আজ - রবিবার, ২২শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৭ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২০শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি, (শীতকাল), সময় - রাত ৯:২২

সম্প্রীতির বন্ধনে রামুতে এবার জাহাজ ভাসা উৎসব

বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব প্রবারণা পূর্ণিমার দুদিনব্যাপী উৎসবের শেষ দিনে কক্সবাজারের রামুর ফকিরা বাজারের পূর্বপাশে বাঁকখালী নদীতে সম্প্রীতির বন্ধনে জাহাজ ভাসা উৎসব সম্পন্ন হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২১ অক্টোবর) বিকেলে ‘সম্প্রীতির জাহাজে, ফানুসের আলোয় দূর হোক সাম্প্রদায়িক অন্ধকার’ এ স্লোগানে জাহাজ ভাসানোর আয়োজন করা হয়। ব্যতিক্রমী এ আনন্দযজ্ঞ উদ্বোধন করেন জেলার শীর্ষ নেতৃবৃন্দরা।

সরেজমিনে দেখা যায়, রামুর পূর্ব রাজারকুল, হাজারীকুল, হাইটুপী রাখাইন পাড়া, হাইটুপী বড়ুয়াপাড়া, দ্বীপ-শ্রীকুল, জাদিপাড়া ও মেরংলোয়া গ্রাম থেকে মোট আটটি কল্প জাহাজ নদীতে ভাসানো হয়। সাত-আটটি নৌকার ওপর বসানো বাঁশ, বেত, কাঠ এবং রঙিন কাগজ দিয়ে অপূর্ব কারুকাজে তৈরি এক-একটি জাহাজ। আকর্ষণীয় নির্মাণ শৈলীর কারণে খুব সহজেই সবার দৃষ্টি কাড়ে। প্রতিটি জাহাজেই আছে একাধিক মাইক।

ঢোল, কাঁসর, মন্দিরাসহ নানা বাদ্যের তালে জাহাজের ওপর শিশু কিশোর ও যুবকরা নেচে গেয়ে অন্যরকম আনন্দে মেতে ওঠে। জাহাজ নিয়ে ভেসে এপার থেকে ওপারে যেতে যেতে মাইকে চলে বৌদ্ধ কীর্তন-নাচসহ নানা আনন্দ আয়োজন।

জাহাজ ভাসা উৎসব উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অর্পণ বড়ুয়া বলেন, ১৯৭১ সালে যেভাবে সবকিছু ভুলে স্বাধীনতার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়েছিল বাঙালি। সে ঐতিহ্যে আঘাত করছে দুষ্কৃতিকারীরা। সেই প্রেক্ষাপটে এই জাহাজ ভাসা উৎসবে সব ধর্মের মানুষের উপস্থিতিতে উসকানিদাতাদের কালো দাঁত ভেঙে দেওয়ার শপথ নেয় বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের সঙ্গে সব ধর্মের মানুষ।

রামু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) প্রণয় চাকমা বলেন, জাহাজ ভাসা উৎসবকে ঘিরে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়। মূলত উৎসবটি বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের হলেও এখানে সব ধর্মের মানুষের উপস্থিতি লক্ষণীয়। যা সব ধর্মের মানুষের মিলন মেলায় পরিণত হয়।

কেন্দ্রীয় প্রবারণা পূর্ণিমা ও কল্প জাহাজ ভাসা উদযাপন পরিষদের সভাপতি ডালিম বড়ুয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন কক্সবাজার-৩ আসনের সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল। আরও উপস্থিত ছিলেন- রামুর কেন্দ্রীয় সীমা মহাবিহারের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ভদন্ত শীলপ্রিয় মহাথের, বৌদ্ধ ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ভাইস চেয়ারম্যান সুপ্ত ভূষন বড়ুয়া, রামুর সহকারী কমিশনার (ভূমি) রিগ্যান চাকমা ও রামু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ারুল হোসাইনসহ অন্যরা।

অর্ধশতাব্দীকাল ধরে রামুতে এ উৎসবের আয়োজন করা হলেও ২০১২ সালে বৌদ্ধ পল্লীতে হামলার ঘটনার পর দুই বছর এ উৎসব উদযাপন হয়নি। দু’বছর পর আবারো প্রতি বছর থেকে উৎসবের আমেজে তা পালন করা হচ্ছে। বৌদ্ধ, হিন্দু, মুসলিম সব সম্প্রদায়ের অংশগ্রহণে এ উৎসব আবারো অসাম্প্রদায়িক মিলন মেলায় পরিণত হয়।

আরো সংবাদ