আজ - শুক্রবার, ২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২০শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি, (হেমন্তকাল), সময় - রাত ৮:৪২

হেলপার সেজে হত্যার রহস্য উদঘাটন করলেন পুলিশের এসআই

লেগুনা চালকের সহকারী (হেলপার) সেজে ক্লু-লেস হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করেছেন যাত্রাবাড়ী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) বিল্লাল আল আজাদ। পুলিশ জানায়, গত ২২ জানুয়ারি ভোর পৌনে ৬টার দিকে গুলিস্তান ফ্লাইওভারের যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা বরাবর অংশ থেকে অচেতন অবস্থায় এক ব্যক্তিকে পড়ে থাকতে দেখে থানায় খবর দেন পথচারীরা। পরে তাকে উদ্ধার করে মিটফোর্ড হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। পরে পরিবারের সদস্যরা শনাক্ত করেন এটি মহির উদ্দিনের মরদেহ। তিনি পেশায় মাছ ব্যবসায়ী ছিলেন।

ক্লু-লেস এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটনে টানা চারদিন ধরে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, সাইনবোর্ড, কোনাবাড়ী, ডেমরা, চিটাগাং রোড আর নারায়ণগঞ্জের জালকুড়ি লেগুনাস্ট্যান্ডে হেলপারি করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই বিল্লাল আল আজাদ। একপর্যায়ে তিনি সেই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটনে সফল হন। শনাক্ত করেন সেই লেগুনা এবং গ্রেফতারও করা হয় জড়িত চারজনকে।

কিভাবে উদঘাটন হলো এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য?

পুলিশ বলছে, সিসিটিভির ফুটেজে দেখা যায়, চলন্ত এক লেগুনা থেকে কেউ ওই ব্যক্তিকে ফেলে যাচ্ছেন। কিন্তু ফুটেজে সেই লেগুনার রেজিস্ট্রেশন নম্বর প্লেট দেখা যাচ্ছিল না। শুধু লেগুনার পাদানিতে লাল রং ছিল, এতটুকু বোঝা যায়। এটাকেই ক্লু হিসেবে ধরে খুনিদের শনাক্ত করার চেষ্টা করেন এসআই বিল্লাল।

তিনি জানান, টানা চারদিন বেশ কয়েকটি রুটের লেগুনার হেলপারি করি। যাত্রাবাড়ী থানার সামনে থেকে চিটাগাং রোড, নূর কমিউনিটি সেন্টার থেকে কোনাপাড়া হয়ে স্টাফ কোয়ার্টার, যাত্রাবাড়ী ইলিশ কাউন্টার থেকে পোস্তগোলা, শনির-আখড়া থেকে নিউমার্কেট সবশেষে সাইনবোর্ড থেকে নারায়ণগঞ্জের চাষাড়া জালকড়ি রুটে হেলপারি করি।

কখনো কখনো স্ট্যান্ডে স্ট্যান্ডে চাকরি খোঁজার নামে খুঁজতে থাকি সেই লাল রঙের লেগুনাটি। হেলপার সেজে ঘুমিয়ে ছিলাম গাড়ির ভেতরেই। এভাবে অন্তত ৩০০ লেগুনা যাচাই করেছি। লাল পা-দানির লেগুনা না পেয়ে যাত্রাবাড়ী স্ট্যান্ডে গিয়ে নিজেই লেগুনা চালানোর আগ্রহের কথা জানাই অন্য চালক সহকর্মীদের কাছে। লাইনে কোনো লেগুনা বসে আছে কি না, তা খুঁজতে থাকি।

শেষপর্যন্ত একজন জানান, একটি লেগুনা নষ্ট হয়ে কদমতলীর একটি গ্যারেজে পড়ে আছে। সেটি মেরামত করে চালানো যাবে। কারণ এর চালক অসুস্থ হয়ে গ্রামে চলে গেছেন। শেষ পর্যন্ত কদমতলীর ভুলুর গ্যারেজে গিয়ে পাই সেই লাল পা-দানির লেগুনা।

পুলিশ জানায়, লেগুনা উদ্ধারের পর দুজনের নাম পাওয়া যায়। তাঁরা বিভিন্ন স্ট্যান্ডে, বিভিন্ন গ্যারেজে থাকেন। কিন্তু দুই-তিন দিন ধরে তাঁদের পাওয়া যাচ্ছে না। একপর্যায়ে জানা যায়, লেগুনার চালক মঞ্জুরের সহকারী এখন বাসে কাজ করেন। চালকের সহকারীকে আটক করা গেলেও মঞ্জুরকে আর পাওয়া যাচ্ছিল না। স্থানীয় লোকজন জানান, মঞ্জুর ছুটিতে গ্রামের বাড়ি মাদারীপুরে গেছেন। এতে সন্দেহ বাড়ে। রাতেই মঞ্জুরের গ্রামের বাড়িতে যায় পুলিশ। সেখানে গিয়ে জানা যায় তিনি অন্য মঞ্জুর। এরপর ঢাকায় খোঁজাখুঁজি করে গত ২৬ জানুয়ারি রাতে সাইনবোর্ড স্ট্যান্ডে কাকতালীয়ভাবেই পাওয়া যায় মঞ্জুরকে। তাঁর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে গ্রেপ্তার করা হয় রিপন আর রুবেলকে।

আটকদের তথ্যমতে, ফ্লাইওভারের ওপরের মরদেহটি ছিল মাছ বিক্রেতা মহির উদ্দিনের। তাকে সাদ্দাম মার্কেট এলাকা থেকে লেগুনায় তুলে ফ্লাইওভারের ওপরে নিয়ে এসে তার কাছ থেকে পাঁচ হাজার ৯০০ টাকা ছিনিয়ে নেন আটকরা। এরপর তাকে চলন্ত গাড়ি থেকে ফেলে দেওয়া হয়।

আরো সংবাদ
যশোর জেলা
ফেসবুক পেজ
সর্বাধিক পঠিত