নিজস্ব প্রতিবেদন ।। ইভ্যালির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মোহাম্মদ রাসেলের মুক্তি দাবিতে আদালতের সামনে বিক্ষোভ করেছেন ভুক্তভোগী গ্রাহকরা। শুক্রবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বিকেল তিনটার দিকে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের সামনে এ বিক্ষোভ করেন তারা। এদিন দুপুর ২টার দিকে ইভ্যালির সিইও রাসেল ও তার স্ত্রী প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিনকে আদালতে আনা হয়। শুনানি শেষে আদালত রাসেল ও তার স্ত্রীর তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করলে আদালতের সামনে বিক্ষোভ শুরু করেন প্রায় অর্ধশত গ্রাহক।
তাদের দাবি, রাসেলকে গ্রেপ্তার করায় এখন তারা তাদের পণ্য বা টাকা ফেরত পাবেন না। এর উপর রিমান্ডে নেওয়ায় আরও অনিশ্চতা তৈরি হয়েছে।
পরে পুলিশ তাদের সেখান থেকে সরিয়ে দেয়। এসময় একজনকে আটক করা হয় বলে জানিয়েছেন কোতোয়ালি থানার পুলিশ পরিদর্শক (অপারেশন) মো. নাজমুল হোসেন।
এদিকে, করোনা পরিস্থিতির কারণে গ্রাহকদের কাছ থেকে নেওয়া অর্ডারগুলো ফিরিয়ে দিতে পারেনি বলে জানিয়েছেন আসামি পক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার মনিরুজ্জামান আসাদ। বলেন, মার্চেন্টদের উৎপাদন কম ছিল। কারও সাথেই প্রতারণা করা হয়নি।
শুক্রবার (১৭ সেপ্টেম্বর) ব্যারিস্টার মনিরুজ্জামান আসাদ সাংবাদিকদের জানান, ‘গ্রাহক, মার্চেন্টরা টাকা পান, এটা তো অস্বীকার করা হয়নি। এটা একটা বিজনেস ডিল। গ্রাহকের টাকা বা মালামাল ফেরত দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দেওয়া আছে। আত্মসাৎ করা হয়নি।’
তাই ইভ্যালি আইনিভাবে কোনো অপরাধ করেনি বলেও জানান আসামি পক্ষের এই আইনজীবী। মোহাম্মদ রাসেলকে জামিন দিলে গ্রাহককের টাকা ফেরত দেওয়ার নিশ্চয়তা দিয়ে ব্যারিস্টার মনিরুজ্জামান আসাদ বলেন, ‘বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করলে আমরা সময় আবেদন করেছি। এ পর্যন্ত ৭০ লাখ গ্রাহককে সেবা দিয়ে নিশ্চিত করা হয়েছে। এ বছরের এপ্রিল থেকে ৩ লাখ গ্রাহকের অর্ডার নিশ্চিত হয়েছে। আসামিকে জামিন দিলে, সব গ্রাহকের টাকা ফেরত দেওয়া হবে।’
তবে, রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আব্দুল্লাহ আবু জানিয়েছেন, ৩ লাখ ১০ হাজার টাকা দেওয়ার পর পণ্য ফেরত না দিয়ে উল্টো ভয়ভীতি দেখানোয় বাধ্য হয়ে মামলাটি করেছেন গ্রাহক আলিফ বাকে। তিনি ইভ্যালির কাছে অনেকে টাকা পায় বলেও জানান।
ইভ্যালি অনলাইন প্রতারণার মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে। রাসেল ও তার স্ত্রী ছাড়াও আরও অনেকে জড়িত বলেও দাবি করেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী।
এদিকে, র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন সংবাদ সম্মেলনে জানান, চলতি বছরের গত জুন থেকে ইভ্যালির কর্মচারীদের অনেকের বেতন বকেয়া থাকলেও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) রাসেল ও তার স্ত্রী শামীমা নাসরিন পদাধিকার বলে মাসিক ৫ লাখ টাকা করে মোট ১০ লাখ টাকা বেতন নিয়েছেন। এছাড়া তারা কোম্পানির অর্থে ব্যক্তিগত দুটি দামি গাড়ি (রেঞ্জ রোভার ও অডি) ব্যবহার করতেন। তারা নতুন গ্রাহকদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে পুরনো গ্রাহকদের অল্প অল্প পণ্য ফেরত দিয়ে সাভারে কোটি কোটি টাকার সম্পদ গড়েছেন নিজেদের নামে।
খন্দকার আল মঈন বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মোহাম্মদ রাসেল আমাদের হাজার কোটি টাকার দেনার কথা জানান। ইভ্যালির দায় ও দেনা সম্পর্কে নানা প্রতিবেদনে জানা গেছে, ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ইভ্যালির দায় ছিল ৪০৩ কোটি টাকা, যেখানে তাদের সম্পদ ছিল ৬৫ কোটি টাকা। বিভিন্ন সংস্থার এসব প্রতিবেদনের বিষয়ে গ্রেপ্তার রাসেল আমাদের কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।
র্যাবের এ কর্মকর্তা আরও বলেন, ইভ্যালি তার প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে একটি লোকসানি প্রতিষ্ঠান। কোনো ব্যবসায়িক লাভ এ যাবত করতে পারেন নাই মোহাম্মদ রাসেল। গ্রাহকদের অর্থে যাবতীয় ব্যয় নির্বাহ করতেন তিনি। ক্রমে ক্রমে তার দেনা বৃদ্ধি পেয়েছে।
র্যাব কর্মকর্তা মঈন জানান, গ্রেপ্তার রাসেল প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন ইভ্যালির অ্যাকাউন্টে বর্তমানে ৩০ লাখ টাকা রয়েছে। এ ছাড়া কয়েকটি গেটওয়েতে ৩০ থেকে ৩৫ কোটি টাকা আছে, যা গ্রাহকদের।