিযোগ প্রচারিত হয়েছে একাধিক সংবাদ মাধ্যমে । তার দায়িত্বকালীন সময়ে চার বছরে যার পরিমান ছিল প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ টাকা।
এছাড়া হল প্রভোষ্ট থাকা কালীন সময়ে হ্যান্ডেলিং চার্জ নামে এক অভিনব ফি আদায় করেও বিতর্কিত হয়েছেন তিনি। শুধু তাই নয়, প্রাধ্যক্ষের বাংলো ঠিক করতেও হলের ফান্ড থেকে তোলা হতো টাকা। যদিও এসব জানা নেই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের। এ নিয়ে তৎকালীন সময়ে মুখ খুলতে নারাজ ছিলেন ড. জিয়া রহমান।
পর পর দুই মেয়াদে তিনি হলের প্রভোষ্ট থাকাকালীন সময়ে ২০১৫-১৬ এবং ১৬-১৭ সালে হ্যান্ডেলিং চার্জ বাবদ আদায় করা হয়েছে ১ লাখ ৬৯ হাজার ৯৮০ টাকা। ১৬-১৭ এবং ১৭-১৮ সেশনে আদায় হয়েছে ১ লাখ ৮৫ হাজার ৩৫০ টাকা। ১৭-১৮ ও ১৮-১৯ সেশনে চারশ বদলে ফি বাড়িয়ে করা হয় ৬০০। সে হিসেবে আদায় হয় ২ লাখ ৩২ হাজার ৭৫৫ টাকা।
এই টাকার খরচের খাতে দেখা যায়, প্রতিবছরই আদায় করা টাকার অর্ধেকটা প্রভোস্ট নিজেই নিয়েছেন। বাকি অর্ধেক প্রশাসনিক কর্মকর্তা, অফিস সহকারি ও ক্লিনারদের দেয়া হলেও, হাউজ টিউটর হিসেবে দায়িত্বে থাকা কোন শিক্ষক কানাকড়িও পাননি।
শুধুমাত্র প্রথম বছরে মাত্র ১৫ শতাংশ হলের কল্যাণ তহবিলে জমা দেয়া হয়েছিল। তবে এধরণের টাকা আর কোন হলে নেয়া হয় না বলে জানিয়েছেন, প্রভোস্ট স্ট্যান্ডিং কমিটির আহবায়ক।এমনকি হলের একটি উৎসবে ক্রীড়া প্রতিযোগীতায় শিক্ষার্থীদের ঠিক মত খাবার এবং টি-শার্ট না বিতরণ করার অভিযোগে শিক্ষার্থীরা সরাসরি তাকে বয়কট করে আন্দোলনে নামে এবং তার বিরুদ্ধে স্লোগান দেয়। যার একটি ভিডিও চিত্রও সংরক্ষিত রয়েছে।
সর্বশেষ সবচেয়ে বেশি বিতর্কিত হন তিনি ‘ডিবিসি নিউজ’ টেলিভিশন চ্যানেলের ‘উপসংহার’ নামক টকশোতে ‘ধর্মের অপব্যাখ্যায় জঙ্গিবাদ’বিষয়ক আলোচনায় মুসলিমদের শুদ্ধ উচ্চারণে ‘আসসালামু আলাইকুম’ বলা ও ‘আল্লাহ হাফেজ’ বলাকে গর্হিত, নিন্দনীয়, জঘন্য ব্যাখ্যা করেন অধ্যাপক জিয়া রহমান। এর প্রেক্ষিতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে বিচারক আসসামছ জগলুল হোসেনের আদালতে এই মামলা করা হয়।
এমতাবস্থায় সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডীনের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালনের জন্য যে নূন্যতম স্বচ্ছতা আর জবাবদিহিতা একজন শিক্ষকের থাকা উচিৎ তা আছে কিনা সেটা নিয়ে যথেষ্ট প্রশ্ন থেকে যায় । নৈতিকতা- সততার মানদন্ডে অধ্যাপক জিয়া কোনভাবেই উত্তীর্ণ নয় বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের কয়েকজন শিক্ষক উল্লেখ করেছেন
এবং এত সকল বিস্তর অভিযোগ থাকার পরেও নীল দল হতে ডীন পদে তার মনোনায়ন প্রাপ্তির সম্ভাবনা ঠিক কতটুকু তা নিয়ে নানা গুঞ্জন শুরু হয়েছে।