আজ - সোমবার, ২৫শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১০ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৩শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি, (হেমন্তকাল), সময় - সকাল ১১:৩৭

স্পিডবোট দুর্ঘটনা: ৪ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা

মাদারীপুরের শিবচরে পদ্মা নদীতে বালুবাহী বাল্কহেডের ধাক্কায় স্পিডবোটের ২৭ যাত্রীর মৃত্যু হওয়ার ঘটনায় চারজনের নাম উল্লেখ করে মামলা হয়েছে। সোমবার (০৩ মে) রাতে নৌপুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) লোকমান হোসেন বাদী হয়ে শিবচর থানায় মামলাটি করেন। এছাড়াও এ ঘটনায় গতকালই তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

এতে আসামি করা হয়েছে মালিক চান্দু মোল্লা ও রেজাউল এবং বোটের ইজারাদার শাহ আলমসহ আরও একজনকে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নৌপুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.আব্দুর রাজ্জাক।

এর আগে, সোমবার (০৩ মে) সকাল ৬টার দিকে মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার কাঁঠালবাড়ির বাংলাবাজার পুরোনো ঘাটে বালুবোঝাই একটি বাল্কহেডের সঙ্গে ধাক্কা লেগে স্পিডবোট ডুবে ২৭ জনের প্রাণহানি ঘটে। তাদের পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর কাঁঠালবাড়ির হাজী ইয়াসিন মোল্লাকান্দি দোতারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ থেকে নিহতদের মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

নিহতরা হলেন- খুলনার তেরখাদা উপজেলার বারুখালির মনির মিয়া (৩৮), হেনা বেগম (৩৬), সুমি আক্তার (৫) ও রুমি আক্তার (৩); ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার চরডাঙা গ্রামের আরজু শেখ (৫০) ও ইয়ামিন সরদার (২); মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার সাগর ব্যাপারী (৪০) ও সাগর শেখ (৪১); কুমিল্লার দাউদকান্দির কাউসার আহম্মেদ (৪০) ও রুহুল আমিন (৩৫) এবং তিতাস উপজেলার জিয়াউর রহমান (৩৫); মাদারীপুরের রাজৈরের তাহের মীর (৪২), রায়েরকান্দির মাওলানা আব্দুল আহাদ (৩০) এবং শিবচরের হালান মোল্লা (৩৮) ও শাহাদাত হোসেন মোল্লা (২৯); ভোলার ভেদুরিয়ার আনোয়ার চৌকিদার (৫০); চাঁদপুরের মতলব উত্তরের মো. দেলোয়ার হোসেন (৪৫); নড়াইলের লোহাগড়ার রাজাপুরের জুবায়ের মোল্লা (৩৫); বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জের মো. সাইফুল ইসলাম (৩৫), সায়দুল হোসেন (২৭) ও রিয়াজ হোসেন (৩৩); ঢাকার পীরেরবাগের খোরশেদ আলম (৪৫); ঝালকাঠি নালছিটির এসএম নাসির উদ্দীন (৪৫); পিরোজপুরের চরখালীর মো. বাপ্পি (২৮) এবং ভাণ্ডারিয়ার জনি অধিকারী (২৬)।

দুর্ঘটনা তদন্তে ছয় সদস্যের কমিটি গঠন করেছেন মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক ড. রহিমা খাতুন। কমিটিতে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক আজাহারুল ইসলামকে আহ্বায়ক করা হয়েছে। তিন কর্মদিবসের মধ্যে তারা প্রতিবেদন দেবেন।

কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন শিবচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আশাদুজ্জামান, শিবচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিরাজ হোসেন, শিমুলিয়া বিআইডব্লিউটিএর নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহকারী পরিচালক মো. শাহাদাত হোসেন, শিবচরের চরজানাজাত নৌ-পুলিশের ইনচার্জ শেখ মো. আব্দুর রাজ্জাক ও নারায়ণগঞ্জের পাগলা কোস্টগার্ড স্টেশনের কমান্ডার লে. আসমাদুল।

মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক ড. রহিমা খাতুন বলেন, ইতোমধ্যে দুর্ঘটনা এলাকা পরিদর্শন করেছি। যারা দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন তাদের পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছি। নিহতদের প্রত্যেক পরিবারকে ২০ হাজার টাকা করে সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।

মাদারীপুর স্থানীয় সরকার অধিদফতরের উপপরিচালক আজাহারুল ইসলামকে প্রধান করে ছয় সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন জেলা প্রশাসক রহিমা খাতুন। এ ছাড়া নিহত প্রত্যেকের পরিবারকে ২০ হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

জেলা প্রশাসক রহিমা খাতুন বলেন, ‘তদন্ত কমিটিকে আগামী তিন কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।’ লকডাউনে স্পিডবোট বন্ধ থাকার পরেও কেন এমন দুর্ঘটনা- এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘স্পিডবোটটি মুন্সীগঞ্জ থেকে ছেড়ে বাংলাবাজার আসে। তারা নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে স্পিডবোট ছাড়ে। কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

মাওয়া নৌ-পুলিশের ইনচার্জ সিরাজুল কবির জানান, শিমুলিয়া-বাংলাবাজার নৌরুটের স্পিডবোট ও চালকদের অধিকাংশেরই কোনো লাইসেন্স নেই। চালকদের প্রশিক্ষণ নেই। এগুলো দেখভাল করার দায়িত্ব একমাত্র বিআইডব্লিউটিএর। তারাই নির্ধারণ করবে কোন চালক বোট চালাবে, তার কোনো লাইসেন্স আছে কিনা, ভাড়া আর যাত্রী কত নেবে। নৌ-পুলিশ শুধুমাত্র আইনশৃঙ্খলার বিষয়টি দেখে।

তিনি আরও বলেন, লকডাউনে কোনো স্পিডবোট আমরা শিমুলিয়া ঘাট থেকে ছেড়ে যেতে দিইনি। দুর্ঘটনা কবলিত স্পিডবোটটি আমাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে পাশের কোনো চর এলাকা থেকে অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে কাঁঠালবাড়ী যাচ্ছিল। তড়িঘড়ি করে চোরাই পথে যাওয়ার কারণেই এই দুর্ঘটনা। স্পিডবোটটির মালিক চান্দু মিয়ার বাড়ি কুমারভোগের পুনর্বাসন প্রকল্পে।

প্রসঙ্গত, সোমবার (৩ মে) সকালে মুন্সিগঞ্জের লৌহজং থেকে ৩১ যাত্রী নিয়ে বাংলাবাজারগামী একটি স্পিডবোট মাধারীপুরের পুরাতন কাঁঠালবাড়ী ঘাটে নোঙর করে রাখা একটি বাল্কহেডে ধাক্কা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই প্রাণ যায় এর ২৬ যাত্রীর।

আরো সংবাদ