আজ - শনিবার, ২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২১শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি, (হেমন্তকাল), সময় - সকাল ৮:৩৯

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার তোড়জোড় চলছে

করোনার প্রাদুর্ভাবে দেড় বছর ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। ইউনিসেফ-ইউনেসকো বারবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার তাগাদা দিলেও বাংলাদেশ করোনা পরিস্থিতি উন্নতির জন্য অপেক্ষা করছে। তবে গত সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দ্রুত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার তাগিদ দেওয়ার পরই পাল্টে গেছে পরিস্থিতি। শিক্ষা মন্ত্রণালয় অনেকটাই নড়েচড়ে বসেছে। কিভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা যায়, সে ব্যাপারে কাজ শুরু করেছে। আগামী মাসের শেষ থেকে বা অক্টোবরের প্রথম থেকে পর্যায়ক্রমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার চিন্তা-ভাবনা নিয়ে সামনে এগোচ্ছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় দুই লাখ শিক্ষার্থী ভ্যাকসিন গ্রহণে রেজিস্ট্রেশন করেছেন। তাঁদের অনেকেই টিকার প্রথম ডোজ নিয়েছেন। এরই মধ্যে পাঁচ-ছয় হাজার শিক্ষার্থী দ্বিতীয় ডোজও নিয়েছেন। ফলে সেপ্টেম্বরের শেষ নাগাদ বিশ্ববিদ্যালয় খোলা হতে পারে। প্রায় একই সঙ্গে এ বছরের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের স্কুল-কলেজ খুলে দেওয়ার পরিকল্পনাও রয়েছে। এরপর পর্যায়ক্রমে অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও খোলা হতে পারে।

সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদসচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম প্রেস ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দ্রুত খুলে দিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রোগ্রাম (কর্মসূচি) ঠিক করছে। এর আগে সচিব সভায় এ ব্যাপারে নির্দেশনা দিয়ে দেওয়া হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আজও কথা হয়েছে। তারা প্রোগ্রাম ঠিক করছে কিভাবে, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা হবে। তারা আপনাদের (সাংবাদিক) সঙ্গে ব্রিফিংয়ে বসবে। পাবলিকলি বলে দেবে, কবে থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলছে।’

গত বুধবার সচিব সভায় যুক্ত হয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘শুধু বিশ্ববিদ্যালয় নয়, দ্রুত সময়ে স্কুলগুলোও খুলে দেওয়ার ব্যবস্থা করুন। কারণ শিশুরা ঘরে থাকতে থাকতে অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে। তারা মানসিকভাবেও অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার জন্য সব পদক্ষেপ নিতে হবে। সবার জন্য টিকা নিশ্চিত করতে হবে। জরুরি ভিত্তিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিতে হবে।’

ওই দিন বিকেলে এক অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার জন্য আমাদের সব প্রস্তুতি আছে। সরকার অনুকূল পরিস্থিতির জন্য অপেক্ষা করছে। আশা করি খুব দ্রুতই হয়তো সংক্রমণের হার আমাদের যে কাঙ্ক্ষিত পর্যায় অর্থাৎ যে পর্যায়ে নামলে বিজ্ঞান সম্মত ভাবেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়, আমরা সেই পর্যায়ে পৌঁছব।’

গতকাল রাতে নাম প্রকাশ না করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা কাজ শুরু করেছি। একই সঙ্গে করোনা পরিস্থিতিও নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। কভিড-১৯ সংক্রান্ত টেকনিক্যাল কমিটির সঙ্গেও যোগাযোগ করা হচ্ছে। শিগগিরই সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এ ব্যাপারে জানানো হবে।’

নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, বর্তমানে প্রায় প্রতিদিনই করোনা সংক্রমণের হার কমছে। এই পরিস্থিতিতে কবে নাগাদ সংক্রমণ ৫ শতাংশের নিচে আসতে পারে তা বিবেচনায় নিয়ে ধাপে ধাপে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সম্ভাব্য তারিখ ঘোষণা করা হতে পারে। তবে এবার করোনা সংক্রমণ ৫ শতাংশের সামান্য বেশি থাকলেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা হবে। আর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যেহেতু টিকা নিচ্ছেন, তাই উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলতে কোনো বাধা থাকবে না।

এদিকে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় খোলার দাবিতে চাপ বাড়ছে। ফের আন্দোলনে নেমেছে শিক্ষার্থীরা, দিচ্ছে আলটিমেটাম। ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে সশরীরে প্রতীকী ক্লাসের ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষকরা।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সচিব ড. ফেরদৌস জামান বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের টিকা প্রদানে সরকার খুবই আন্তরিক। এরই মধ্যে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক শিক্ষার্থী টিকার প্রথম ডোজ পেয়েছে। এখন প্রতিদিনই দ্বিতীয় ডোজ প্রাপ্তদের সংখ্যা বাড়ছে। আমরা আশা করছি, সেপ্টেম্বর মাসের শেষ নাগাদ বিশ্ববিদ্যালয় খোলার পর্যায়ে পৌঁছতে পারব।’

আবাসিক হলগুলো খুলে শিক্ষা কার্যক্রম স্বাভাবিক করার দাবিতে আন্দোলনে নেমেছেন শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শেকৃবি) শিক্ষার্থীরা। দ্বিতীয় ডোজ গ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের হলে থাকার অনুমতি চেয়ে গত বৃহস্পতিবার তাঁরা আন্দোলন করেন। শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপিও প্রদান করেন। তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে, সরকারের নির্দেশনা পেলেই হল খুলে দেওয়া হবে।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানান, তাঁদের বেশির ভাগেরই টিকার দ্বিতীয় ডোজ নেওয়া হয়েছে। দীর্ঘ সময় তাঁরা হলের বাইরে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। সামনে বিসিএস পরীক্ষা, সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা। এই পরিস্থিতিতে হলের বাইরে থেকে পড়াশোনা করা তাঁদের জন্য কষ্টকর। তাই দ্বিতীয় ডোজের টিকাপ্রাপ্তদের হলে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হোক।

আগামী ১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সারা দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে না দিলে আমরণ অনশনে বসবে রাজশাহীর শিক্ষার্থীরা। শনিবার রাজশাহীর সাহেব বাজার জিরো পয়েন্টে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে এক সংবাদ সম্মেলনে এই ঘোষণা দেওয়া হয়।

রাজশাহী কলেজের শিক্ষার্থী জিন্নাত আরা সুমু বলেন, ‘বাংলাদেশের মতো কোনো দেশই এত লম্বা সময় ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখেনি। শুধু বাংলাদেশই এমন আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমরা অবিলম্বে সারা দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার দাবি জানাচ্ছি। ১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে না দিলে রাজশাহীর সাহেব বাজার জিরো পয়েন্টে আমরা আমরণ অনশনে বসব।’

অনেক শিক্ষকও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার দাবিতে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেছেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সশরীরে প্রতীকী ক্লাস নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষকরা। গত ১৬ আগস্ট রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক ড. আব্দুল্লাহ আল মামুন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একাডেমিক ভবনের সামনে প্রতীকী ক্লাস নিয়েছেন।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার দাবিতে মাঠে নেমেছেন অভিভাবকরাও। সন্তানের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হলি ক্রস কলেজের সামনে গত রবিবার থেকে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেছেন লেখক রাখাল রাহা। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান না খোলা পর্যন্ত তিনি প্রতিদিনই দাঁড়াবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন। বড় একটি ব্যানার গলায় ঝুলিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন এই অভিভাবক। ব্যানারের শুরুতে লেখা রয়েছে—‘প্রায় ৫৫০ দিন ধরে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। পৃথিবীর কোনো সভ্য দেশ এটা করেনি’।

তবে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকলেও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এবং পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় সরাসরি ক্লাসরুমে পরীক্ষা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। আরো কিছু বিশ্ববিদ্যালয় এ সপ্তাহেই সরাসরি পরীক্ষা নেওয়ার ঘোষণা দিতে পারে। আগামী ১ সেপ্টেম্বর থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত রাজধানীর সাত কলেজও সরাসরি পরীক্ষা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। আর সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকেই মেডিক্যাল কলেজগুলো খোলার সম্ভাবনার কথা জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

আরো সংবাদ
যশোর জেলা
ফেসবুক পেজ
সর্বাধিক পঠিত